মালদহ শহর লাগোয়া অন্তত দশটি মৌজার প্রায় ৪০ হাজার বিঘা জমি জলমগ্ন হয়ে থাকায় চাষের কাজ বন্ধ হয়েছে আড়াই দশক আগে। গোটা এলাকা পরিচিত হয়েছে চাতরার বিল নামে। নিরুপায় চাষিরা পেশা পাল্টে দিনমজুর হয়েছে। কিন্তু হার মানেনি অনেকে। চাষের জমি ফিরে পেতে গত দু’দশকে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চাষিরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেচ দফতর জল নিকাশির ব্যবস্থা করে ওই সমস্ত জমি উদ্ধারে উদ্যোগী হওয়ায় ফের ওই দশটি মৌজায় ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। |
চাতরার বিল। —নিজস্ব চিত্র। |
মালদহ সেচ দফতরের বাস্তুকার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ বলেন, “চাতরার বিলকে কৃষি জমিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দফতরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু হয়ে যাবে। দু’বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।” বাসিন্দারা জানান, শহর এলাকার নিকাশি নালার জল জমে ইংরেজবাজার ব্লকের উত্তর রামচন্দ্রপুর, পিরোজপুর, অভিরামপুর, উত্তর যদুপুর, দিলালপুর সহ দশটি মৌজার প্রায় ৪০ হাজার বিঘা কৃষি জমি বিশাল জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। বছরভর জল দাঁড়িয়ে থাকায় সেখানে চাষের কাজ বন্ধ হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে নিঃস্ব হয়েছে অন্তত ৮ হাজার পরিবার। তাঁদের অনেকে পেশা পাল্টে দিনমজুর হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি চাতরার বিলে হারিয়ে যাওয়া জমির কয়েকজন মালিক। জমি ফিরে পেতে তাঁরা ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। কিছুদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সেচ দফতরের সচিবকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সেচ দফতরের কর্তারা নড়েচড়ে বসেন।
বিবেক বসাক ও হিমাদ্রি বসাক নামে এলাকার দুই চাষি জানান, এখন যেখানে বিল সেখানে তাঁদের সাড়ে এগারো বিঘা জমি আছে। বছরে দুবার ফসল হত। বাড়িতে খেয়েও বছরে প্রায় ৪০ মন ধান বিক্রি করতেন। গত ২৫ বছর থেকে ওই জমিতে চাষ আবাদ হয় না। জল জমে থাকায় বছরে কয়েক কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হেচ্ছে। কৃষিজমি ফিরে পেলে প্রায় ৮ হাজার পরিবার নতুন জীবন ফিরে পাবে। যদুপুরের ইসমাইল শেখ বলেন, “আমাদের ৫ বিঘা জমি ছিল। সব হারিয়ে এখন রিকশা টানছি। জমি ফিরে পেলে চাষের কাজ শুরু করব।” ইসমাইলের মতো আশায় বুক বেঁঝেছেন সরিফুল ইসলাম, আনারুল হকরা। কবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এখন সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ইংরেজবাজার ব্লক এলাকার যদুপুর, অভিরামপুর, পারোজপুর কিংবা উত্তর রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দারা।
কেমন করে বিরাট চতরা বিলকে কৃষি জমিতে ফিরিয়ে দেবে সেচ দফতর? কী রয়েছে তৈরি প্রকল্পে? দফতরের বাস্তুকার জানান, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে একটি ৭.২৮ মিটার চওড়া এবং ১.৬ মিটার গভীর ৩ হাজার ৩০০ মিটার নালা তৈরি করা হবে। ওই নালার ১ হাজার ৫৭৫ মিটার খোলা থাকবে। বাকি অংশ ২ মিটার ব্যাসার্ধের হিউম পাইপ দিয়ে বন্ধ নালা তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ২০০ কিউসেকের একটি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে। বর্ষার সময় জল জমলে সেটা পাম্পের সাহায্যে বাইরে বার করা হবে। |