সম্পাদক সমীপেষু...
ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকেও লাভ নেই
নিজের অবস্থানে অনড় থাকার কারণেই সৌগত রায় বাধ্য হলেন মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টার পদ থেকে সরে যেতে। (‘জমিনীতির বিরোধিতায়...’, ১৭-৩) মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, শিল্পের জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না। বিনিযোগকারীরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ৯০ শতাংশ জমিই দুই বা এক একরের। ফলে, হাজার হাজার জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে শিল্প স্থাপন প্রায় অসম্ভব। রাজ্য সরকার বলছে, সমস্যা নেই, ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ আছে। শিল্পের প্রয়োজনে জমি দেবে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক। কিন্তু ল্যান্ড ব্যাঙ্কের মালিক ভূমি দফতর বলছে, বড় মাপের কারখানা করার মতো জমি ল্যান্ড ব্যাঙ্কে নেই। শিল্পের জন্য জমি সমস্যা সমাধানে শিল্পমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও ঠিক তথ্য হচ্ছে, বড় শিল্প করার জমি নেই ল্যান্ড ব্যাঙ্কে। কারখানার জন্য এক লপ্তে ৩০০ একরের বেশি জমি পাওয়াও প্রায় অসম্ভব, বলছে স্বয়ং ভূমি দফতর। মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে তথ্যের বদল ঘটবে না।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি শিল্পের জন্য জমি বরাদ্দ করার পদ্ধতি এবং দাম নির্ধারণের নয়া নীতি ঘোষণা করেছে। শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই নীতি মেনেই রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম (ডব্লিউ বি আই ডি সি) এবং রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউ বি আই আই ডি সি) বিনিয়োগকারীদের জমি দেবে। দেখা যাচ্ছে, ওই দুই সংস্থার হাতেও বড় শিল্প করার মতো জমি নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি দফতর অনেক মেহনত করে প্রায় ৬০ হাজার একর জমি চিহ্নিত করেছে। শিল্প দফতরের হিসাব বলছে, রাজ্যে বিনিয়োগের বন্যা বয়ে গেলেও বড়জোর এক লাখ একর জমি দরকার হবে। ফলে, ৬০ হাজার একর অব্যবহৃত জমি পাওয়া গেলে জমি নিয়ে সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু ভূমি দফতর বলছে, কোথাও বড় কারখানা করার মতো জমি পাওয়া যায়নি। তারা জানিয়েছে, এক লপ্তে ১০০ একরের বেশি জমি আছে এমন প্লট দুটি বা একটির বেশি হবে না। এক লপ্তে ৫০ থেকে ৮০ একরের মতো জমি আছে এমন প্লট আছে বড়জোর গোটা দশেক। সেই প্লটও মূলত তিনটি জেলা, দার্জিলিং, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় সীমাবদ্ধ। ৬০ হাজারের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে পিছিয়ে থাকা ওই তিনটি জেলাতেই। কিন্তু সেখানে আবার শিল্পের পরিকাঠামো অর্থাৎ রাস্তা, জল, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ফলে, বড় মাপের বিনিয়োগের প্রস্তাব এলে সরকারের পক্ষে জমি দেওয়া মোটেই সহজ হবে না। ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জন্য ভূমি দফতর গোড়ায় তিন লাখ একর জমির সন্ধান পেয়েছিল। কিন্তু ভূমি দফতর জানাচ্ছে, জেলা প্রশাসন জমির যে হিসেব দিয়েছে তার সিংহভাগ বেদখল হয়ে আছে। মামলাতেও আটকে আছে বহু জমি। তাই ঝঞ্ঝাট-মুক্ত জমির হিসাব দিতে বলা হয় জেলাগুলিকে। তাতেই ৬০ হাজার একরের সন্ধান মিলেছে।
ডব্লিউ বি আই ডি সি এবং ডব্লিউ বি আই আই ডি সি-র হাতেও তেমন একটা জমি নেই। খড়্গপুরে ডব্লিউ বি আই আই ডি সি-র ১,১৪৯ একর বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এখন ফাঁকা আছে মাত্র ৫০৪.৬৬ একর। নৈহাটিতে ঋষি বঙ্কিম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আছে ৭৭.১১ একর। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোদাপিয়াশাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমি পড়ে নেই। বর্ধমানের পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আছে ৬৫২ একর। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় আছে প্লাস্টো-স্টিল ফেজ-২ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ফাঁকা আছে ২১ একর জমি। খড়্গপুরের সাহাচক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মাত্র সাড়ে তিন একর জমি শিল্প নিগমের হাতে আছে। কলকাতার বেলেঘাটায় রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ‘পরিধান’। সেখানে মোট ৪০টি মডিউলের মধ্যে ফাঁকা আছে ১৯টি।
ডব্লিউ বি আই আই ডি সি-র হাতে ফাঁকা জমি প্রায় নেই বললেই চলে। সংস্থার ১০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারে ৮৭টি শিল্প সংস্থার হাতে ৩৮৮ একর জমি আছে, কারখানা হয়নি। গত জুনে ওই সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের চিঠি দিয়ে জমি ফিরিয়ে দিতে বলে। তার পর দেড় বছর কেটে গেলেও আইনি জটিলতায় কোনও জমিই ফেরত আসেনি।
কার্যত জমি অধিগ্রহণে হস্তক্ষেপ না-করার যে নীতি রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, তা অটুট থাকলে শিল্পায়নের জন্য এক লপ্তে বড় জমি সংগ্রহ প্রায় অসম্ভব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.