সনৎ-এর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। ও যে রকম গান করত, ওর যা স্টাইল ছিল, যা ঘরানা ছিল তা আজ আর কেউ করে না। ওর জায়গাটা ফাঁকাই থেকে যাবে চিরকাল।
আজকের দিনে নানা টুকরো-টুকরো কথা মনে পড়ছে। হেমন্তদার পরের প্রজন্মের স্বর্ণযুগের শিল্পীরা শ্যামল, মানবেন্দ্র, সতীনাথ, নির্মলেন্দু, তরুণ সবাই চলে গিয়েছে। এ বার সনৎও চলে গেল। আমরা সবাই বন্ধু ছিলাম। আজ আমি বড় একা হয়ে গেলাম। স্বর্ণযুগের মান্নাদা আছেন ঠিকই। কিন্তু তিনিও খুব অসুস্থ। থাকেন বেঙ্গালুরুতে। জমিয়ে গল্প করার মতো লোক আর কোথায়!
বিশেষ ভাবে মনে পড়ছে স্বর্ণযুগের জলসার কথা। তখন সারা রাত গানের জলসা হত। এক এক দিনে আমরা তিনটে, চারটে করে জলসায় অংশগ্রহণ করতাম। দল বেঁধে গান গাইতে যেতাম। সে সব দিন ভোলার নয়। আমার সঙ্গে সনতের বন্ধুত্ব ছিল প্রগাঢ়। সনৎ ‘এক এক্কে এক’ এই গানটা জলসায় খুব করত। এই গানটা খুব বড় ছিল বলে আমি ওকে বার বার বলতাম, খবরদার জলসায় গিয়ে নামতা পড়তে শুরু করবি না। ছোট ছোট গান কর। ও আমার কথা শুনে খুব হাসত। জলসার মাঝেই ছোট ছোট খুনসুটি, মজা চলত সব সময়ে। |
মনে পড়ে সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমার শ্যুটিংয়ের কথা। সে এক মজার অভিজ্ঞতা। ‘আমার এই যৌবন’ এই গানটা গাইতে হবে জানতাম। কিন্তু গিয়ে দেখি শ্যামল, মানবেন্দ্র, সনৎ সবাই মেক আপ করে বসে রয়েছে। কী ব্যাপার? শুনলাম শুধু গান গাওয়াই নয়, গান গাওয়ার ছবিও মুভি ক্যামেরায় তোলা হবে। রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি। গানটা তো আমাকে দিয়েই শুরু হওয়ার কথা। সনতরা আমাকে বলল, যা মেক-আপ করে আয়। গানের শ্যুটিং হবে। আমি মেক-আপ করার নামে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছিলাম। তাই সিনেমাতে ওই গানটায় ওদের দেখা গেলেও আমাকে আর দেখা যায়নি।
অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিল সনৎ। আজকের যুগেও ওর জনপ্রিয়তা যে কমেনি, তা এ দিন রবীন্দ্র সদনে এসে বুঝলাম। ওকে শেষ দেখা দেখতে রবীন্দ্র সদনে প্রচুর গুণমুগ্ধের ভিড়। এ যুগের নতুন শিল্পীদেরও দেখলাম ওঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। সকালে খবর পেয়ে বালিতে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানেও দেখি ওর গুণমুগ্ধরা ওঁকে শেষ দেখা দেখতে এসেছিলেন।
এখন নতুন যুগের নতুন শিল্পীরা এসেছেন। এঁদের অনেকেই খুব ভাল গান করেন। অনেকেরই কণ্ঠসম্পদ চমৎকার। তবে সনৎ-এর মতো স্টাইলে, ওর ঘরানায় আর কেউ গাইবে না। |