কুবের উবাচ
|
• প্রবীর প্রধান (৩৩) • স্ত্রী (২৭)
• বেসরকারি সংস্থার কর্মী • অফিসে পিএফ, স্বাস্থ্য বিমা এবং ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে
• স্ত্রী গৃহবধূ ও সন্তানসম্ভবা • নিজেদের বাড়ি • বেতন কম হওয়ায় সংসার চালানো নিয়ে চিন্তিত
• পছন্দ নয় ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসার পরিকাঠামো
• ভাবনা রয়েছে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় নিয়েও |
|
|
মাসে নিট আয়
১০,৪০০ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিএফ |
১২,০০০ (সংস্থার অবদান মিলিয়ে) |
• রেকারিং ডিপোজিট |
১৮,০০০ (২০২২ পর্যন্ত) |
• এলআইসি |
১,৭১৪ (২০ বছরের, বিমা মূল্য ৪০,০০০) |
• পিপিএফ |
৫০,০০০ |
• অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ইক্যুইটি গ্রোথ মিউচুয়াল ফান্ড |
৩৬,০০০ |
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে
|
৫,০০০ |
• যাতায়াত |
৭০০ |
• স্বাস্থ্য বিমা |
২১৮ (অফিস কেটে নেয়) |
ইএসআই
|
২০০ (অফিস কেটে নেয়) |
সম্পদ |
• স্থায়ী আমানত
|
২,০০,০০০
(২০২২ পর্যন্ত) |
• কিসান বিকাশ পত্র |
৩০,০০০ (২০১৬ পর্যন্ত) |
• জমি
|
৫,০০,০০০ (বর্তমান বাজার দর) |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
প্রবীর
ও তাঁর স্ত্রী নবীন দম্পতি। তাঁদের সামনে জীবনের অনেক পথ চলা বাকি। কয়েক মাসের মধ্যেই সংসারে আসতে চলেছে নতুন অতিথি। এই খবর যেমন আনন্দের, তেমনই বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ারও। আগামী দিনে যা তাঁদের আরও পরিণত করবে। তবে এ সবের মধ্যেই নিজের লক্ষ্যপূরণে স্থির থাকতে হবে। তাই আসুন দেখে নিই সীমিত পুঁজিতেও সচ্ছলতা আনতে কী ভাবে লগ্নি নানা খাতে ছড়িয়ে দিতে পারেন তাঁরা। কী ভাবেই বা সুরক্ষিত রাখতে পারেন সন্তানের ভবিষ্যৎ।
|
সন্তানের জন্ম
|
প্রবীরের অফিসে ইএসআই হাসপাতালের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি, অফিসের স্বাস্থ্য বিমাও আছে। কিন্তু সেই বিমার অঙ্ক তাঁর জানা নেই। ফলে আমার পরামর্শ
যত দ্রুত সম্ভব সেই বিমার অঙ্ক জেনে নিন। আর দেখুন তার অধীনে আপনি সন্তান জন্মের সময়ে হাসপাতাল খরচ আদৌ পাবেন কি না। পেলে তারই বা পরিমাণ কত।
যদি তা না-পান, তা হলে এই সময়ের চিকিৎসার জন্য প্রবীরের উচিত হাতের টাকা কোনও সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেখে দেওয়া। যাতে সহজেই তা তোলা যায়।
সেই সঙ্গে উচিত আপৎকালীন অবস্থার জন্য স্থায়ী আমানত থেকে ওভারড্রাফটের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করে রাখা। এ ভাবে জমা টাকার ৯০% পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
|
স্বাস্থ্য বিমা
|
ইএসআই হাসপাতাল পরিকাঠামো নিয়ে তাঁর চিন্তা রয়েছে। কর্মীদের সুবিধার জন্য এই ধরনের প্রকল্প চালু হলেও, অনেক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিকাঠামোর অভাবে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা মনমতো হয় না।
তাই আমার মতে, প্রবীরের উচিত ২ লক্ষ টাকার একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্য বিমা করে নেওয়া। এ জন্য মাসে প্রিমিয়াম দিতে হবে প্রায় ৪৩০ টাকা। এর পর বেতন বাড়লে সন্তানকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পারেন। তবে সে জন্য তার বয়স হতে হবে তিন মাস বা তার বেশি। তখন প্রিমিয়ামের অঙ্ক একটু বাড়বে। |
আগাম পরিকল্পনা
|
প্রবীরের মনে হতেই পারে, যে-সন্তান এখনও জন্মায়নি, তার পড়াশোনার কথা এখন থেকে ভাবব কেন? কিন্তু আমি বলব, এখনই সঠিক সময়। কারণ পরিকল্পনা আগেই ছকে নিতে পারলে আসল সময়ে আর টাকার জন্য দৌড়দৌড়ি করতে হবে না। ফলে সন্তানের জন্মের পরই শুরু করুন এই খাতে টাকা জমানো। মনে রাখবেন, সাধারণ ভাবে এখন কোনও পেশাদারি ডিগ্রি পেতে খরচ হয় প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। ১৮ বছর পর তা দাঁড়াবে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। তা জোগাড় করতে
• মাসে ১,৫০০ টাকা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করুন। দেখবেন প্রকল্পটি যেন কোনও চাইল্ড প্ল্যান হয়। এ থেকে প্রায় ১১.৪ লক্ষ টাকা আপনি জমাতে পারবেন।
•
এই টাকা হয়তো যথেষ্ট নয়। কিন্তু ভেঙে পড়ার কিছু নেই। বেতন বাড়লে আপনি বছর তিনেক পর ২,০০০ টাকার আর একটি এসআইপি শুরু করতে পারেন। |
চাইল্ড প্ল্যানে লগ্নি করতে বলার দু’টি কারণ রয়েছে
|
১) সন্তানের জন্যই যে এসআইপি করা, তা আপনার মনে থাকবে। অর্থাৎ অন্য কোনও কারণে সেই টাকা তুলে ফেলার প্রবণতা কম থাকবে।
২) এ ধরনের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় সন্তানের ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর। অর্থাৎ প্রয়োজনের সময়ে সেই টাকা হাতে পাবেন, যা আপনার লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করবে। |
অবসর পরিকল্পনা
|
অবসর নেওয়ার আগে প্রবীরের হাতে অনেক সময় রয়েছে। ফলে এই সময়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারবেন। কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে
•
প্রবীরের হাতে এখনও ১,০০০ টাকা বাড়তি থাকছে। আমার মতে সেই টাকা দিয়ে ডাইভার্সিফায়েড মিড ক্যাপ ফান্ডে একটি এসআইপি শুরু করুন। অবসর নেওয়ার সময়ে এই খাতে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা জমবে।
•
মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী আমানত চালিয়ে যান। এখন সুদের হার বেশি। তাই এখানে টাকা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু সুদ কমলে সেই টাকা অন্য কোনও খাতে রাখতে হতে পারে। তবে স্থায়ী আমানতে টাকা থাকলে, প্রয়োজনে সেখান থেকে ঋণ হিসেবে তা তোলা যায়। দরকারের সময়ে টাকার জোগান বজায় থাকে।
•
মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত রেকারিং ডিপোজিট চালিয়ে যান। তার পর হাতে আসা সেই টাকা সরকারি করছাড় যুক্ত বন্ডে রাখতে পারেন। মেয়াদ ঠিক করুন এমন ভাবে, যাতে অবসরের সময়ে তা হাতে পান।
•
রেকারিং শেষ হলে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু করুন। এতে পুরোপুরি করছাড়ের সুবিধা পাবেন। জমা দিতে পারবেন বছরে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা।
•
মেয়াদ শেষের পর কিসান বিকাশ পত্রের টাকা হয় স্থায়ী আমানতে রাখুন, না-হলে ডাকঘর মাসিক প্রকল্পে (এমআইএস)। সেখান থেকে প্রতি মাসে পাওয়া সুদের টাকা এসআইপি পদ্ধতিতে কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। আর সেই অর্থ প্রয়োজনে সন্তানের শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
•
পিএফের টাকা তো পাবেনই। তা কাজে লাগান।
|
জীবন বিমা
|
আপনার বিমার অঙ্ক এখন খুবই কম। তবে আগামী দিনে বেতন বাড়ার সঙ্গেই আপনি এই খাতে আরও টাকা রাখুন। |
জমি যখন সোনা
|
জমি একটি স্থাবর সম্পত্তি। আগামী দিনে যা আপনার উপকারে আসতে পারে। বিভিন্ন কাজে এই জমিটি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন
• বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি করা। তা বিক্রি করে টাকাও পেতে পারেন।
• ভবিষ্যতে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে জমিটি কাজে লাগতে পারে।
• নিয়মিত আয়ের জন্য জমি লিজে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
• অবসর পরিকল্পনায় কোনও ঘাটতি থাকলে, সেই সময়ে ওই জমি বিক্রি করে বা অন্য কাজে ব্যবহার করে টাকা জোগাড় করা যেতে পারে।
• সন্তানের (মেয়ে বা ছেলে যা-ই হোক না কেন) বিয়ের সময়েও ওই জমি থেকে থোক টাকা পাওয়া সম্ভব।
তবে যে-কাজেই ব্যবহার করুন না কেন, পুরোটাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এখন ওই জমিতে হাত দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। জমির দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
তাই যত দিন জমিটি ধরে রাখা যায়, তত ভাল। |
বার্ধক্যের লাঠি |
অবসরের পর ২৫% টাকা রাখুন এমন প্রকল্পে, যেখান থেকে হঠাৎ প্রয়োজনে তা তোলার সুবিধা থাকবে। বাকি ৭৫% রাখুন অ্যান্যুইটি প্রকল্পে। সেখান থেকে মিলবে নিয়মিত পেনশন।
আসুন দেখি, সব মিলিয়ে প্রবীরের টাকা ছড়িয়ে রাখায় কী বদল করতে চাইছি আমি
এখন ছড়িয়ে দেওয়া লগ্নি (ইএসআই ও অফিস স্বাস্থ্য বিমা বাদে) |
যাতায়াত |
৭০০ |
সংসার খরচ |
৫,০০০ |
রেকারিং ডিপোজিট |
১,৫০০ |
এলআইসি |
১৪২.৮৩ |
হাতে থাকে |
৩,০৫৭.১৭ |
হাতের টাকা মূলত এসআইপি-তে রাখার পর ওই তালিকা দাঁড়াবে |
যাতায়াত |
৭০০ |
সংসার খরচ |
৫,০০০ |
রেকারিং ডিপোজিট |
১,৫০০ |
এলআইসি |
১৪২.৮৩ |
এসআইপি (সন্তানের) |
১,৫০০ |
এসআইপি (অবসর) |
১,০০০ |
স্বাস্থ্য বিমা |
৪৩০ |
হাতে থাকবে |
১২৭.১৭ |
আশা করি, সাধ্য মতো সঞ্চয় করে প্রবীর নিশ্চিত
ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন। সে জন্য রইল আগাম শুভেচ্ছা। |
|
|