পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে এসে নিজের ছবির প্রচার সেরে গেলেন অভিনেতা তথা বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। বললেন এমন এক মঞ্চ থেকে, যেখানে কিছু ক্ষণ আগেই নিহত এক তৃণমূল নেতার স্মৃতিতে নীরবতা পালন করা হয়েছে। নিহত নেতার স্ত্রী-ও বসে সেখানে। দৃষ্টিকটূ ভাবে সেখানে দাঁড়িয়েই চিরঞ্জিত তাঁর জনপ্রিয় কিছু ছবির সংলাপ বললেন। উপস্থিত জনতার হাততালিও কুড়োলেন বিস্তর।
গত জানুয়ারি মাসে নদিয়ার নাজিরপুরে রাজনৈতিক সভায় অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল তাঁর যাত্রাপালার প্রচার সেরেছিলেন। সকলকে অনুরোধ করেছিলেন, দলের আর এক সাংসদ তথা অভিনেত্রী শতাব্দী পালকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর সেই পালা দেখতে মানুষ যেন আসেন। জেলা তৃণমূলেরই একাংশের কাছেও তাপসের এই ব্যক্তিগত প্রচার কানে বেজেছিল। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই পড়ায় তাপসবাবু যথেষ্ট বিরক্ত হন। কয়েক দিনের মধ্যেই হাওড়ায় এক সভায় সংবাদপত্র হাতে হাজির হয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন তিনি। |
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সভা ছিল বনগাঁর গোপালনগরের অম্বিকাপুর আলতাপ হোসেন হাইস্কুলের মাঠে। চিরঞ্জিৎ বাবু সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই আসন্ন ছবির প্রচার সেরে নেন। বলেন, “পাঁচটা ছবি করেছি। মাঝখানে কিছু দিন কাজ করিনি। কারণ আমি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি।” তিনি আরও বলেন, “মমতা (মুখ্যমন্ত্রী) চেয়েছিলেন, আমি একটু রাজনীতি করি। রাজনীতির মানে হল, এক জন বিধায়ক হই। হয়ে একটা সংখ্যা তাঁকে দিই (বিধানসভায়)। যাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন।” জনগণই তাঁর ‘ভগবান’ বলে উল্লেখ করে চিরঞ্জিৎ আরও বলেন, “তিরিশ বছর পর্দায় আছি, বিধায়ক হয়েছি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু’টো কথা বলছি সবই আপনাদের জন্য।” এর পরে তাঁর জনপ্রিয় কিছু বাংলা ছবির সংলাপও গড়গড় করে বলে চলেন মঞ্চ থেকে। হাততালিও কুড়োন বিস্তর। এরপরেই হাজার দশেক মানুষের জমায়েত ক্রমে ফাঁকা হতে শুরু করে। ওই পরিস্থিতি কোনও ক্রমে নিজেদের বক্তব্য সেরে ফেলেন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও এক বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস।
ঢেঁকিকে যে স্বর্গে গিয়েও ধান ভানতে হয়, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চিরঞ্জিৎবাবু বলেন, “ওই সভায় পঞ্চায়েত ও অন্য প্রসঙ্গে আমি অনেক কথাই বলেছি। কিন্তু বক্তব্যের শেষদিকে দর্শকেরা আমার কাছে সিনেমার সংলাপ শুনতে চেয়ে আবদার করেন। তারপরে আমি আমার পুরনো কিছু সিনেমার দু’একটি সংলাপ বলি।”
দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (তাঁর এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও এ দিন বনগাঁর এই সভায় থাকার কথা ছিল) অবশ্য অভিনেতা-বিধায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “উনি এক জন পেশাদার শিল্পী। নিজের কাজ নিয়ে বলতেই পারেন। এতে অন্যায় কিছু নেই।”
যদিও ঘটনার নিন্দায় সরব জেলা সিপিএম। দলের নেতা অমিতাভ নন্দী বলেন, “এই সব নেতাদের কাছে রাজনীতি হল একটা ব্যবসা। রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ সব কথা কারও বলা শোভা পায় না।” জেলা তৃণমূলের একাংশও দলের বিধায়কের এই ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের টানাপোড়েনে পঞ্চায়েত ভোট আপাতত বিশ বাঁও জলে। যদিও তৃণমূল ভোটের প্রচার করতেই এ দিন বনগাঁয় সভার আয়োজন করেছিল। বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি রতন ঘোষ, মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, চিরঞ্জিতেরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। গত নভেম্বর মাসে খুন হন ওই এলাকারই জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা অরুণ বিশ্বাস। তাঁর স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১১ জন। চার্জশিটও পেশ করেছে পুলিশ। যদিও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন তাঁর স্ত্রী কল্পনাদেবী। মঞ্চে এ নিয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি। পরে ঘটনার সিআইডি তদন্তের দাবি করেন। |