চলতি মরসুমে বোরো ধান চাষের এলাকা কমেছে কালনা মহকুমায়। কৃষি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পর্যাপ্ত জল না পাওয়ার জন্য এমন হয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, বোরো চাষের এলাকা কমলেও বেড়েছে তিল, ডালশস্য এবং সব্জি চাষ।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় বোরো চাষের জমি রয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে গতবার চাষ হয়েছিল ৩৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার হেক্টরে। যথেষ্ট পরিমাণ জল না পাওয়া ছাড়াও এর পিছনে কৃষি বিশেষজ্ঞরা আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। খুব শীতে বহু চাষের বীজতলায় কোল্ড ইনজুরির সংক্রমণ দেখা যায়। ফলে সবুজ চারা শুকিয়ে হলুদ হয়ে যায়। চাষিদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। নতুন করে বীজতলা তৈরির সময় থাকে না। ডিভিসি ক্যানাল-সহ বিভিন্ন জলাধারগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল না মেলাও অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় বোরো চাষের এলাকা কমে যাওয়ার জন্য। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ ব্লকের কৃষি দফতর থেকে যে তথ্য মিলেছে সে অনুযায়ী কালনা ১ ব্লকে বোরো ধান চাষ হয়েছে ৩৫০০ হেক্টর জমিতে। কালনা ২ ব্লকে তা দাঁড়িয়েছে ৪৮৫০তে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ৩৯৫০তে, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৩৮০০ এবং মন্তেশ্বরে ১৯৪৫০ হেক্টর জমিতে। |
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বোরো ধান চাষের এলাকা কমে যাওয়াকে ভাল বলে মনে করছেন। মাটির তলা থেকে জল তোলার একটা প্রধান কারণ তা বোরো ধানের চাষ করার কাজে ব্যবহার করা। এমনিতেই কালনা মহকুমায় জলস্তর নিম্নমুখী। বোরো ধান চাষের এলাকা কমে গেলে মাটির তলা থেকে জল ওঠা কমবে। পানীয় জল পাওয়ার সমস্যাও কমবে বলে দাবি কৃষি বিশেজ্ঞদের। মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “ডালশস্যের ভাল চাহিদা রয়েছে রাজ্যে। আমরা চাষিদের উৎসাহিত করছি বোরো ধানের এলাকা কমিয়ে ডালশস্য চাষের ব্যাপারে। এই ধরণের চাষে জল কম লাগে।” মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের বক্তব্য, “বোরো ধান চাষের এলাকা কমলেও, বেড়েছে তিলের এলাকা। চাষিরা বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছে এটা ভাল দিক।” তিল, ডালশস্য চাষ জমির উর্বরতার বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক বলে দাবি পার্থবাবুর। মহকুমায় এমন এলাকাও রয়েছে যেখানে চড়া দামে জল কিনতে না পেরে চাষিরা বাধ্য হয়েছেন জমি ফেলে রাখতে। কালনা ২ ব্লকের ওমরপুর এলাকা হল এমন একটি এলাকা। এখানে ৫০০ বিঘারও বেশি এলাকায় কোনও চাষ হয়নি। চাষিদের দাবি, এলাকায় কয়েকটি বেসরকারি সাবমার্সিবল রয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে সাবমার্সিবলের মালিকেরা বেশি দাম চাওয়ায় বেশির ভাগ চাষিই উৎসাহ দেখায়নি। |