বাসে-ট্রেনে লাগামছাড়া ভিড়, পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি, সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে না পারা এমনই নানা কারণে রবিবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে গিয়ে নাকাল হতে হল বহু পরীক্ষার্থীকে। ‘অব্যবস্থা’র জন্য পর্ষদকেই দায়ী করেছেন বহু ভুক্তভোগী।
বাদুড়িয়ার চণ্ডীপুরের বাসিন্দা শিউলি হালদার সকাল ন’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল গোপালনগর থানার ঘোলা গার্লস হাইস্কুল। কিন্তু গোপালনগরে গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে ওই নামের কোনও স্কুল নেই। পরে তিনি জানতে পারলেন স্কুলটি ব্যারাকপুর মহকুমার ঘোলায়। তখন ঘড়িতে একটা বেজে গিয়েছে। আর তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হল না। একই পরিস্থিতির শিকার হন বসিরহাট-২ ব্লকের চাঁপাপুকুর এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকী-সহ অনেকে। আবু বক্করের ক্ষোভ, “পরীক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু পর্ষদের গাফিলতিতে সব শেষ হয়ে গেল।” |
জগদ্দলের মণ্ডলপাড়া গার্লস স্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখে বিভ্রান্ত হন পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা জানতে পারেন, ওই নামের একই স্কুল রয়েছে গাইঘাটায়। সেখানে গিয়েই তাঁদের পরীক্ষা দিতে হবে। শুরু হয়ে যায় হইচই। পরীক্ষা শুরু হতে বেশি দেরি না থাকায় কী ভাবে গাইঘাটা পৌঁছনো সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত মহকুমা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দুকমার মাজি বলেন, “ওয়েবসাইটের ত্রুটি নজরে আসা মাত্র পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক সেট অতিরিক্ত প্রশ্নপত্র আনানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। ওয়েবসাইটের ভুলটিও সংশোধন করিয়েছিলাম। তার পরেও চলে আসায় পরীক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়। মোট ১৭৫ জন পরীক্ষা দিয়েছেন।” পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা নিয়ে বিভ্রান্তির নজির বহু রয়েছে। এ জন্য অনেকের এ দিন পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি।
আরও একটি সমস্যা হল পরীক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব। যেমন, নৈহাটির পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছে সন্দেশখালিতে বা দমদমের পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছিল হিঙ্গলগঞ্জে। যানবাহন হিসেবে তাঁদের যেমন বাস, ট্রেন, ভ্যান বা ট্রেকারে চাপতে হয়েছে, তেমনই পেরোতে হয়েছে নদী। এতে দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
এর উপরে রয়েছে বিভিন্ন রাস্তায় যানজট এবং যানবাহনের অভাব। তা ছাড়া, যে সব যানবাহন মিলেছে, তাতেও উপচে পড়েছে ভিড়। বনগাঁ এবং হাবরা শহরের যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এ দিন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের চাপে যশোহর রোডের যানজট ভয়াবহ আকার নেয়। বনগাঁ-শিয়ালদহ বা বারাসত-হাসনাবাদ শাখার ট্রেনগুলিতে দাঁড়ানোরও জায়গা ছিল না। বহু পরীক্ষার্থী ট্রেনে উঠতে পারেননি। অনেকে ভিড়ের চাপে প্ল্যাটফর্মেই পড়ে গিয়ে চোট পান। বহু পরীক্ষার্থীকে ট্রেনে ঝুলতেও দেখা গিয়েছে। ভিনের জন্য ট্রেনে উঠতে না পেরে ক্ষিপ্ত পরীক্ষার্থীরা বারাসত-হাসনাবাদ শাখার সন্ডালিয়া স্টেশনের কাছে এবং বারাসত স্টেশনে দু’দফায় প্রায় দু’ঘণ্টা রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা অতিরিক্ত ট্রেনের দাবি তোলেন। অবরোধের জেরে বনগাঁ ও বারাসত মহকুমার বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা দেরিতে পৌঁছন। সুযোগ বুঝে বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়ির চালকেরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। সরকারি বাসের বিশেষ দেখা মেলেনি। দেগঙ্গা এলাকায় একটি গাড়ি উল্টে গেলে চার পরীক্ষার্থী জখম হন। ট্রেনে ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যারাকপুরের পারমিতা দাস নামে এক পরীক্ষার্থীকে বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ১২৫টি। দূরত্বের কারণে অনেক পরীক্ষার্থীই সময়ে পৌঁছতে পারেননি। কাকদ্বীপ মহকুমায় ২৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র করা হয়েছিল। সেখানেও অনেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা খুঁজে পেতে নাকাল হন। একই ছবি ক্যানিংয়েরও। কোনও কোনও স্কুলে পরীক্ষার্থীর তুলনায় কম সংখ্যক প্রশ্নপত্র পাঠানোরও অভিযোগ রয়েছে। চম্পাহাটির একটি স্কুলে নির্ধারিত সময়ের আগে উত্তরপত্র জমা নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে স্কুলের সামনে ধর্না দেন পরীক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে অবস্থা সামাল দেয়।
|