সম্পাদক সমীপেষু ...
পাশ ফেল তোলার অভিসন্ধি
‘তোতা কাহিনি-২’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (২০-৩) প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার অধিকার আসিয়া শিখিবার অধিকার হরণ করিয়াছে।’ কিন্তু আসলে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ফলে বাস্তবে সাধারণ পরিবারের শিশুদের শিক্ষার অধিকারই পরিকল্পিত ভাবে হরণ করা হয়েছে। তাই একে ‘ফলাফল বিচার না করিয়া নীতি প্রবর্তনের মানসিকতা’ বলা যায় না।
কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে কিছু না-শিখলেও এক জন শিশুকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও শ্রেণিতে আটকানো যাবে না। তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দিতে হবে। আইন অনুযায়ী ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি কোনও শিশু আগে কোনও বিদ্যালয়ে ভর্তি না-হয়ে থাকলে বা ভর্তি হয়েও বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে না-পেরে থাকলে তাকে তার বয়সোপযোগী শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে। তাই ১৪ বছর বয়সি কোনও শিশুর অক্ষর পরিচয় না-থাকলেও তাকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে এবং বছরের শেষে তাকে অষ্টম শ্রেণি পাশের শংসাপত্র দিতে হবে। যথাযথ শিক্ষা লাভ না-করেই পাওয়া শংসাপত্র পরবর্তী শিক্ষা বা চাকরি কোনও ক্ষেত্রেই তার কাজে লাগবে না। এটা শিশুদের শিক্ষার অধিকার দেওয়ার নামে তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা নয় কি? অন্য দিকে, উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা উচ্চ ফি দিয়ে সেই সব বিদ্যালয়ে পড়বে যারা সরকারের কাছ থেকে সাহায্য নেয় না। সেখানে পাশ-ফেল থাকবে। তাই এই সব বিদ্যালয়ে যে শিশু পড়বে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্র তাদের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। এ ভাবে দু’ধরনের নাগরিক তৈরি হবে, সমাজে অসাম্য আরও বাড়বে। আর সচেতন অভিভাবকরা সাধ্যাতিরিক্ত ব্যয়ে তাঁদের সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে বাধ্য হবেন। যেমন, প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার পর তাঁরা সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছিল বহু ইংরেজি-মাধ্যম বিদ্যালয়। শিক্ষায় বিনিয়োগে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। দুনিয়া-জোড়া মন্দা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধনিক শ্রেণি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ প্রভৃতি পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করতে চাইছে। তাদের মুনাফার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই ভাল কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনের মাধ্যমে শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিককরণের দ্বার উন্মুক্ত করতে চায়। ভাল ভাল কথার আড়ালে এটাই সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
দাবিই যদি না মানি, পাশে থাকব কী করে?
তমোঘ্ন হালদার বাংলাদেশের শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ-পার বাংলার তথাকথিত ‘নাগরিক সমাজ’-এর আপাত-সজ্জন, স্ববিরোধী অবস্থানের প্রতি যুক্তিনির্ভর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপিত করেছেন। (‘কেবল পাশে থাকব? প্রশ্ন তুলব না?’, ২০-৩) কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে লেখক অসচেতন বা সচেতন ভাবে কিছু প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
প্রথমত, যদি কোনও স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের প্রাথমিক দাবিগুলির যুক্তিগ্রাহ্যতা নিয়েই সংশয়ের উদ্রেক দেখা দেয়, তবে সেই আন্দোলনের নীতিগত গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নকে একই সঙ্গে স্বীকার করে কী ভাবে তার ‘পাশে থেকে’ সমর্থনের হাত (কণ্ঠ) এগিয়ে দেওয়া সম্ভব? লেখক এক জায়গায় বলেছেন যে, তাঁর লেখা শাহবাগ আন্দোলনের বিপক্ষে নয়। অথচ, তার লেখার বয়ান অনুযায়ী উক্ত আন্দোলনের মূল দাবিগুলি যুক্তিগ্রাহ্য বলা যায় না। তা সত্ত্বেও তিনি ও-পার বাংলার জন-আন্দোলনকারীদের ‘পাশে’ না-দাঁড়ানোকে ‘মূর্খামি’ বলতে ভোলেননি। তবে কি শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি আমাদের সমর্থন বা পাশে দাঁড়ানো শুধু মাত্র যুক্তিবর্জিত এবং আবেগসর্বস্ব?
দ্বিতীয়ত, লেখক লিখেছেন, যদি কেউ বাক্স্বাধীনতার অপব্যবহার করে প্ররোচনা বা উসকানি দেয়, ত্রিগুণ প্রাবল্যে রাষ্ট্রকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাল্টা যুক্তি সাজিয়ে পৌঁছতে হবে মানুষের কাছে। বলা দরকার, কোনও মৌলিক অধিকারের অপব্যবহার কখনওই মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত নয়। এখন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিসরে রাষ্ট্র অপব্যবহারকে রুখতে এবং অপব্যবহারকারীকে তার অধিকারের সীমানায় বন্দি রাখতে আইনানুগ পথ নিতেই পারে। মৌলিক অধিকার যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রেখে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণও জারি করতে পারে। কারণ, গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণই তাঁদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে সযত্ন সঁপে দিয়েছেন। অতএব প্রশ্ন ওঠে, ‘ত্রিগুণ প্রাবল্যে’ ঝাঁপিয়ে পড়ে রাষ্ট্র যদি কোনও অপব্যবহারকারীকে তার নিজস্ব অধিকার বলে নিয়ন্ত্রণ করে, সে পদক্ষেপ কি খুবই অগণতান্ত্রিক?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.