|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
‘উলাল্লা’ না থাকলে বিদ্যার জয় হত না |
নিজের ইমেজ, তাঁর গাওয়া গান, এবং শেষ পর্যন্ত ভাগ্যসব
নিয়েই অকপট বাপি লাহিড়ি। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
কলকাতায় এলেই আজকাল একটি বিশেষ হোটেলের ৫৪০ নম্বর ঘরে ওঠেন শোনা যায়। কেন? কোনও বিশেষ কারণ আছে? এটা আমার লাকি রুম। তাই।
কী ভাবে লাকি? ভাল কাজকর্মের যোগাযোগ হয়। তাই লাকি। অনুষ্ঠান করতে যাই নানা জায়গায়। সেগুলো ভাল হয়।
লাক-এ খুব বিশ্বাস করেন? অবশ্যই। আমার ছেলে বাপ্পা। বাপ্পা লাহিড়ি সুর দিচ্ছে আজকাল। ওঁর নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। সম্প্রতি ‘জিলা গাজিয়াবাদ’ বলে একটা ছবিতে ওর একটা গান হিট হয়েছে। এর পর আসছে ‘ব্যাং ব্যাং ব্যাঙ্কক’, ‘করু তো করু ক্যায়া’। মনে হয় গানগুলো হিট করবে। আমার বিশ্বাস ওর কাজ ক্লিক করে যাবে বড় ভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো সাফল্যের অনেকটাই লাক।
অনেকেই যে আজকাল বলেন বাপি লাহিড়ি আর আগের মতো সুর দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না...সেটাও তো তা হলে লাক... না, ভুল কথা। লাকের ব্যাপার নেই। ভাল লাগে না বলে সুর দিই না। গানে তো কোনও কথাই থাকে না যে সুর দেব। তাই ভাল লাগে বরং অন্য সঙ্গীত পরিচালকদের গান গেয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’এর সময় বিশাল শেখর এসে বললেন, “আমার টেন পার্সেন্ট গানকে হানড্রেড পারসেন্ট করে দিন আপনি গেয়ে’। আমি গেয়ে দিলাম ‘উলাল্লা’। এখন আর সেরকম গায়ক নেই একটা গানকে যিনি হানড্রেড পারসেন্ট পরিপূর্ণতা দেবেন। আমার মধ্যে সুরকারেরা সেই গুণটা পাচ্ছেন বলেই গাইছি। গায়ক হিসেবে আমার গান এত জনপ্রিয় হচ্ছে, গাইব না কেন?
‘ দ্য ডার্টি পিকচার’এ এই যে এত সাফল্য সেটা ‘উলাল্লা’র জয়? না বিদ্যা বালনের জয়? অবশ্যই ‘উলাল্লা’র জয়। ‘উলাল্লা’ না থাকলে বিদ্যা বালন আসতেন না। ‘উলাল্লা’কে মাইনাস করে দিন। বিদ্যা বালন কীসের ওপর নাচতেন তা হলে? |
|
‘উলাল্লা’ গানের সঙ্গে বিদ্যা বালনের লাস্যময় নাচের ভঙ্গি। সঙ্গে নাসিরউদ্দিন |
ধরুন ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবিতে ‘উলাল্লা’ গানটা আপনি গাইলেন কিন্তু নায়িকা যদি বিদ্যা বালনের জায়গায় অন্য কেউ হতেন তা হলে কী হত? যদি ‘উলাল্লা’র মতো গান না থাকত, বিদ্যা বালন এত ভাল অ্যাক্টিং করতে পারতেন না। মিলান লুথারিয়া পিকচারাইজ করেছেন অপূর্ব। বিদ্যার জায়গায় অন্য যে কোনও ‘সেক্সি’ নায়িকা ও সুঅভিনেত্রী এলেও এ ছবি জমত, গল্পটা এতই ভাল ছিল।
কানে দুল, গলায় হার। পুরুষ শিল্পীদেরও আজকাল আকছার দেখা যাচ্ছে এই রূপে। কিন্তু আপনি তো কবে থেকেই রকস্টারের মতো এই ভাবে সাজা শুরু করেছেন।
ঠিক কী কারণে এত গয়ানাগাঁটি পরা ইমেজ তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন? এলভিসের গলায় মোটা হার, হাতে ঘড়ি, ব্রেসলেট, চোখে চশমা থাকত। এলভিস, মাইকেল জ্যাকসন, এলটন জনের স্টাইল দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের এই ইমেজ সম্বন্ধে ভাবতে শুরু করি। অনেকে বাপি লাহিড়িকে নকল করার চেষ্টা করেন। বাপি লাহিড়ি হতে গেলে অনেক পয়সার দরকার। সঙ্গীত জীবনের চল্লিশ বছর পার হল এই বছর। এখনও দাঁড়িয়ে আছি নম্বর ওয়ানে।
নম্বর ওয়ানে যে দাঁড়িয়ে আছেন, এটা কী করে মনে হচ্ছে? কেউ বলেছেন আপনাকে?
কে আবার বলবে? নিজেই বুঝি। এখনও এই চল্লিশ বছর পার করেও আমি গান গাইছি। সুরের কথা ভাবছি। ট্যালেন্ট আর স্টাইল দুটো নিয়েই আমি। বাপি লাহিড়িকে নকল করতে গেলে এই দুটোই দরকার। আজকে এই চল্লিশ বছর পরেও তিনটে ছবিতে আমার গাওয়া গান হিট। হ্যাটট্রিক। ‘স্পেশাল ২৬’ এর গান ‘ধর পাকড়’, ‘জলি এল এলবি’র ‘মেরে তো ল লগ গয়ে’, ‘হিম্মৎওয়ালা’র ‘তাকি তাকি’, ‘নয়নো মে সপনা’। গত চল্লিশ বছরে অনেক গায়ক, সুরকার এসেছেন গিয়েছেন। কিন্তু আমি এখনও সুরেলা ভাবে টিকে আছি। আমি যা গান করেছি সত্তরের দশক থেকে এই ২০১৩ পর্যন্ত, বেশির ভাগই সুপার হিট।
এই একই ভাবে জনপ্রিয় থাকার রহস্য কী? আমি গান করি, বা সঙ্গীত পরিচালনা করি, সবটাই যুগোপযোগী ভাবে। পাবলিক যে ধরনের গান পছন্দ করছে সেই ধরনের গান গাওয়ার কথা ভেবেছি। ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘অমরসঙ্গী’, কিংবা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র গান গেয়েছি বাঙালি রুচি বুঝে। ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’ শুনলে আজও বাঙালি কেঁদে ফেলে। ‘কলকাতার রসগোল্লা’ আজও সুপারহিট। এখন দেখুন বাংলার মাঠেঘাটে ঘুরছে এই গান “ঝিং চাক চাক চিকা চিকা’। ছবির নাম বিক্রম সিংহ। অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পলিটিক্যাল মার্ডার’ ছবিতে সুর দিয়েছি। আমার ধারণা শ্রোতাদের খুব ভাল লাগবে।
আপনি মানে ‘ম্যায় হুঁ ডিস্কো ডান্সার’, আবার আপনি মানে ‘উলাল্লা’ও । কোন সময়টা আপনাকে বেশি আপ্লুত করে? ‘ডিস্কো ডান্সার’ এর সময়টাই আমাকে বেশি নাড়া দিয়েছে। কারণ ডিস্কো শব্দটাকে ভারতে এনেছে এই আমি, এই বাপ্পি লাহিড়িই। মাইকেল জ্যাকসন মুম্বইতে এসে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আই লভ দ্য সং ‘জিমি জিমি’’।
আজ যদি ‘ডিস্কো ডান্সার’ এর রিমেক হয় তা হলে কী ভাবে সুর দেবেন? যেমন সুর আগে দিয়েছি সেই ভাবেই দেব। রিমিক্স হবে। ‘ডিস্কো ডান্সার’ এর তো রিমেক হচ্ছে। ‘নমক হালাল’ এর রিমেক হচ্ছে। |
|
বাপি লাহিড়ি। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
বিশাল শেখর থেকে এ আর রহমানের মতো সুরকার নামী দামি গায়কদের বাদ দিয়ে আপনার মতো সুরকারকে দিয়ে গান গাওয়ান। কেন? কারণ আমার গলা ও গায়কী পাবলিকের ভাল লাগে। মাই ভয়েস ইজ লাকি ফর এনি ফিল্ম। সে ‘গোলমাল থ্রি’ হোক কি ‘দ্য ডার্টি পিকচার’। যখনই গান গেয়েছি সুপারহিট। সেই জন্যই সঙ্গীত পরিচালকেরা আমাকে পছন্দ করেন।
পাবলিক নাচানোর গলাটা তৈরি হল কী ভাবে? লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, কিশোর কুমার এঁদের সঙ্গে কাজ করতে করতে অনেক দিন ধরে শিখেছি কী ভাবে কথা অনুসারে গান পরিবেশন করতে হয়। সেই জন্যই অন্য সঙ্গীত পরিচালকের গান এমন ভাবে তুলে ধরছি যাতে সোনে পে সোহাগা হচ্ছে।
আপনিও কি সঙ্গীত পরিচালনা বাদ দিয়ে গায়ক হিসেবেই নিজেকে দেখতে চাইছেন বেশি? এত গান যখন গাইছেন পর পর। ঠাকুরের দয়ায় প্রতি সপ্তাহে চারটে করে গান গাওয়ার অফার আসে। আমি গাই না। আমার যদি গান ভাল লাগে নিশ্চয়ই গাইব। আবার সুরকার হিসেবেও থাকতে চাই। এখন বাংলার ছবির জন্য বেশ কিছু সুর করেছি। ‘লোফার’, ‘স্বভূমি’ ‘পলিটিক্যাল মার্ডার’ ছবিগুলোর নাম। হিন্দিতে ‘ডার্টি পলিটিকস’ বলে একটা ছবিতে সুর দিয়েছি। আইটেম গান। এখন আমি বাছাই ছবিতে সুর দেব ঠিক করেছি।
এখনকার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তখনকার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির তফাত কী মনে হয়? তখনকার গানে মেলোডি ছিল। এখন সেগুলোই রিমিক্স হচ্ছে। নতুন তো খুব কিছু হচ্ছে না। আজকের গানে জোরালো কথা নেই।
বাংলা আধুনিক গান যে বদলে গিয়েছে সেটা কেমন লাগছে?
ব্যান্ডের গান ভাল লাগে। আবার ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ও ভাল লেগেছে। আমি সব সময় পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই। সেই জন্যই নতুন সুরকারদের গানে কাজ করতে ভাল লাগে। নিজেকে তরুণ রাখা যায়। |
|
|
|
|
|