এক দিকে প্রতারণার অভিযোগ থেকে মুক্তি, অন্য দিকে জীবনবিমার মোটা টাকা হাতানো। এক সঙ্গে এই দুই লক্ষ্য হাসিল করতেই সে খুনের ফন্দি আঁটে বলে জেরায় জানিয়েছে ধৃত দয়ালদাস মজুমদার, এমনই দাবি করল পুলিশ। হুগলির জিরাটের এক যুবককে খুন করে পকেটে ভোটার কার্ড ঢুকিয়ে দেহ রাস্তায় ফেলা রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত দয়ালদাসকে মালদহের গাজল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৬ মার্চ পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভা গ্রামের এসটিকেকে রোডের পাশে এক যুবকের দেহ মেলে। দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে মুখে পোড়া দাগ ছিল। পকেটে ভোটার কার্ডে ছবি ছিল অস্পষ্ট। নাম লেখা ছিল দয়ালদাস মজুমদার। ঠিকানা দেখে কাটোয়ার চরপাতাইহাটি গ্রামে দয়ালদাসের বাড়িতে যোগাযোগ করে পুলিশ। কিন্তু ময়না-তদন্তের পরে দেহ নিতে আসা দয়ালদাসের দাদা রুইদাসের কথাবার্তা শুনে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাকে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ আনতে বলে পুলিশ। তার পরেই চরপাতাইহাটি গ্রামে গিয়ে নিহতের ছবি বাসিন্দাদের দেখিয়ে পুলিশ জানতে পারে, নিহত যুবক দয়ালদাস নয়। নানা রকম প্রতারণায় অভিযুক্ত দয়ালদাস কয়েক মাস ধরে গ্রামছাড়া। রুইদাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ষড়যন্ত্র করে খুন ও প্রমাণের লোপাটের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়।
ইতিমধ্যে নিহতের পরিচয় মেলে। অভিজিৎ দে নামে ওই যুবক হুগলির জিরাটের পোস্টঅফিস পাড়ার বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানান, কিছু দিন ধরে দয়ালদাস ওই এলাকায় থাকছিল। অভিজিৎ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সে-ও বেপাত্তা। পুলিশ মোবাইলের সূত্র ধরে জানতে পারে, দয়ালদাস গাজলে রয়েছে। রবিবার পূর্বস্থলীর পুলিশ গাজলের কবরডাঙা কলোনিতে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের দাবি, জেরায় দয়ালদাস জানায়, ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় পড়শি অভিজিৎকে বিয়ার খেতে ডাকে সে। তাতে আগে থেকে সে অনেক ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেখেছিল। তা খেয়ে অভিজিতের মৃত্যু হয়। তাঁকে নিজের পোশাক পরিয়ে পকেটে ভোটার কার্ড গুঁজে দেয় দয়ালদাস। মুখ বিকৃত করতে রুমাল পুড়িয়ে গালে চেপে ধরে। তার পরে গাড়িতে করে দেহ ফেলে আসে পূর্বস্থলীতে। সোমবার কালনা আদালত ধৃতকে ১১ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠায়। খুনের ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
|