দালাল-সহ ধৃত বাংলাদেশি
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ পারে এনে বিক্রির চেষ্টা কিশোরীকে
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেমিকাকে এ দেশে এনে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে এক দালাল-সহ দুই যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার রাতে বসিরহাট থানার স্বরূপনগরে ওই ঘটনা ঘটে। তাকে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রির কথা জানতে পেরে ওই রাতে স্বরূপনগরের কাছে গাড়ি থেকে লাফ মেরে পালানোর চেষ্টা করে ওই কিশোরী। তার চিত্‌কারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গাড়ি আটকে ওই কিশোরীর প্রেমিক সঞ্জয় দাস ও দালাল জিয়া আকুঞ্জিকে ধরে ফেলে। শুরু হয় গণধোলাই। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বসিরহাট থানার আইসি শুভাশিস বণিক বলেন, “বাংলাদেশের খুলনার ব্যারাকপুর গ্রামে বাড়ি এই কিশোরীর। তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ পারে এনে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এর পর সন্দেহ হওয়ায় মেয়েটি গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা দুই অভিযুক্তকে ধরে ফেলে।” মঙ্গলবার ধৃতদের বসিরহাটের এসিজেএমের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই কিশোরীর জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে।
ধৃত সঞ্জয় ও জিয়া আকুঞ্জি। ছবি: নির্মল বসু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাংলাদেশের খুলনার ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীর সঙ্গে আট মাস আগে পরিচয় হয়েছিল ওই এলাকারই বাসিন্দা বাদামতলা গ্রামের সঞ্জয় দাসের। দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দু’জনে বিয়ে করবে ঠিক করে। কিন্তু দু’জনের বাড়ি থেকেই সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় তারা বাড়ির অমতেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বনগাঁর শিমুলতলায় ওই কিশোরীর মাসীর বাড়ি। ঠিক হয় সীমান্ত পেরিয়ে তারা বনগাঁয় যাবে। সেখানে বিয়ে সেরে ফিরবে বাংলাদেশে। কিন্তু কিশোরীর পাসপোর্ট না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। সঞ্জয় তাকে বলে, তার একজন চেনা দালাল রয়েছে। তাকে কিছু টাকা দিলেই সে তাদের সীমান্ত পেরোনোর ব্যবস্থা করে দেবে।
পুলিশ জানায়, পরিকল্পনামতো বাংলাদেশের ভোমরার বাসিন্দা ওই দালালকে ১০ হাজার টাকা দেয় ওই কিশোরী। এর পর ওই দালাল সোমবার সন্ধ্যায় দু’জনকে সীমান্ত পার করে এ পারে ঘোজাডাঙায় এনে জিয়া আকুঞ্জির হাতে তুলে দেয়। ঠিক ছিল জিয়া তাদের বনগাঁয় পৌঁছে দেবে। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা হলেও জিয়ার এখানকার আস্তানা ছিল বসিরহাটের মাটিয়ার নিষিদ্ধপল্লি। জিয়া দু’জনকে নিয়ে একটি গাড়িতে ওঠে। স্বরূপনগরের কাছে সঞ্জয়কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে জিয়া তাকে নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে সন্দেহ হয় কিশোরীর। সে কান্নাকাটি শুরু করে। এর পরে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করলে জিয়া তাকে জোর করে আটকে রাখে। ধস্তাধস্তির মধ্যে হঠাত্‌ই এই কিশোরী গাড়ির দরজা খুলে বাইরে লাফিয়ে পড়লে ও তাকে কাঁদতে দেখে জনতার সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি আটকে সঞ্জয় ও আকুঞ্জিকে কী হয়েছে জানতে চাইলে আকুঞ্জি গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। জনতা তাদের ধরে ফেলে। শুরু করে গণপ্রহার। তার পর তাদের একটি ঘরে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। যদিও সেই সুযোগে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় চালক। চালক ও গাড়ির খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সঞ্জয় নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েদের নিয়ে এসে দালালদের হাতে বেচে দিত। এ ক্ষেত্রেও ওই কিশোরীকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য জিয়ার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা অগ্রিম নিয়েছিল। যদিও জেরায় সঞ্জয় এ সব অস্বীকার করেছে। তার দাবি, ওই কিশোরীকে সে সত্যিই বিয়ে করত। দালালরাই তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তা হলে কেন সে মাঝরাস্তায় ওই কিশোরীকে ফেলে নেমে যাচ্ছিল, তার উত্তর দিতে পারেনি সঞ্জয়। এই পাচারচক্রের সঙ্গে স্থানীয় আর কে কে জড়িত তার তদন্ত করছে পুলিশ।
আর কিশোরীর কথায়, “ওকে বিশ্বাস করে এক কাপড়ে ঘর ছেড়েছিলাম। বুঝিনি আমার এমন সর্বনাশ করবে। তবে এখানকার মানুষের সহায়তায় বেঁচে গেলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.