বড় অজান্তে অদ্ভুত এক মোহনার জন্ম হচ্ছে শহরে। আজ পর্যন্ত কবে একই সঙ্গে, শহরের একই মঞ্চে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের এত জন দুঁদে অধিনায়ক?
কত নাম পাশাপাশি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। গৌতম গম্ভীর। রাহুল দ্রাবিড়। মাহেলা জয়বর্ধনে। বীরেন্দ্র সহবাগ। বিরাট কোহলি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ। রিকি পন্টিং। কুমার সঙ্গকারা...।
কবেই বা শহরের অনুষ্ঠানে টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন দর্শকাসনে বসে থাকা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের রাঘববোয়ালরা? আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। সিইও সুন্দর রামন। উদ্বোধনের হালহকিকত বুঝতে তাঁরা আগাম উপস্থিত।
চৈত্র শেষের এক সন্ধে। দৈর্ঘ্য মাত্র দেড় ঘণ্টা। কিন্তু বিশালতায়, ব্যাপ্তিতে মহাকাব্যিক। ক্রিকেট ভারত তো রোজ রোজ মেশে না ক্রিকেট কলকাতার মোহনায়! যে শহরের হৃদয়ে ক্রিকেট, সেই কলকাতাই বা আর ক’বার সুযোগ পাবে এ ভাবে ক্রিকেটবিশ্বের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার? |
কিং খানের বহু দিনের সাধও তো এত দিনে মিটল। আইপিএলে টিম কেনার পর থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক চেয়েছেন ইডেনে শো করতে। নানা জটিলতায় পাঁচ বছরেও তা হয়নি। এ বারও তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল ইডেন। তবে শেষ পর্যন্ত ইডেন না হোক, যুবভারতীতে হচ্ছে তাঁর ‘চক দে’ শো। মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন শাহরুখ। ‘কিং সাইজ’ বিনোদনের জোগাড়যন্ত্রে। এ দিন তো নেমেই পড়েছিলেন নাচের মহড়া দিতে। ভক্তদের ধাক্কাধাক্কিতে মিনিটখানেকের বেশি টিকতে পারেননি ঠিকই, তাই বলে হালও ছাড়েননি। যুবভারতীর ড্রেসিংরুমে ঠায় বসে থেকেছেন। কখন ভিড় কমবে। কখন ফের শুরু হবে রিহার্সাল। তাঁর নিজের শহর মুম্বইয়ের মাঠে শাহরুখের ‘নো এন্ট্রি’ এ বারও। কিন্তু এখানে তিনি একান্ত আপন। শহরের আত্মজসম।
শহরের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অবশ্য তাঁর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পেয়ে অভিমানী। সংগঠকদের প্রাথমিক রূপরেখায় ছিল হলিউড, বলিউড, টলিউডের ত্রিবেণী সঙ্গম। কিন্তু আন্তর্জাতিক পপ তারকা জেনিফার লোপেজকে আনার ব্যর্থ চেষ্টায় এতটাই সময় খরচ হয়ে যায় যে, টলিউডের দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ হয়নি। কোনও কোনও মহলে তীব্র বিস্ময় টালিগঞ্জকে অনুষ্ঠানে শরিক করা হয়নি বলে। প্রসেনজিৎ বিদেশে। ঋতুপর্ণা শান্তিনিকেতনে। দেব হায়দরাবাদে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরি যিনি আবার শাহরুখকে নিয়ে রাজ্য সরকার প্রযোজিত ব্র্যান্ড বেঙ্গল পরিচালনা করেছেন, তিনিও শহরের বাইরে। এঁরা কি সবাই ইচ্ছাকৃত মঙ্গলবার রাতে শহরে নেই?
উল্টো দিকে অনেকে এও ভাবছেন যে, চেন্নাইয়ে গত বার আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তামিলনাড়ুর সুপারস্টারদেরও তো ডাকা হয়নি। এ বারই বা কেন ব্যতিক্রম হবে?
আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? শহরের সব চেয়ে বড় ক্রিকেট আইকন সোমবার রাত পর্যন্ত আমন্ত্রণ পেয়েছেন সিএবি থেকে। আসবেন কি না, অনিশ্চিত। |
তবে চাওয়া-পাওয়ার ব্যালান্স শিটে প্রাপ্তির ওজনও প্রচুর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে অনুষ্ঠানের সূচনা, প্রদীপ জ্বালিয়ে। তার পর একে একে রবীন্দ্রসঙ্গীত। ছৌ নাচ। লেজার শো। উড়ন্ত ড্রামার। বলিউডের গ্ল্যামার কোশেন্ট তুলতে দীপিকা পাড়ুকোনের নাচ, চলন্ত সিংহাসনে ক্যাটরিনা কাইফের মঞ্চ-প্রবেশ। আন্তর্জাতিক র্যাপস্টার পিটবুলের পারফরম্যান্স। ম্যাচের পর ম্যাচ ইডেনের কর্পোরেট বক্সে কেকেআরের জন্য গলা ফাটানো ঊষা উত্থুপের গান।
এবং এসআরকে।
বাইক ফুঁড়ে স্টেজে ঢুকবেন। সত্যি বাইক নয়, কাটআউট। ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ থেকে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘ছম্মক ছল্লো’ থেকে ‘ম্যাঁয় হুঁ ডন’। বাংলা কথা, পঞ্চ-ইন্দ্রিয় মোহাবিষ্ট করে দেওয়া আধ ঘণ্টার শাহরুখ শো।
আইপিএল নাইট-কে ‘মাদার অব অল শো-জ’-এ রূপান্তরিত করতে এক নম্বর ভরসা তো শাহরুখই। আর কেউ আসুন না আসুন, বাজিগরের টিআরপি আর এ দেশে কবে পড়েছে? |