কলোসিয়ামের সামনের রাস্তায় তখন কাতারে কাতারে লোক। রাতের অন্ধকারে হঠাৎই নিভে গিয়েছে কলোসিয়ামের সব আলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ ইতালির জাতীয় পতাকার ছবি ভেসে উঠল কলোসিয়ামের দেওয়ালে। পাশে দুই ইতালীয় মেরিনের ছবি। বুধবার রাতে এ ভাবেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল রোম। সেই দুই মেরিন যাঁরা ২ ভারতীয় মৎস্যজীবীকে হত্যার দায়ে আপাতত ভারতে।
কোনও রকম রাখঢাক না করেই রোমের মেয়র গিয়ানি আলেমান্নো জানিয়ে দিয়েছেন, এর মধ্যে দিয়ে রোমের ‘গভীর যন্ত্রণার’ বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই শহর দুই ইতালীয় মেরিনকে খুব শীঘ্রই ফেরত পেতে চায়।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই ভারতীয় মৎস্যজীবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে ইতালীয় মেরিন মাসিমিলিয়ানো লাতোর এবং সালভাতোর জিরোন-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পর থেকেই অভিযুক্ত মেরিনদের বিচার ইতালি না ভারত, কোথায় হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল টানাপোড়েন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির খেলাপ করে ইতালি জানিয়েছিল, দেশে ফেরত আসা দুই মেরিনকে আর ভারতে পাঠানো হবে না। যার জেরে সুর চড়ায় নয়াদিল্লি। এমনকী ভারতে ইতালীর রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মানচিনির দেশ ছাড়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে শীর্ষ আদালত। তার পরেই তড়িঘড়ি ভারতে ফেরেন মেরিনরা। |
কলোসিয়ামের দেওয়ালে তখন মেরিনদের ছবি। ছবি: এপি |
চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, মামলাটি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে দেওয়া হতে পারে। আর এই খবরই কপালে ভাঁজ বাড়িয়েছে ইতালি সরকারের। ওই দুই মেরিনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এই আশ্বাস পেয়েই অভিযুক্তদের ফেরত পাঠায় ইতালি। কিন্তু এনআইএ-র হাতে মামলা গেলে তার পরিণতি ভাল না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইতালি সরকার। আর সেই আশঙ্কার জেরেই রোমের এই অভিনব প্রতিবাদ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সলমন খুরশিদ অবশ্য গত মাসেই জানিয়েছিলেন, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না অভিযুক্তদের। কিন্তু ইতালি সরকার বিলক্ষণ জানে, ওই দুই মেরিনের অপরাধ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে বিবেচিত হবে কি না, তা আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। এমনকী, এনআইএ তদন্ত ভার পাবে কি না, সেটাও দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। তাই সব মিলিয়ে দুই নাগরিককে নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ইতালি।
বুধবার রাতে কলোসিয়ামের আলো নিভিয়ে নিজেদের সেই চিন্তার ছবিটিই স্পষ্ট করতে চেয়েছে রোম। |