তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বাধায় ফেরিঘাটের দখল নিতে পারলেন না ইজারাদার। ফলে সোমবার বন্ধ রইল কেতুগ্রামের উদ্ধারনপুর থেকে নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার ভাগ্যবন্তপুরের মধ্যে নৌকা চলাচল। বিকেলে কেতুগ্রাম ২ যুগ্ম বিডিও আরিকুল ইসলাম দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসলেও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি।
কেতুগ্রাম ২ ব্লক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফেরিঘাটের পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত সিতাহাটি পঞ্চায়েত। এই ছ’মাসের জন্য জেলা পরিষদকে তিন লক্ষ তিন হাজার টাকা ইজারাও দিয়েছে তারা। এর মধ্যেই জানুয়ারি মাসে নতুন দরপত্র ডাকে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ২৮ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হলে দেখা যায় বার্ষিক ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা ডাকে ওই ফেরিঘাটটি ইজারা পেয়েছেন সিতাহাটি পঞ্চায়েতের নৈহাটি গ্রামের তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই ওই এলাকায় তৃণমূলের নেতৃত্বে ‘খেয়াঘাট বাঁচাও কমিটি’ গড়ে ওঠে। বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাক ক্ষতিতে কী করে বর্ধমান জেলা প্রশাসন তাপসবাবুকে ওই ইজারা দিল তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ওই কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। |
সোমবার থেকে ওই খেয়াঘাট পরিচালনার দায়ভার নেওয়ার কথা ছিল ইজারাদার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু দায়িত্ব নিতে গেলে সিতাহাটি পঞ্চায়েতের খেয়াঘাটের কর্মীদের সঙ্গে গোলমাল বাধে তাঁর। কর্মীরা ভাগীরথীর পাড়ে তৃণমূলের পতাকা বেঁধে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে কেতুগ্রামের আইসি আব্দুর গফ্ফর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাপসবাবুর অভিযোগ, “সকাল থেকে সিতাহাটি পঞ্চায়েতের কর্মীরা পতাকা লাগিয়ে আমাগের খেয়াঘাটের দখল নিতে দিল না।” শ্যামলবাবু বলেন, “বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন। তাই এই সময় অন্য কারও হাতে খেয়াঘাটের দায়িত্ব তুলে দেওয়া যায় না।” সিতাহাটি পঞ্চায়াতের প্রধান বিকাশ বিশ্বাসও বলেন, “জেলা পরিষদকে এত টাকা দেওয়ার পরেও ওই খেয়াঘাটে ১২ জন কর্মী কাজ করছেন। আমরা অন্য কারও হাতে খেয়াঘাট তুলে দেব না।”
এ দিকে সপ্তাহের প্রথম দিনই নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন নদিয়ার ভাগ্যবন্তপুরের বাসিন্দারা। এলাকার মৌসুমী দাস, অনন্ত রায়দের অভিযোগ, “আমরা যে কোনও কাজেই কাটোয়ার উপর নির্ভরশীল। উদ্ধারনপুর খেয়াঘাট পার হয়েই কাটোয়া যেতে হয়। ফলে খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় অসুবিধেয় পড়তে হয়েছে।” উদ্ধারনপুর বাজারের উপর নির্ভরশীল ভাগ্যবন্তপুরের বাসিন্দারা। সেখান থেকে মাছ, সব্জি নিয়ে আসেন তাঁরা। খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় ওই ব্যবসায়ীরাও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কেতুগ্রাম ২ যুগ্ম বিডিও আরিকুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক একটা আলোচনা হয়েছে। আশা করি মঙ্গলবার মীমাংসা হয়ে যাবে। নৌকা চলাচলও শুরু হয়ে যাবে।” |