আলুর পরে টম্যাটো। চাহিদার তুলনায় জোগান অনেকগুণ বেশি হওয়ায় টম্যাটোর দাম পাচ্ছেন না এ রাজ্যের চাষিরা।
আলুর তা-ও কিছু দাম মিলছে। টম্যাটোর দর পড়ছে হু হু করে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। পরিস্থিতি এমনই যে, উত্তরবঙ্গের কোনও কোনও জায়গায় ৫০ পয়সা কেজি দরেও টম্যাটো বিকোচ্ছে। যার জেরে শুরু হয়েছে চাষিদের বিক্ষোভ। দক্ষিণবঙ্গেও অবস্থা ভাল নয়। ৪০ কেজি টম্যাটোর দাম ৮০ টাকা। গড়ে মাত্র ২ টাকা কেজি। চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। খোলা বাজারেও দর নামছে।
তাই ফের বহুমুখী হিমঘরের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ সামনে চলে আসছে। কৃষি দফতরের জলপাইগুড়ির ডেপুটি ডিরেক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বার ভাল আবহাওয়ার জন্য ফলন ভাল হয়েছে। স্থানীয় পাইকারদের পক্ষে সব কেনা অসম্ভব। বহুমুখী হিমঘর নেই, অবিক্রিত সব্জি সংরক্ষণের উপায় নেই। কিষাণ মান্ডি হলে সমস্যা মিটবে।” জেলারই কামাখ্যাগুড়ির পশ্চিম নারারথলি গ্রামের চাষি পুণ্য অধিকারী বলেন, “গত বার ভাল দাম মেলায় এ বার গ্রামের সবাই বেশি করে টম্যাটো চাষ করেছে। কিন্তু, দাম নেই। হিমঘর থাকলে এটা হত না।” ক্ষুব্ধ চাষিদের প্রশ্ন, কেন এত দিনেও কাছের কুমারগ্রাম ব্লকে একটিও হিমঘর তৈরি হয়নি? কেন কিষাণ মান্ডির কথা বলা হলেও তার কাজ হচ্ছে না? |
জলপাইগুড়ির তালমা হাটে টম্যাটো ফেলে বিক্ষোভ চাষিদের। সোমবার। ছবি: সন্দীপ পাল। |
কুমারগ্রামের তিন বারের আরএসপি বিধায়ক দশরথ তির্কি বলেন, “অনেক চেষ্টা করেও সরকারি উদ্যোগে হিমঘর তৈরি হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগে পারোকাটায় একটি বহুমুখী হিমঘর তৈরি হয়েছিল। যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে তা বন্ধ।” দক্ষিণবঙ্গে হুগলির শিবাইচণ্ডী, সুগন্ধার গটু বাজারেও এক ছবি। ধনেখালির টম্যাটো চাষি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, “সার, কীটনাশক সব মিলিয়ে টম্যাটো চাষে বিঘা প্রতি অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ। এ বার দাম যেখানে নেমেছে, তাতে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।” সোমবার সকালে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ লাগোয়া তালমা হাটে ক্ষুব্ধ চাষিরা বস্তা বোঝাই টম্যাটো ফেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলা অবরোধের জেরে যানজটের সৃষ্টি হয়। জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “চাষিদের সমস্যা নিয়ে কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সমাধান সূত্র খোঁজা হচ্ছে।” হলদিবাড়ি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং হুগলি, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরে টম্যাটোর ভাল চাষ হয়। সাধারণ ভাবে নভেম্বর থেকে মার্চ টম্যাটো চাষের মরসুম। এ বার মার্চে ভাল ঠান্ডা ছিল। চাষিদের ব্যাখ্যা, সহায়ক আবহাওয়ায় ফলন বেশি হয়েছে। উত্তরবঙ্গ, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়া থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ নানা রাজ্যে টম্যাটো যায়। কিন্তু, দোলের সময় পরপর কয়েক দিন ওই সব রাজ্যের বাজার বন্ধ থাকায় টম্যাটো রফতানি হয়নি। এক সঙ্গে বেশি টম্যাটো জমে যাওয়ায় দাম পড়ে গিয়েছে। এখন গরমে টম্যাটো দ্রুত পাকছে। চাষিরা জমি থেকে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে অতিরিক্ত টম্যাটো আসছে।
সমস্যা আছে চাষিদের দিক থেকেও। একাধিক কৃষি আধিকারিকের কথায়, “অতি ফলনের সমস্যা মেটাতে শস্য বৈচিত্র্যের কথা বলা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা গতবারের লাভের কথা ভেবে পরের বার একই সব্জি চাষ করছেন। ফলে একটি বিশেষ সব্জির আমদানি বাজারে বেড়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।”
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় দাম না পাওয়ার কথা স্বীকারই করেননি। তিনি বলেন, “এ দিনই বৈঠকে বসেছিলাম। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, চাষিরা টম্যাটোর ভাল দাম পেয়েছেন। শেষ সময়ের টম্যাটোর মান খারাপ হয়। অনেক ক্ষেত্রে চাষিরাই তা ফেলে দেন। কোনও কোনও মহল থেকে দাম না পাওয়ার বিষয়টি রটানো হচ্ছে।” তাঁর দাবি, রাজ্যে ৩৬টি বহুমুখী হিমঘর হচ্ছে। পিপিপি মডেলে যে-সব কিষাণ মান্ডি তৈরি হবে, সেগুলির মধ্যেও হিমঘর থাকবে।
|
বহু টম্যাটো নষ্ট, হিমঘরের দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কুমারগ্রাম ও আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের চাষিরা বিপাকে। এ বারও দাম না পেয়ে রাস্তায় টম্যাটো ফেলে দিতে হয়েছে তাঁদের। ওই সমস্যা এড়াতে চাষিরা এলাকায় বহুমুখী হিমঘর তৈরির দাবি তুলেছেন। চাষিদের অভিযোগ, কুমারগ্রাম ব্লকে একটি হিমঘর নেই। পাশে পারোকাটায় একটি বহুমুখী হিমঘর তৈরি হলেও সেটা দু’বছর ধরে বন্ধ। ওই পরিস্থিতিতে অতিফলন অথবা দামের ওঠা নামায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। খেতের সব্জি খেতে নষ্ট হওয়া রুটিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুমারগ্রামের বিডিও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” কৃষি বিপনন দফতরের জলপাইগুড়ির জেলার সহকারি আধিকারিক সুব্রত দে বলেন, “সব্জি চাষিদের সমস্যা সমাধানের জন্য জেলায় বেশ কয়েকটি বহুমুখী হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধূপগুড়িতে প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। কুমারগ্রামেও একটি বহুমুখী হিমঘর প্রয়োজন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” চাষিরা জানান, কামাখ্যাগুড়ি সবজি বাজার ভুটান ও অসমের পাইকারদের উপরে নির্ভরশীল। প্রতি সপ্তাহে সেখান থেকে ট্রেন ও ট্রাক বোঝাই সবজি বাইরে যায়। গত কয়েকদিন থেকে বাইরের ক্রেতারা আসেছে না। ওই কারণে শনিবার চাষিরা কয়েকশো কুইন্টাল সবজি রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভে সামিল হয়। ঘটনার পরে কুমারগ্রামে বহুমুখী হিমঘর স্থাপনের দাবি ফের সামনে চলে আসে।
|
আলুর সহায়ক মূল্যের দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকার আলু চাষিদের সহায়ক মূল্য দিক রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে এই আর্জি জানালেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সোমবার বিমানবাবু-সহ ফ্রন্ট নেতৃত্ব রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পঞ্চায়েত জটের পাশাপাশি আলু চাষিদের প্রসঙ্গও তোলেন। পরে বিমানবাবু বলেন, “আলু চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। আলুর দাম ভীষণ পড়ে যাচ্ছে। তাই রাজ্যপালকে বলেছি, আলু চাষিদের সহায়ক মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। না হলে আলু চাষিদের আত্মহত্যা ঠেকানো যাবে না।” |