ধোপে টিকল না অভিযোগ
কাজ ভাল মেনেই বন দফতরকে টাকা মন্ত্রীর
নিজের অভিযোগ ঢোক গিললেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। তাঁর দফতরের বরাদ্দ করা টাকায় জঙ্গলমহলে উন্নয়ন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। ঝাড়গ্রামের ডিএফও অশোকপ্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে ঠিকমতো খরচের হিসেব না-দেওয়ার অভিযোগ তুলে টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে, ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের ১৪০টি গ্রামে উন্নয়নের নানা কাজ মাঝপথেই থমকে গিয়েছিল। পরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের গড়ে দেওয়া কমিটিই সরেজমিন তদন্ত করে কোনও গরমিল খুঁজে না পাওয়ায় বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দেরি করে টাকা এসে পৌঁছনোয় বকেয়া কাজগুলির সিংহভাগ ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শেষ করা সম্ভব হয়নি।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা এখন বলছেন, “তদন্তে দেখা গিয়েছে, কাজ ভালই হয়েছে। বাকি টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজগুলি শেষ করতে বলা হয়েছে।” তাহলে আগে কেন অনর্থক অভিযোগ তুলে টাকা আটকে দিয়েছিলেন? সুকুমারবাবুর জবাব, “ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ ছবি-সহ কাজের রিপোর্ট যথা সময়ে আমাকে দেয়নি। তাই টাকা আটকে রাখা হয়েছিল।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর ২০১১-১২ অর্থবর্ষে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ করা ১২ কোটি টাকায় ২০১১ সালের অক্টোবর নাগাদ জঙ্গল লাগোয়া ১৪০টি গ্রামে উন্নয়নের নানা কাজ শুরু হয়েছিল। কাজ করছিল ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ। বেলপাহাড়ি, শিলদা, বিনপুর, ঝাড়গ্রাম, জামবনি ও গোপীবল্লভপুরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে পানীয় জলের জন্য ৪০টি টিউবওয়েল, পানীয় জল ও সেচের জন্য পাম্প হাউস-সহ ৫৭টি ডিপ-টিউবওয়েল, ৩১টি কমিউনিটি হল, ৩৫ কিমি দীর্ঘ সেচনালা, ২১টি কালভার্ট, ১১টি মার্কেট শেড, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির বরাত পান ১৫ জন ঠিকাদার। ৩৮টি পুকুর খননেরও কাজ শুরু হয়। গত বছর মার্চে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরে জমা দেয় বন দফতর।
২০১২-১৩ অর্থবর্ষে বাকি কাজগুলি শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারেরা বার বার বন দফতরকে তাগাদা দিয়েও টাকা না পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেন। ঝাড়গ্রামের ডিএফও-এর (বিভাগীয় বনাধিকারিক) অশোকপ্রতাপ সিংহের কাছে লিখিত ভাবে বিল আটকে রাখার কারণ জানতে চান ঠিকাদারেরা। বন দফতর জানায়, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর প্রতিশ্রুতি মতো টাকা না দেওয়ায় বিল মেটানো যাচ্ছে না। এরপর পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার সঙ্গে দেখা করেন ঠিকাদারেরা। ঠিকাদারদের দাবি, মন্ত্রী তাঁদের জানান, ঝাড়গ্রামের ডিএফও খরচের হিসেব না দেওয়ায় বরাদ্দ বাকি টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এরপরই তথ্য জানার অধিকার আইনে ঠিকাদারেরা, ডিএফও-এর কাছে বিষয়টি জানতে চান। দেখা যায়, দু’দফায় খরচের হিসেব পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরে জমা পড়েছে। শেষ পর্যন্ত, পাওনা বিলের দাবিতে গত নভেম্বরে ঠিকাদারেরা ঝাড়গ্রামের ডিএফও-এর কাছে আইনি নোটিস পাঠিয়ে মামলা করার হুঁশিয়ারি দেন।
এ দিকে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের নির্দেশে গত বছর জুন মাসে ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রকল্পের কাজগুলি ঘুরে দেখে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের সচিবকে রিপোর্ট দেয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে কয়েকটি কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ নিয়ে উভয় দফতরের মধ্যে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গত সেপ্টেম্বরে ঝাড়গ্রামে এসে প্রকল্পের কাজগুলি পরিদর্শন করেন রাজ্যের বিশেষ মুখ্য বনপাল এন ভি রাজাশেখর। কাজের মান দেখে ‘সন্তুষ্ট’ হন তিনি। তিনি বলেন, “একাধিকবার প্রকল্পের কাজগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে। কোথাও কোনও গরমিল পাওয়া যায়নি।” উন্নয়ন-কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত সচিত্র পুস্তিকাও প্রকাশ করে বন দফতর।
তারপরও অনড় থাকেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী। নভেম্বরে আনন্দবাজার সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের তরফে তদন্ত কমিটি গড়া হয়। কমিটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরেজমিন তদন্ত করতে আসে। ওই কমিটিতে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও বন দফতরের উচ্চ পদস্থ আমলাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও ছিলেন। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে কমিটির সদস্যরা কোনও গরমিল খুঁজে পাননি। এরপরই বাকি টাকা ঝাড়গ্রাম বন বিভাগকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। গত ২০ মার্চ বকেয়া ৫ কোটি ৪৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৯০ টাকা হাতে পায় ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ। ঠিকাদারদের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে থমকে থাকা উন্নয়ন কাজগুলি শুরু করানো হয়। কিন্তু এত দেরি করে টাকা এসে পৌঁছনোয় বকেয়া কাজগুলির সিংহভাগ ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ঝাড়গ্রামের ডিএফও অশোকপ্রতাপ সিংহ বলেন, “গত দশ দিনে যতটা সম্ভব দ্রুত কাজ করা হয়েছে। বাকি কাজগুলি ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের মধ্যে শেষ করা হবে। আশা করছি, আগামী মে মাস নাগাদ বকেয়া কাজগুলি হয়ে যাবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.