মা, তোমাকে
মহাবিখ্যাত মায়ের মেয়ে

রিয়া-রাইমা। আপনার দুই মেয়ে। আপনি আবার মায়ের এক সন্তান। তো মায়ের ভূমিকায় কে এগিয়ে?

আমি দশে সাড়ে চার পাব। মা অন আ স্কেল অব টেন কুড়ি পাবেন।

কেন বলছেন?
মা ওয়ার্কিং লেডি হয়েও অসম্ভব গোছানো ছিলেন। শু্যটিংয়ের মধ্যে থেকেও বাড়িতে নিয়মিত ফোন করতেন। বাড়ির সমস্ত খবরাখবর রাখতেন। আমি বেরোলে বলতেন সন্ধের মধ্যে ফিরে আসবে। অসম্ভব স্ট্রিক্ট ছিলেন। সেখানে আমার মেয়েদের ব্যাপারে আসল ঝামেলাটা সামলেছে আমার স্বামী। হাবি এ সব দিক দিয়ে অতুলনীয়। বাড়ির যাবতীয় সমস্যা ও ডিল করত। হয়তো বাচ্চাদের আয়া চলে গিয়েছে হঠাৎ করে... হয়তো দুধের টিন কম পড়েছে... সব কিছুর ভার ও একা হাতে নিয়েছে। আমি নিজের প্রোফেশনের জন্য প্রচুর বাইরে বাইরে থাকতাম। ছোটবেলায় আমার বাচ্চাদের সে ভাবে সময়ই দিতে পারিনি। সে দিক থেকে মা অনেক এগিয়ে। এত ব্যস্ততা আর ওই রকম জনপ্রিয়তার মধ্যেও সংসারের চাবি ঠিক নিজের কাছেই রেখে দিতে পেরেছিলেন। আমি যখন পরের দিকে ঠিক করলাম, কাজ কমিয়ে এ বার মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাব, তখনই আমায় একটা বিরাট শক দিয়ে ওরা ফিল্মে ঢুকে গেল।

শক?
কারণ এই পেশাটা ভীষণ নির্দয়। অনেকটা স্পোর্টসের মতো। উইনার টেকস ইট অল। প্রোফেশন হিসাবে একেবারেই মিষ্টি নয়। আমি তো আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিলাম রিয়া-রাইমার ফিল্মে নামার কথা শুনে। আই ওয়াজ ভেরি ভেরি স্কেয়ার্ড। লোকে মনে করে ও বোধ হয় চেনাশোনা থাকলেই হয়। পাওলি যেমন ইন্টারভিউতে বলেছে, স্টার-কন্যা হলে কত সুবিধে। অথচ রিয়েলিটি হল তাতে কিছু এসে যায় না। তুমি দিলীপ কুমারের ছেলে হলেও প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যেতে হবে। আর অপেক্ষায় থাকতে হবে কবে ভাগ্যের আলো তোমার মুখের উপর পড়বে। অনেকে আবার মনে করে, প্রোডিউসারের সঙ্গে শুয়ে পড়লেই হল। সব রাস্তা খুলে যাবে। এক এক জনের এক এক রকম ধারণা। অথচ সার সত্যটা হল, ফিল্ম এমন একটা পেশা যেখানে হতাশা আছে, মারাত্মক খারাপ লাগা আছে, অসম্ভব নিঃসঙ্গতা আছে।
লোকে মাধুরী-মাধুরী করে, অথচ রিয়েলিটি এটাই যে, ‘অবোধ’ করার পরে দশ বছর ওকে স্রেফ বসে থাকতে হয়েছিল। এই যে সাকসেসের জন্য অন্তহীন বসে থাকা, কবে তোমার ক্লিক করবে, কবে তোমার নম্বর উঠবে, এটাই তো ভিতর থেকে কুরে কুরে একটা মানুষের আত্মাকে খেয়ে ফেলে। রিয়া-রাইমাকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, বড় চেহারা, সুন্দরী সেক্সি দুটো মেয়ে। কিন্তু আমি মা হয়ে ভিতরে ভিতরে জানি ওরা কতটা ভালনারেবল। সে জন্যই ওদের ফিল্মে নামার ব্যাপারে আমার এমন ভয়ঙ্কর ভীতি ছিল।


আপনি চির বিদ্রোহী। নিজে ভয়ডর না করে ফিল্মে নেমে পড়েছিলেন।
সেটা ঠিক নয়। আই ওয়াজ’ন্ট আ রেবেল। আমার অন্য রকম সমস্যা ছিল। আমি অন্য একটা কালচারে বড় হয়েছিলাম। ব্রেসো আর ফেলিনির সংস্কৃতিতে। এ দিকে সত্যজিৎ রায়। আমি জানতামই না কমার্শিয়াল ফিল্মে কী করে অভিনয় করতে হয় বা লিপ দিতে হয়। আই ওয়াজ অ্যাবসোলিউটলি ক্লুলেস। ‘রাজবধূ’ যখন করতে এলাম, আমার হেয়ারড্রেসারও জানত না কী করে উইগটা পরাবে। ওটা পরাতে গিয়ে আবার অর্ধেকটা খুলে চলে এল। আমার শাড়ি পরিয়ে দিত ড্রেসার। অদ্ভুত এই পৃথিবীর কিছুই বুঝতাম না। ভাষাটাই জানতাম না ভাল করে। আই ওয়াজ লাইক অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড। কেউ উৎসাহ দিয়ে এটুকুও বলেনি যে, বাঃ! মিষ্টি মেয়েটাকে একটু সুযোগ দেওয়া যাক না। নিশ্চয়ই পারবে।
বরঞ্চ আমায় সবাই বলতে শুরু করল, মুখটা চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বোলো না, মাড়িটা খোলো। আমি এলোকিউশন শিখেছিলাম ইংল্যান্ডে। যেখানে লোকে উল্টো বলে যে, মুখটা ছড়িয়ে কথা বোলো না, টাইট রাখো। সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পুরো মিসফিট। পরে অবশ্য আমার মনে হয়েছিল, আমি যে কারণে রিয়া-রাইমা অভিনয় করুক চাইনি, আমার মা-ও ঠিক একই কারণে চাননি আমি ফিল্মে ঢুকি।


সে কী! আপনাকে উনি কোনও টিপস্ দেননি?
একেবারেই না। আমরা আলোচনাই করিনি ফিল্ম নিয়ে। সে রকম পরিস্থিতিই ছিল না। আমি ফিল্মে ঢুকি বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর। আর উনি আমার সেই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধী ছিলেন। মা আমার সঙ্গে এজন্য ছ’মাস কথা বলেননি। আমি তখন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতাম বাচ্চা আর কাজের লোক নিয়ে। এতটাই তখন উনি খেপে যে, আমার সঙ্গে কথাই বলতেন না। ‘দীপার প্রেম’ করার পর প্রথম বললেন হ্যাঁ, তুমি ঠিক ট্র্যাকে আছ। যখন অরুন্ধতী দেবী, তপন সিংহ এই সব কাজ করতে শুরু করলাম, তখন বরফটা প্রথম গলল। ‘বৈদূর্য্যরহস্য’ দেখে যেমন ওঁর মনে হয়েছিল আমি খারাপ করিনি। একটা কথা বুঝতে হবে, আমার সময়ে আমাদের অত চয়েস ছিল না। এখনকার মতো নিউ এজ বাংলা সিনেমার চল হয়নি।
তিন প্রজন্ম। তিন কন্যা। সুচিত্রা। মুনমুন। রিয়া। ছবি: সাত্যকি ঘোষ

এত বিখ্যাত মায়ের মেয়ে হয়ে কখনও মনে হয়নি যে, আমি যা-ই অ্যাচিভ করি না কেন, তুলনায় হেরে যাব? প্রচুর প্রবাদপ্রতিম মানুষের সন্তানদের যে সমস্যা! ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলে পদবি বদলে ফেলেছিলেন। মুম্বইতে অভিষেক বচ্চন আর রোহন গাওস্কর তো নিজেদের মধ্যে হতাশায় একটা ক্লাব খুলেছিলেন। যার নাম লুজারস ক্লাব।
আমার কখনও সেদিকে চিন্তাটা যায়নি। প্রথমত আমার চিন্তাভাবনাটা ছিল অন্য দিকে। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয় ইংলিশ প্রোগ্রাম করেছি। কয়েকটা বুক কভারের ছবি সেই সময়ে করেছি, এক বছরের মতো বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে পড়িয়েছি। তার পর যখন ফিল্মে এলাম, মুম্বইতে সুইমস্যুটে ছবি তুলি যেটা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। আমার তখন বোধহয় ওটাই টেক ছিল যে, দু’বাচ্চার মা হয়েও লোকে যদি বলে যে, আহা কী দারুণ ফিগার। কোথাও কোনও ফ্যাট নেই, স্ট্রেচ মার্কস নেই। তা ছাড়া এটাও বোধহয় প্রমাণ করার ছিল যে প্রেগনেন্ট হলেই মেয়েদের ফ্যাট হয়ে যায় না। ওই সুইমস্যুট ইমেজটা মুম্বইতে আমাকে নিজস্ব ফ্যান দিয়েছিল। ম্যাগাজিনে লোকে বলাবলি শুরু করল, ওহ্ মুনমুন, শি হ্যাজ আ গ্রেট বডি।
আর মায়ের পপুলারিটি নিয়ে আমি সব সময় ভীষণ গর্বিত ছিলাম। সত্যিই যে উনি কতটা পপুলার সেটা প্রথম বুঝতে পারি যাত্রা করতে গিয়ে। আই রিয়ালাইজড দ্য পাওয়ার অব দ্য শ্যাডো। যাত্রা সিজনে সে বার অনেক স্টার। কিন্তু আমাকে নিয়ে আমার দলের প্রতিটা শো রাতের পর রাত হাউজফুল চলত। তত দিনে আমি মুনমুন সেন হয়ে গিয়েছি। তবু সবাই দেখতাম রিলেট করছে সুচিত্রা সেনের মেয়ে হিসাবে। বিশ্বাস করবেন না, প্রতি রাত্রে যখন স্টেজে উঠতাম, প্রথম আধ মিনিট আমার কোনও কথা বলার স্কোপই থাকত না। লোকে আসলে একটা বিস্ময় আর ভালবাসা মিশ্রিত এক্সপ্রেশন দিত হাআআআআ। সেই হাআআআআ-টা থামার জন্য আমাকে ওয়েট করতে হত।
রাতের পর রাত এই এক জিনিস ঘটেছে। এরা কেউ মাকে চোখেও দেখেনি। আজ এত বছর পর মায়ের মেয়ের মাধ্যমে যেন স্বচক্ষে দেখতে চাইছে। অবিশ্বাস্য! ভাবলে আজও যেন গায়ে কাঁটা দেয়। তাই রিয়া আর রাইমা যখন ফিল্মে নামবে বলে ঠিক করল, আমি ওদের প্রথমেই বলি, ভুলেও মাম্মির নামটা নিতে যেয়ো না। প্রত্যাশার ঢেউতে কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে জানো না। হাড়গোড় ভেঙে যাবে। তার পর ওরা যখন নাম করল, মোটামুটি জায়গায় এল, তখন আমি ওদের বলি, হ্যাঁ এ বার আম্মার কথা বলতে পারো।


প্রত্যাশার বোঝা বইতে পারাটা কত কঠিন সেটা জিজ্ঞেস করছিলাম। লোকে নিশ্চয় দুমদাম অপমানজনক কথাও বলে দিত!
ইট ওয়াজ ভেরি ভেরি হার্টিং। নেওয়াটা খুব ডিফিকাল্ট ছিল। আমি যদিও নিজের মতো করে নিজের রাস্তায় চলার চেষ্টা করছিলাম। কখনও খুব ডিপ্রেসড লাগত। মনে হত, সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসি। সব সময় খালি তুলনা আর তুলনা! ফিল্মি প্রেসেও আজকের মতো উদারীকরণ হয়নি।
বললে অনেকেই হয়তো রেগে যাবে, কিন্তু এখনকার ফিল্মি প্রেসে শিক্ষিত ছেলে মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের সময় এমন সব লোকজন আমাদের ‘জাজ’ করত, যাদের রাতের পার্টিতে দেখতাম মাতাল হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর সকালের কাগজে তারাই কিনা লিখে দিচ্ছে একে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। হ্যাঁ, অভীক সরকার যদি আমাকে বলে, মুনমুন তুমি কী করছ নিজের লাইফ নিয়ে, আমি তখনই ওর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। জানতে রাজি আছি আমার ভুলটা কোথায়। কিন্তু যারা সেই সময় লেখালিখি করত, তাদের কোনও রকম জ্ঞানগম্যি ছিল না। খুব বিধ্বংসী ছিল সেই সব ক্রিটিসিজম। ভীষণ ডিপ্রেসড লাগত। সেই সময় একজন মানুষই আমাকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে পরম স্নেহে উদ্ধার করেছিল। সে আমার স্বামী। হাবি আমায় মুম্বইতে ফ্ল্যাট করে দিয়েছিল। আর বলত, তোমার কোনও চিন্তা নেই, তোমার পাশে আমি সব সময় আছি। ওই ভরসাটা জীবনে আমার সাঙ্ঘাতিক উপকার করেছিল।


ব্র্যাডম্যানের ছেলে একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, সব সময় লোকে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাত যেন চিড়িয়াখানায় জন্তু-জানোয়ার দেখছে। আপনার সেটা মনে হয়নি?
আমি তো বললামই, মাকে নিয়ে আমার বরাবর অসম্ভব গর্ব। এরকমও হয়েছে, লোকে আমায় একটুু ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছে, যাতে সুচিত্রা সেনকে ছোঁয়া যায়।
একই সঙ্গে ভুলে যাবেন না মায়ের সমালোচকও ছিল। এরা তো বিদ্রুপও করেছে বড় স্টার হতে পারেন। কিন্তু বড় অভিনেতা নন। একটা গ্রুপ কাজ করত এগেনস্টে। আজও কিছু অ্যান্টি-পার্টি আছে। জোছন দস্তিদার তো একবার ‘টেলিগ্রাফ’ কাগজে লিখেই ফেলেছিলেন মাকে নিয়ে। যে লেখাটা খুব প্রশংসাসূচক ছিল না।
অনেক বছর বাদে আমি তখন চুটিয়ে কাজ করছি। একটা ফ্যানের বিকৃতকাম চিঠি পেয়ে ভীষণ আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এ রকম পারভার্ট মানুষও হতে পারে। দুঃখে মাকে জানিয়েছিলাম। উনি তখন বলেছিলেন, ও সব পাত্তাই দিও না। আমার জীবনেও আমি কত রকম ক্রিটিসিজম ফেস করেছি। তখন বুঝেছিলাম, ওঁরও মোটেও সবটা সোনার রাস্তা ছিল না।

ফিল্ম নয়। কোনও এক পার্টিতে দু’জনে। একান্তে...

একসঙ্গে সংবর্ধনা নেওয়া হল। কাজ হল না...

সৌন্দর্য, স্টাইল, আবেদন

আপনার মায়ের স্টাইল স্টেটমেন্ট কী?

আমার মনে হয় ওঁর এক্সপ্রেশন। ওই সৌন্দর্য আর ইমোট করার ক্ষমতা। ওঁর স্টাইলিং সেন্সটা বরাবরই দুর্ধর্ষ। যেটা জন্মসূত্রে বোধ হয় রিয়া পেয়েছে। রিয়ার সেন্স অব স্টাইলও খুব ভাল। এক বার ও বিদেশ থেকে দারুণ বাহারি জুতো কিনে এনেছিল। যার গোড়ালির দিকটা রুপোলি। আমি জুতোটা দেখে বলেছিলাম খাওয়ার টেবিলের পাশে টাঙিয়ে রাখ। ও অবাক হয়ে বলেছিল, কেন? আমি উত্তর দিই, বহু বছর আগে তোর আম্মা লন্ডন থেকে ঠিক সেম জুতো কিনে এনেছিল। ভেবে দেখ ওঁর সেন্স অব স্টাইলিং।

সুচিত্রা সেন তা হলে বরাবরই খুব স্টাইলিশ?
অলওয়েজ। এত সুন্দরী যে কিছু সাজতেই হত না। স্কিনটা এত চমৎকার যে, আমরা অবাক হয়ে দেখতাম কোনও গয়না গায়ে নেই। সাধারণ একটা টাঙ্গাইল শাড়ি মা পরে আছেন, তাতেই কী অসম্ভব রূপসী দেখাচ্ছে ওঁকে। ওঁর স্টাইলের বিশেষত্বই ছিল সিম্পলিসিটি।

মায়ের থেকে কী শিখেছেন?
শিখেছি কাউকে ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত না দিতে। শিখেছি স্ট্রেসের মধ্যেও নিজের প্রায়োরিটিগুলো ঠিক রাখতে। শিখেছি পরিষ্কার থাকতে। জোর করে কারও উপর নিজের ধর্মবিশ্বাস না চাপাতে। প্রকৃতিগত ভাবে আমরা অনেক আলাদা। আমি হইচই আর মানুষ ভালবাসি। মা সেখানে সব সময় চুপচাপ। কিন্তু চুপচাপ হলে কী হবে, ওঁর মনটা ভীষণ অ্যালার্ট। সমস্ত খবরও রাখেন। রাজীব গাঁধী মারা যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে উনি আমায় ফোন করে খবরটা দিয়েছিলেন যে বিস্ফোরণে রাজীব মৃত। তার মানে ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট কেউ ওঁকে ফোন করে খবরটা জানিয়েছিলেন।

বাড়িতে রান্নাবান্না কী হবে উনি ঠিক করেন?
ওঁর পরিবারে উনিই ঠিক করেন। মায়ের সংসার মা-ই দেখেন। রান্না খারাপ হল তো ওঁর মেজাজ বিগড়োল। আর ভাল হলে যে রেঁধেছে খুব প্রশংসিত হবে।

বিরল ফোটোশ্যুটে সুচিত্রা সেন
পঁচিশ বছর বাদে। এমন দৃশ্য ভাবা সম্ভব যে, মুনমুন সেনও মায়ের রাস্তা ফলো করে অজ্ঞাতবাসে চলে গিয়েছেন? আর জনসমক্ষে আসেন না।
আই অ্যাম ডিফরেন্ট। আমি ডিট্যাচড হয়ে জীবন কাটাতে পারব না। আমি মানুষ ভালবাসি। তাদের সঙ্গ ভালবাসি।

কখনও মনে হয়েছে, মা ও মেয়ে, আমরা এত আলাদা কেন?
কখনও ভাবিইনি। আমি ওঁর এ ভাবে থাকার ডিসিশনকে রেসপেক্ট করি। ওঁর আইডিয়াকে শ্রদ্ধা করি। আর পছন্দ করি, উনি এখনও যে এত অ্যালার্ট। এই বয়সেও এখনও যে এত সমঝদার।

ওঁর স্টারডমকে কী ভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
আমি এক জনের সঙ্গে খুব মিল খুঁজে পাই। রাজেশ খন্না। রাজেশ আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। মায়ের মতো রাজেশও খুব মুডি। রিয়েল স্টার ওঁরা দু’জনেই। ওঁদের অ্যাটেনশন ড্র করার ক্ষমতা। ওঁদের ব্যবহারের ধরন। ওঁদের গুড লুকস্। মাঝে মাঝে মেজাজ হারিয়ে ফেলা। ওঁদের ওই একটা ঔদ্ধত্যের টাচ। প্রচুর মিল।
দু’জনেরই যেন জন্ম হয়েছিল স্টার হিসেবে। আমার শুধু মনে হয়েছিল শেষ বয়সের রাজেশ তাঁর ওই ভেঙে যাওয়া চেহারাছবি নিয়ে পাবলিকের মধ্যে না এলেই পারতেন। কই দিলীপ কুমার তো রোদ্দুর বেরোলেই প্রতি রোববার হাঁটতে বেরোন না।
মা আর রাজেশের আরও মিল আছে। দু’জনেই নিজেদের স্টাফেদের সঙ্গে অসম্ভব ভাল। নিজেদের মেকআপ আর্টিস্ট বা সেক্রেটারিরা ওঁদের প্রতি অসম্ভব অনুগত। ওই ধরনের আনুগত্য সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। এটা সম্ভব করেছিল ওঁদের ক্যারিশমা। আগেই বললাম না ওঁরা স্টার হয়েই জন্মেছেন।


কিন্তু এই ধরনের তারকাদের প্রবণতা হল, তাঁরা কানে বেশি শোনেন। চোখে দেখেন কম।
হতে পারে, এই পর্যায়ের তারকারা সব সময় কিছুটা দূরত্বের মানুষ। আমার মা যেমন ভীষণ উদার, আমুদে, অ্যালার্ট। কিন্তু কোথাও গিয়ে ডিট্যাচড।

নিজে একজন সুন্দরী মহিলা হিসাবে কখনও মাকে হিংসে হয়নি?
কখনও না। আমার শুধু বিস্ফারিত লাগত এটা ভেবে যে, একটা মানুষের ক্রেজ কোথায় পৌঁছলে বহু বহু বছর পর তাঁর মেয়েকে টাচ করে লোকে তাঁর মাকে খুঁজতে চায়। ভেবে দারুণ গর্ব হত আমার মায়ের জন্য।

কী ছিল মনে হয় আপনার মায়ের মধ্যে, যা তাঁকে বাকি সব নায়িকার ভিড়ে আলাদা করে দিত?
মুনমুন: অ্যাই রাইমা, তোমার কী মনে হয়? হোয়াট ওয়াজ সো স্পেশাল অ্যাবাউট আম্মা?
রাইমা: (একটু ভেবে নিয়ে) আই থিংক ওঁর সময়ের কম্পিটিটরদের থেকে আলাদা করে দিত বোধহয় সফিস্টিকেশন। বিউটি। আর গ্ল্যামার।
মুনমুন: (ঘাড় নেড়ে) শি হ্যাড ট্রিমেন্ডাস স্ক্রিন প্রেজেন্স। পর্দায় এলে বাকি সবাইকে যেন গিলে খেয়ে ফেলে। পুরো মনোযোগটাই নিয়ে নেয় নিজের উপর। গায়ত্রী দেবীর মধ্যেও এই জিনিসটা দেখেছি। ওঁর বয়স যাই হোক তখন, পঞ্চাশ-ষাট বা আশি, ঘরে ঢোকা মানে ঘরটা আলো হয়ে যাবে। ইনভেরিয়েবলি ঘাড় ঘুরিয়ে সবাই ওঁকেই দেখবে। তার পরে কথা বলার ওই অ্যাট্রাকটিভ ভঙ্গিটা। ওটা মায়ের মধ্যেও রয়েছে।
মা এমন একজন মহিলা যাঁর জীবনে একটা মুহূর্তও কখনও আনডিগনিফায়েড এসেছে বলে মনে হয় না। আমি তো এত বছর ক্লোজলি থেকেও দেখিনি।


ক্যারিশমা ছাড়া ব্যক্তিগত আর কী গুণের জন্য ‘সুচিত্রা সেন’ হতে পেরেছিলেন?
আমার মনে হয় ওঁর সৌন্দর্য। এত বছর পরেও মানুষ যে ওঁকে এ ভাবে মনে রেখেছে, তার বড় কারণ আমার মতে সৌন্দর্য। নিজের মা বলে বলছি না, শি ইজ এক্সট্রিমলি বিউটিফুল। বাংলা সিনেমার পর্দায় এই রকম সুন্দরী আর কেউ আসেনি। এর বাইরেও উনি ভীষণ কাজঅন্ত প্রাণ ছিলেন। একবার যেটা করবেন, সেটা করেই ছাড়বেন, কোনও কিছু ওঁকে টলাতে পারবে না। ভীষণ স্ট্রং মাইন্ডেড। মাঝে মাঝে একটু বেশিই (হাসি)।
সুচিত্রা-উত্তম

উত্তমকুমারের সঙ্গে আপনার মায়ের জুড়ি আজও টালিগঞ্জের হার্টবিট।

অর্পিতা শুনলাম সেদিন টিভিতে বলেছে, উত্তম-সুচিত্রার ছবি কে দেখে আজকাল? এর উত্তর আমার দেওয়ার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের সঙ্গে কথায় কথায় তর্ক জুড়ে দেওয়ার অভ্যেসও আমার নেই। আই জাস্ট ইগনোর অ্যান্ড অ্যাভয়েড। তবু ওকে বাধ্য হয়ে বলছি, তুমি নিজের জীবনে কী করেছ? তুমি কি এই ধরনের ছবি পেয়েছ যেখানে গোটাটাই তোমার উপর? ক্যারি করেছ একটা ফিল্মকে? সেদিন আপনাদের আনন্দplus ‘বায়োস্কোপে বাজিমাৎ’ ক্যুইজে যখন উত্তম-সুচিত্রা ক্লিপিংসগুলো দেখাচ্ছিল, আমি কী ভীষণ নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছিলাম। বাড়িতে ফেলে আসা মানুষটা আর ওই পর্দার ইমেজ এক হয়ে যাচ্ছিল। পেয়ারটার কেমিস্ট্রিটাই আলাদা।

কী কেমিস্ট্রি ছিল ওঁদের, মনে হয়?
দারুণ একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল ওঁদের। আমি একসঙ্গে শু্যট করতে তো দেখেছি। মনে হত যেন সব কিছুই প্রি -কনট্রোলড। যেন সব কিছুই ঠিক হয়ে আছে। এত ওয়েল অর্কেস্ট্রেটেড। শুনেছি সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, পৃথিবীতে খুব কম জুড়ি আছে যাদের মধ্যে বন্ডটা এত ম্যাজিকাল। ভাবা যায় না শু্যট করার পরে ওঁরা যার যার পরিবারের কাছে ফিরে যেতেন। একজন স্ত্রীর কাছে। একজন স্বামীর কাছে। পেয়ার হিসেবে এত রিয়েল লাগত ওঁদের।
আমি তো মাকে একবার বলেই ফেলেছিলাম, মা, তোমার উত্তমকুমারকে বিয়ে করা উচিত ছিল।


উনি কী উত্তর দিয়েছিলেন?
উনি কোনও উত্তর দেননি। স্রেফ হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

উত্তমকে আপনার কী রকম লাগত?
অসাধারণ। ‘নায়ক’ ছবিটা যেন সশরীরে উনি। অথচ ওঁর বিরুদ্ধেও সেই একই ক্রিটিসিজম ছিল। হ্যান্ডসাম ম্যান। বিশাল স্টার। বড় অভিনেতা নন। টালিগঞ্জ চালাতেনই উত্তম কুমার। আজ প্রসেনজিৎকে যদি বলতেও হয় ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারে, বলতে হবে উত্তম কুমারের মতো লোড নিচ্ছি। টার্মস অব রেফারেন্স আজও সেই উত্তম আর সুচিত্রা। উত্তমের হাসিটাই তো কী সাঙ্ঘাতিক। সব কিছুকে মুহূর্তে গলিয়ে দেয়।

আর আপনার মায়ের ঘাড় কাত করে তাকানো?
হ্যাঁ, ওটাও একটা বিখ্যাত ম্যানারিজম। যা যুগ যুগ ধরে আজও চলে আসছে। আমাকে প্রায় সব ছবিতে বলা হয়েছে ওই ভাবে তাকাও।
রাইমা: আমাকেও ক্যামেরাম্যানরা বলে ঘাড়টা ঘুরিয়ে তাকাও।
মুনমুন: অন্য অ্যাকট্রেসদেরও ছবি দেখি ওই ভাবে তাকাতে। বা মা কোনও ছবিতে যেভাবে পনিটেল করতেন। বা যেভাবে রুমালটা রাখতেন।

উত্তমের সঙ্গে আপনাদের বাড়ির যাতায়াত ছিল?
আমি ওঁর বাড়িতে গিয়েছি। উনিও আমাদের এখানে দু’বার এসেছেন। একবার মাকে একটা প্রোগ্রামের জন্য তুলতে এসেছিলেন। তবে আমার মনে হয় না মা কখনও গিয়েছেন বলে। আমাদের বাড়িতেই আসলে সবাই আসতেন জহর গঙ্গোপাধ্যায়, পাহাড়ি সান্যাল, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। মাকে যেতে দেখিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে ওঁর বন্ধুও তেমন ছিল না। ছায়াদেবী ছিলেন একমাত্র বন্ধু। আর চন্দ্রাবতী দেবী। বরং ইন্ডাস্ট্রির বাইরে ওঁর কিছু বন্ধু-বান্ধব ছিল। আমাদের এক্স-অ্যাডভোকেট জেনারেল, কাগজের এডিটর এই রকম দু’-চার জন।

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে উত্তম কাজ করেছেন। আপনার মা করেননি।
‘ঘরে বাইরে’ ওঁর করার কথা ছিল। আমি ভেবেছিলাম বোধহয় হয়েও যাবে। তার পর কোনও একটা ক্লজ নিয়ে বোধহয় খটামটি বাধে। মা সরে আসেন।

কাজটা হলেও নির্ঘাত ইগোর সংঘাত হত!
আমার মনে হয় না হত বলে। একবার রাজি হয়ে গেলে মা ডিরেক্টরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতেন। দ্যাট ওয়ে শি ওয়াজ ভেরি ওবিডিয়েন্ট। এক্সট্রিমলি প্রফেশনাল।

আর মৃণাল সেন?
মৃণাল সেন কখনও ওঁকে নিয়ে ভেবেছেন বলে মনে হয় না। মৃণাল সেনের সঙ্গে ওঁর ঠিক পটত কি না তা-ও আমি জানি না। তবে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে অবশ্যই চলত।

নিখুঁত গৃহকর্ত্রী: বাড়ির পুজোয়

স্নেহশীল মাতা: মেয়ের বিয়ের আগে

রাইমা আর আম্মা

রাইমাকে কতগুলো অ্যাঙ্গল থেকে আপনার মায়ের মতো লাগে।

হ্যাঁ, সেটা অনেকেই বলে। দু’জনেরই খুব সুন্দর মুখ। দু’জনেরই সেন্স অব হিউমার খুব ভাল। মাম্মি ভাল মুডে থাকলে খুব হাসেন। আর প্র্যাকটিক্যাল জোকস্ও করেন। যেটা বাইরে থেকে ওঁকে দেখলে বোঝাই যায় না।

রাইমাকে নাকি অনেক সময় উনি ডেকে বলেছেন, অ্যাই টিভিতে তোমার ছবি দেখাচ্ছে। দেখে যাও। রাইমা গিয়ে দেখেছে ওটা আসলে দিদিমারই ছবি দেখাচ্ছে।
মুনমুন: (পাশে বসা রাইমার দিকে তাকিয়ে) বলো তুমি।
রাইমা: হ্যাঁ, শি হ্যাজ অলওয়েজ বিন ভেরি সাপোর্টিভ। আমার কয়েকটা ছবি উনি দেখেছেন। ‘অনুরণন’ দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ইউ শুড বি থ্যাঙ্কফুল টু দ্য ডিরেক্টর।
মুনমুন: উনি রাইমার কাজের ব্যাপারে খুব কৌতূহলী। বারবার জানতে চান কী ধরনের কাজ করছে। এই যে সেদিন রাইমা’র করা ‘শব্দ’ ছবিটা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেল, তাতে ওর আম্মা খুব খুশি।
রাইমা: সব সময় জানতে চান, কোন ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করছি? কখনও বলেন, এত কী কাজ করো, যে সেই সকালে যাও, রাতে ফেরো।

‘চোখের বালি’ নিশ্চয়ই দেখেছেন?
রাইমা: ‘চোখের বালি’ বোধহয় উনি দেখেননি।
মুনমুন: সে কীরে! ‘চোখের বালি’ দেখেননি!
রাইমা: না। ‘নৌকাডুবি’ দেখেছেন।

‘বাইশে শ্রাবণ’?
রাইমা: হ্যাঁ, ওটা দেখেছেন। ভাল লেগেছে।

অজ্ঞাতবাস, মিডিয়া আর জন্মদিন

আপনি এত লোকের সঙ্গে মেশেন, ঘোরেন। প্রবাদপ্রতিম মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য কত রিকোয়েস্ট এই ক’বছরে পেয়েছেন?

কান্ট টেল ইউ হাউ মেনি। অসংখ্য! সাধারণ লোকের কথা বাদই দিলাম। বড় বড় সেলিব্রিটিরা চান আমি মায়ের সঙ্গে একটা মিটিং অর্গানাইজ করিয়ে দিই। অন্তত একবার দেখা হোক। ভাবেন বোধহয়, সেলিব্রিটি বলে রিকোয়েস্ট গ্র্যান্টেড হয়ে যাবে।

মাকে গিয়ে যখন ওঁদের কথা বলেন, তখন উনি কী বলেন?
কিছুই বলেন না। স্রেফ শোনেন আর হাসেন।

জনসমক্ষে বেরোন না কি প্রায় তিরিশ বছর?
না না। একটা সময়ে তো প্রায়ই বেরোতেন। হ্যারিংটন ম্যানসনের বাড়িতে আসতেন। রিয়া-রাইমাকে নিয়ে বেরোতেন। এসি মার্কেটে শপিং করতেন। বর্ধন মার্কেটে যেতেন।

সেকী! এসি মার্কেটে ভিড় হয়ে যেত না?
ওঁর চেনা কিছু দোকান আছে। সেই দোকানদাররা ওঁর প্রাইভেসিকে খুব সম্মান করেন। এখন অবশ্য মায়ের আর বের হওয়া হয় না। আমি গিয়ে গিয়ে বলি, জানো তো নিউ মার্কেটের মিস্টার নাহুম মারা গিয়েছেন। আমাদের সেই ফ্লোরিস্ট আর বেঁচে নেই। ওঁর ছেলে এখন দোকান দেখছে।

আরও নানান জায়গার নাম শোনা যায়, যেখানে নাকি উনি যেতেন।
(কিছুটা উত্তেজিত) যেতেন কী, লোকে তো কনভিন্সিংলি বলে দেয় আজও যান! এমন হয়েছে আমার সঙ্গে লোকেদের তীব্র তর্কাতর্কি হয়ে গিয়েছে। যারা বলেছে, আরে তুমি জানো না উনি অমুক জায়গায় যান। আমি খুব রেগে গিয়ে বলেছি আমার মা আমি জানব না! মানুষটা আমার সঙ্গে সারাক্ষণ থাকে। তাতেও এসব গসিপ বন্ধ হয় না। লোকে জোর দিয়ে বলে দেয়, মা নাকি আমডাঙায় কোন গডম্যানের কাছে যান! কে বোঝাবে শি ইজ নট দ্য টাইপ।

আপনার কখনও মনে হয় না, এই বয়সে এখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করছেন, সুপ্রিয়া দেবী কাজ করছেন। আপনার মা-ও স্বচ্ছন্দে বাইরে বেরোতে পারেন।
যখন মা কাজ ছেড়ে দেন, তখন কয়েক বছর বাদেও আমি বলে গিয়েছি, মা আরও কয়েক বছর করতে পারতে। উনি বলেছিলেন, কাদের সঙ্গে করব? কী কাজ করব? সেই সময় তো আজকের মতো নিউ এজ বাংলা ছবি ছিল না। আর মায়ের বোধহয় অন্যদের মতো বছরের পর বছর কাজ করে যাওয়ার ওই মেন্টালিটিটাও নেই। আজ মনে হয় আমি হ্যাপি যে, উনি আর কাজ করেন না।

নিউ এজ শুনে মনে পড়ল, আধুনিক সময়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায় টাইপের কেউ কখনও আপনার মাকে মিট করতে চাননি?
ওরা সবাই চায়। আর আমার পক্ষে খুব ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। বাকি পৃথিবী আর মায়ের ফ্যানদের মধ্যে একটা শিল্ড হয়ে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।

কিন্তু এখন তো পৃথিবী বদলে গিয়েছে। কখনও মনে হয় না আপনার মা সুপারস্টারডম ভুলে খোলা আকাশের তলায় মুক্ত নিশ্বাস নিতে পারেন?
একদমই মনে হয় না। আমার মা ভীষণ প্রাইভেট পার্সন। আজকালকার দিনে সবাই যেমন মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে তাক করে থাকে এই ব্যাপারটা ওঁকে শেষ করে দিত। আজ এত বছর পর আমি শিখেছি, খুব স্ট্রিক্টলি এই সব ক্যামেরাওয়ালাদের না বলতে। নইলে লোকে স্ট্রেট দাঁড়িয়ে পড়ে আর বলে, দিদি একটা তুলি।

ঐশ্বর্যা রাই আমাদের কাগজে দেওয়া ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, মর্নিং ফ্লাইটগুলো এমনিতেই চেহারার পক্ষে কিলার ফ্লাইট। তার উপর লোকে ক্যামেরা নিয়ে নির্বিকার ছবি তুলে নেয়, জিজ্ঞেসও করে না।
বলছি তো একেবারে ‘ভালগার’ সব কাজকারবার। আমার মা সহ্যই করতে পারতেন না। আমি খুব খুশি আজকের দিনে ওঁকে যে বার হতে হয় না।

ফ্যানদের ওঁকে নিয়ে আজও খ্যাপামো দেখলে কী মনে হয়?
বাংলাদেশের এক্স হাই কমিশনারের স্ত্রী খুব সুইট। উনি একবার আমাদের বাড়িতে এসে বাগানের গেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর বলেছিলেন, দারোয়ান তো ভিতরে ঢুকতে দিল না। তাই বাগানের গাছের পাতাই নিয়ে গেলাম। ঢাকায় গিয়ে সবাইকে দেখাব, সুচিত্রা সেনের বাড়ির গাছের পাতা। হাউ সুইট।

আর ভক্তদের প্রেম নিবেদন?
সে তো ওঁর কাজ করার সময় ছিলই। রাজ কপূর থেকে শুরু করে কে নয়! রাজ কপূর তো প্রেম নিবেদন অবধি করেছিলেন।

আপনি কী করে জানলেন? রাজ কপূর নিশ্চয়ই আপনার সামনে প্রোপোজ করেননি?
‘লভ’ বোঝার জন্য সব সময় সামনে থাকার দরকার নেই। সে তো ফোনেও করা যায়। সেই সব ফোনের বহর দেখলে, স্তূপীকৃত ফুল দেখলেও আন্দাজ করা যায়। রাজ কপূর ওয়াজ ক্রেজি অ্যাবাউট হার। ‘মেরা নাম জোকার’য়ে মাকে অভিনয় করানোর জন্য উনি পাগলের মতো পেছনে লেগেছিলেন। ওই সব অফার যে কোনও কারও মাথা ঘুরিয়ে দিত। কিন্তু আমার মা ভীষণ লেভেল হেডেড।

আর দিলীপ কুমার?
দিলীপ সাব ওয়াজ ভেরি স্পেশাল। মায়ের প্রতি ওঁর দারুণ শ্রদ্ধা ছিল। মায়েরও তাই।

এত সব বর্ণময় ঘটনা ওঁর জীবনে। আত্মজীবনী কখনও লিখবেন না?
না, শি উইল নেবার রাইট এনিথিং। উনি ভীষণ ভীষণ প্রাইভেট। আমার কাছেই তো বিদেশি প্রকাশকদের অসম্ভব লোভনীয় অফার আছে। কিন্তু আমি করতে রাজি নই। মা আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন। আমি মেয়ে হয়ে সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করব? এর আগে তো বিশ্বাসভঙ্গের অভিজ্ঞতাও ওঁর আছে।

কেমন বিশ্বাসভঙ্গ?
এই যে ভোটের ছবি তোলাতে গেলেন, সেখানে বিশ্বাসভঙ্গ হল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। একজন সন্ন্যাসী সেজে চলে এল। সেখানেও বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপার ছিল। যখনই দেখেছি মা কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করেছেন, তারা ঠকিয়েছে।

জনগণ যখন আপনাকে মা নিয়ে জিজ্ঞেস করে, তাদের কমন প্রশ্ন কী থাকে?
অদ্ভুত অদ্ভুত। অনেকে জিজ্ঞেস করে মা কি প্রতি সপ্তাহে বেলুড় মঠে যান? কেউ বলে, আচ্ছা উনি নাকি সারা দিন ঠাকুর ঘরে বসে থাকেন?
কী উত্তর দেব এর? সন্ন্যাসীরাও তো সকাল থেকে রাত অবধি ঠাকুরঘরে বসে থাকেন না। তা হলে মা বসে থাকবে কেন?

মিডিয়া আজও সুচিত্রা-রহস্য ভেদ করতে পারেনি, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাবলে কী মনে হয়?
ভাবলে নানান অস্বস্তিকর ছবি মাথায় ভাসে। আমার বন্ধু সাংবাদিকদের মধ্যেও কত লোকে চেষ্টা করতে চায়। কেউ কেউ করেছেও। আমি যদি দেখি, আমার বন্ধুদের কেউ, বা ধরা যাক আপনি ওই মায়ের গেটের বাইরে সকাল থেকে রাত অবধি দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর দারোয়ান বলছে, যাও চলে যাও। সেটা আমার কাছে খুব এম্ব্যারেসিং হবে। আমার মনে হয়, যে মানুষটা প্রাইভেট থাকতে চায়, তাকে প্রাইভেট থাকতে দেওয়াই উচিত।

কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে ফ্যানদের তো জানার হক থাকতেই পারে মানুষটা কী ভাবে দিন কাটান?
আমি মনে করি না। বরং জেনুইন সুচিত্রা সেন ফ্যানরা মনে করে, আমাদের ভালবাসার নায়িকা যেভাবে আছেন, সেভাবেই ওঁকে থাকতে দেওয়া উচিত। আমরা ওঁর প্রাইভেসিকে বিরক্ত করতে চাই না।

বেশির ভাগ মানুষেরই কিন্তু অদম্য কৌতূহল উনি কী করেন? কী ভাবেন?
(বিরক্ত ভাবে) কী করেন? কী ভাবেন? মানে কী? ওঁর বয়েসি মহিলারা যা ভাবেন তাই। আগে প্রচুর পড়তেন। এখন পড়া কমিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু ওই বয়সি মহিলারা তো আর সুচিত্রা সেন নন, যে বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁদের মতামত জানার আগ্রহ থাকবে।
বিভিন্ন ইস্যুতে মানে?

যেমন এই যে গোটা শহরটা নীল আর সাদা রংয়ে রং হয়ে গেল। লোকের তো জানতে ইচ্ছে করতে পারে ওঁর কেমন লাগছে?
ওঁর আবার কেমন লাগবে? আই ডোন্ট থিঙ্ক শি ইজ রিমোটলি ইন্টারেস্টেড। আর তা ছাড়া লোকে এটা জেনে করবেই বা কী যে উনি কী ভাবছেন?

আরে হয় না, যাকে ভীষণ ভালবাসি তার সব কিছু জানতে ইচ্ছে করে।
আসলে শি ইজ ভেরি প্রাইভেট। একেবারেই আলাদা। যে সব কথাবার্তা উনি আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মা আর মেয়েতে খুব রেয়ারলি এ সব আলোচনা হয়। দ্য কাইন্ড অব থিংস উই ডিসকাসড। একদিন আপনারা জানতে পারবেন, আজ নয়। আজ সময় আসেনি।

এই যে জন্মদিন আসছে, মাকে কী দেবেন?
কিছু ভাবিনি।

এর আগে কী দিয়েছেন?
একবার ওঁর সব ফিল্মের ডিভিডি দিতে গিয়েছিলাম, সেটা দ্রুত রিফিউজড হয়। এর পর রিয়া সেগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমি আম্মার হয়ে অ্যাকসেপ্ট করলাম।

ওঁর জন্মদিনে কী হয়?
কিছুই হয় না। কী আবার হবে (হাসি)?

একটা তো কিছু হয়। কেক কাটা বা কিছু?
গৌতম ইউ মাস্ট আন্ডারস্ট্যান্ড, ইউ আর আস্কিং ভেরি পার্সোনাল কোশ্চেনস। উই মাস্ট স্টপ হিয়ার।

আচ্ছা এটা তো বলুন, বার্থডে-তে ভক্তরা ওঁকে প্রতিবারের মতো যে ফুল-টুল পাঠাবে, সেগুলো কি ওঁর কাছে আদৌ পৌঁছবে?
সেগুলো আমার কাছে পৌঁছবে। আমি সেগুলোর গন্ধ এনজয় করব।

তাই?
হ্যাঁ, আমার বাড়িতে অঢেল ফ্লাওয়ার ভাস আছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.