সেচের অভাবে মাঠেই শুকোচ্ছে বোরো
লের অভাবে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ ও বোরোধান। বিদ্যুৎ সংকটের ফলে জলসেচ দিতে না পারায় নবগ্রাম থানা এলাকার এক লক্ষ বিঘারও বেশি জমিতে বোরোধান নষ্ট হতে বসেছে। অথচ ফি বছর বন্যা ও খরার কবলে পড়া নবগ্রামের প্রধান অর্থকরী ফসলই হল বোরোধান ও তুঁতচাষ। দিন পনেরো ধরে সেচের জলের অভাবে সেই ধানের জমির বেশির ভাগই ফুটিফাটা। অন্য জমিরও একই হাল হতে চলেছে। ফলে নবগ্রাম থানা এলাকার প্রায় ৩০ হাজার চাষি পরিবারের দিন কাটছে চরম দুঃশ্চিন্তায়। কারণ বছর পাঁচেক আগের গ্রীষ্মে এ বারের মতো বিদ্যুৎ আর জলসেচের অভবে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল নবগ্রামের চাষিদের। একবার বোরোধানের জমি ফেটে গেলে পরবর্তীতে সেই জমিতে জল ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর জমিতে জল ধরে রাখতে না পারলে বোরোধান চাষের খরচটাই উঠবে না।
ফুটিফাটা মাঠে চিন্তায় কৃষক।
বিদ্যুৎ বিভাগের বহরমপুর রিজিওনাল ম্যানেজার বাসব মৈত্র বলেন, “বোরো চাষের জলসেচের জন্য চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে। সে জন্য নবগ্রামে আরও একটা সাব স্টেশন প্রয়োজন। আর তার জন্য প্রয়োজন জমি। ফলে নবগ্রামে আরও একটা পাওয়ার হাউস করতে জমি দেওয়ার জন্য স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক কানাইলাল মণ্ডলকে এ দিনের আলোচনার সময় বলা হয়েছে।” ওই সংকট থেকে চাষিদের রেহাই দিতে মঙ্গলবার বিদ্যৎ দফতরের নবগ্রাম স্টেশন ম্যানেজারের কার্যালয়ে স্থানীয় বিধায়ক সি পি এমের কানাইলাল মণ্ডলের নেতৃত্বে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ফের একই দাবিতে আজ বুধবার বিদ্যুৎ দফতরের ওই একই কার্যালয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি তথা নবগ্রাম ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি মির বাদাম আলি।
নবগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার প্রেমানন্দ সেনগুপ্ত বলেন, “নবগ্রাম সাবস্টেশনের বর্তমানে যা ক্ষমতা, বিদ্যুতের চাহিদা তার থেকে বেশি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ওই সাবস্টেশনে ১০টি ফিডার আছে কিন্তু ক্ষমতা না থাকায় সবকটি একসঙ্গে চালানো যাচ্ছে না। ফলে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে।” মঙ্গলবার প্রেমানন্দবাবুর কার্যালয়ে স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে বাসববাবু বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে আলোচনায় বসেন। বাসববাবু বলেন, “স্থায়ী সমাধানের জন্য জমি পাওয়া ও নতুন একটি পাওয়ার হাউস তৈরি করা অতি জরুরি বিষয় হলেও তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আপাতত গোকর্ণ ও কান্দি ডিভিশন থেকে বিদ্যুৎ যাতে নবগ্রামকে দেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করা হবে।” সেই উদ্দেশ্যে আজ বুধবার বিদ্যুৎ দফতরের রঘুনাথগঞ্জ ডিভিশনাল ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে গোকর্ণ ডিভিশনে যাবেন বাসববাবু।
চৈত্রের রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান।
প্রায় তিন লক্ষ জনসংখ্যার নবগ্রাম ব্লকটিকে ঘিরে রেখেছে দ্বারকা, ব্রহ্মাণী ও ঝুনকা মিলে তিনটি নদী আর দু’টি বিল-বসিয়া ও তেলকর। ফি বর্ষায় নদী ও বিলের জলে বানভাসি হয় নবগ্রাম। নবগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি মির বাদাম আলি বলেন, “ওই ব্লকের প্রায় তিন লক্ষ মানুষের রুটিরুজি নির্ভর করে বোরোধান আর তুঁত চাষের উপর। নবগ্রামে বোরোধানের চাষ হয় মূলত দ্বারকা, ব্রহ্মাণী ও ঝুনকা নদী আর বিল বসিয়া ও বিল তেলকর লাগোয়া এলাকায়। কিন্তু এ বার ওই তিনটি নদী ও দুটি বিলের জল শুকিয়ে গিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভূগর্ভের জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই বিদুৎ অমিল। ফলে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেট অচল। তার ফলে জলসেচের সংকট তীব্র আকার নিয়েছে।” লোডশেডিং বাদে বাকি ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় সেই বিদ্যুৎও জলসেচের কাজে লাগছে না বলে দাবি করেন কানাইলালবাবু। তিনি বলেন, “মটির অনেক নীচে নেমে যাওয়া জলস্তর থেকে সেচের জল তোলার জন্য প্রয়োজন ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মিলছে ৭-৮ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ। ফলে দিন পনেরো ধরে বোরোধানের জমিতে জলসেচ কার্যত বন্ধ।”
সেচের অভাবে বোরোধান ছাড়াও তুঁতচাষ ও দেরিতে আবাদ করা পেঁয়াজও জমিতে শুকিয়ে যাচ্ছে। নবগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার প্রেমানন্দবাবু বলেন, “বিদু্যতের ভোল্টেজ বাড়িয়ে কি ভাবে ১১ হাজারে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.