পানীয় জলের সমস্যা ছিলই। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মারাত্মক আকার নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকে। ব্লকের এগারোটি পঞ্চায়েতের সবকটিতেই পানীয় জলের সমস্যা চরম আকারা নিয়েছে। বাধ্য হয়ে পুকুরের জলই ব্যবহার করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এমনকী বহু স্কুলে মিড ডে মিলের রান্নাও চলছে পুকুরের জলে। এলাকার মানুষের অভিযোগ এলাকায় পানীয় জলের নলকূপগুলির কোনওটি এক বছর, কোনওটি বেশ কয়েক মাস ধরে একেবারেই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সব জানা সত্ত্বে প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
বিডিও নিরঞ্জন কর বলেন, “প্রতি বছর গরমে ওই সব এলাকায় জলস্তর নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের সমস্যা হয়। আবার বষার্র পরে সমস্যা অনেকটাই মিটে যায়। তবে বর্তমানে নলকূপ খারাপ থাকার কারণে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সমাধানে নলকূপগুলি দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করছি।” |
প্রশাসন সূত্রের খবর, মথুরাপুর ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে নগেন্দ্রপুর, কনকনদিঘি, নন্দকুমারপুর পঞ্চায়েত এলাকায় কাথাও বছর খানেক আগে থেকে খারাপ হয়ে পনে আছে গভীর নলকূপ। মাইলের পর মাইল হেঁটে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। রায়দিঘির মণি নদী ও জঙ্গলে ঘেরা পঞ্চয়েতগুলিতে রয়েছে বেশ কিছপ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কিন্তু সেই সব স্কুলের নলকূপগুলিও বেহাল। বেশিরভাগই পুরো অকেজো। দু-একটিতে জল যদিও বা পড়ে তাও এতটাই নোংরা যে পানের অযোগ্য। নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের হালদারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য পানীয় জলের কোনও নলকুল নেই। গ্রামের নলকূপই ছিল তাদের ভরসা। কিন্তু তাও অকেজো হয়ে পড়ায় পুকুরের জলই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতেই চলছে মিড মিলের রান্নাও।
বিদ্যালয়ের একমাত্র পার্শ্বশিক্ষক বুদ্ধদেব হালদার বললেন, “অনেক দূর থেকে পানীয় জল আনা খুবই সমস্যার। তাই পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকলেও পুকুরের জলই ব্যবহার করতে হচ্ছে।”
এই এলাকা নদীবেষ্টিত হলেও কোনও নিকাশি খাল নেই। ফলে বোরো চাষ ও সব্জি চাষের জন্য পুকুরের জলই ভরসা। কিন্তু গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরেও জলের পরিমাণ কমছে। তার উপর অনেকেই পানীয় হিসাবে ব্যবহার করায় চাষের কাজেও জল পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
দমকল মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দাদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে যেতে হয় দমকল ও তিন নম্বর ঘেরি পুরকাইত পাড়ায়। প্রায় এক ঘণ্টার পথ কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যানে কেউ সাইকেলে করে সেখান থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে আনেন। সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় পানীয় জল আনার তোড়জোড়। গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তিন মাস ধরে একমাত্র নলকূপটি খারাপ। স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী সর্দার, রমলা হালদারদের অভিযোগ, রাত থেকে উঠে পানীয় জল আনতে যেতে হয়। না হলে লাইন পড়ে যাবে। তা ছাড়া অতটা রাস্তা রোজের মধ্যে হেঁটে জল আনতেও কষ্ট হয়।”
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদ্য এসইউসি-র প্রশান্ত হালদারের অভিযোগ, পানীয় জলের জন্য নতুন নলকূপ বসানোর বিষয়ে একাধিকবার পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিডিও সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এই এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়েছে।” |
গত কয়েক মাস ধরে এই এলাকার ২০-৩০টি নলকূপ খারাপ। নলকূপ খারাপের কারণে চাষের জন্য শ্যালো বসিয়ে জল তুলে নেওয়ার কারণে জলস্তর নেমে যাওয়ার পানীয় জলের সমস্যার প্রধান কারণ বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ মাইতি, অনুপ ভান্ডারীরা।
মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংসমোহন কয়াল বলেন, “এই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। মাটির নীচে জলস্তর নেমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। তবে আরও গভীর নলকূপ বসিয়ে জলের সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।”
স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রী রায় বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ওই এলাকায় কিছু নলকূপ বসানো হয়েছে। প্রয়োজন বুঝে আরও নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
|