|
|
|
|
হুল্লোড় |
গাড়ি পার্টি মৌজ মস্তি |
বুকিং-এর ঝামেলা নেই। নেই মোটা টাকা খসার ভয়ও।
এ বার গাড়িতেই হয়ে যাক না
বিন্দাস পার্টি।
সঙ্গী বন্ধুবান্ধব আর হুল্লোড়। লিখছেন সুচন্দ্রা ঘটক |
অফিস শেষে ঝটপট বদলে ফেলা ফর্মালস। বাকি প্ল্যান তো হয়ে গিয়েছিল সপ্তাহের শুরুতেই।
কিছু ক্ষণেই গাড়ি সরগরম আরও দু’তিন জন বন্ধুর পার্টি-স্পিরিটে। সকলে জড়ো হতেই হাতে হাতে ঠান্ডা একটা ওয়েলকাম ড্রিঙ্কের ক্যান। সঙ্গে পছন্দের মিউজিক। মুডটা তাতেই তৈরি। আস্তে আস্তে বাড়ছে স্পিড। অফিসপাড়া, শহুরে ব্যস্ততার অলিগলি, নাইটক্লাব, পাব, রেস্তোরাঁ ছাড়িয়ে সোজা হাইওয়েতে। গাড়ি ছুটল এ বার প্রায় বিদ্যুৎগতিতে। সারা সপ্তাহের ব্যস্ততা, স্ট্রেস, কাজের চাপ, ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেবে রাতভর এই লং ড্রাইভ। ভোর পর্যন্ত গাড়িতেই চলবে হুল্লোড়। রোদের তাপ বাড়ছে বলেই কি দমে থাকবে পার্টি-অ্যানিম্যালরা? সপ্তাহভর কাজের পরে ডি-স্ট্রেস করার ব্যবস্থা তো করতে হবে নিজেকেই। আর বন্ধুরা তো আছেই সঙ্গ দিতে। গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। বসন্ত শেষের হাওয়ায় আধ ঘণ্টাতেই বদলে যাবে মেজাজ।
বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পিয়া জানান, শীত চলে গেলে আর নাইটক্লাব বা অন্য কোনও পার্টি স্পটে যেতে সব সময় ভাল লাগে না। বলেন, “একেই এত টায়ার্ড হয়ে যাই অফিসে। তার পরে সেজেগুজে আর ভিড়ভাট্টা, চেঁচামেচির মধ্যে যেতে ইচ্ছে হয় না।” এই ধরনের কার-পার্টির সেটাই মজা। বেশি সাজগোজের বালাই নেই। যত বড় গাড়ি, তত বেশি বন্ধুবান্ধবকে ডেকে নিলেই হল, মত পিয়ার সহকর্মী সনিয়ার।
কোন ফাঁকে গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমের ভলিউমটা কমতে কমতে হঠাৎ বন্ধই হয়ে গিয়েছে। সারা সপ্তাহের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনায় তখন গমগম করছে চারপাশটা। গাড়িটা দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে উঠতে না উঠতেই অফিস পলিটিক্স, ফ্যামিলি পলিটিক্স, কেরিয়ার প্ল্যান, ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের কচকচানি থামিয়ে দিল এক কোণে চুপ করে বসে থাকা বান্ধবীর গলার হাল্কা গুনগুন সুর। ফুরফুরে হাওয়ায় মিশে যেতে থাকে একের পর এক ডিলান থেকে বলিউড-রবীন্দ্রসঙ্গীত-বাংলা ব্যান্ড। |
|
হঠাৎ কোনও বন্ধুর হতাশ কণ্ঠে শোনা যাবে, “ইস্! একটা গিটার দরকার ছিল। রাস্তার ধারে বসে গান-বাজনা হত!” দুঃখের কী আছে, সে ব্যবস্থাও তো হয়ে গিয়েছে। গাড়ি থামিয়ে ডিকি থেকে বেরিয়ে এল একটা সবুজ গিটার। চার-পাঁচ জনের আড্ডা তখন কোলাঘাট থেকে মিনিট চল্লিশেক দূরে। এক রাস্তার ধারে। রাত তখনও খুব বেশি নয়। মোটে বারোটা বাজতে পাঁচ। রাস্তার ও পারে বাড়িগুলোর আলো আস্তে আস্তে নিভে যেতে থাকে পরপর। ওদের চোখের আশপাশে অবশ্য আসার সাহস নেই ঘুমের।
গানের ঘোর ভাঙে খিদের দাপটে। সঙ্গের চিপস, কেক, চকোলেটের স্টক তত ক্ষণে শেষ। কারও কারও তো জলদি কাজ শেষ করে অফিস ছেড়ে বেরোনোর তাগিদে পেটে কিছু পড়েনি দিনভর। কোনও মতে গাড়িতে উঠে, পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ট্রাকগুলোর মতোই দ্রুত গতিতে কোলাঘাটের কাছে এক ধাবা পর্যন্ত পৌঁছনো। ব্যস্ত রাস্তার ধারে তখনও দিব্যি চনমনে রুটি-মাংসের বিক্রি। ট্রাক ড্রাইভার থেকে বাসযাত্রীতে রীতিমতো সরগরম এলাকা। নির্জনে বন্ধুতার আমেজ সে দাপটে উধাও। মন তখন পাঁচমিশেলির আনন্দে।
কিছু ক্ষণের ব্রেকের পরে ফের নতুন উদ্যমে চলতে শুরু করে গাড়ি। ঠিক হয়ে যায় ফেরা হবে দিঘা ছুঁয়ে। ভোর ভোর পৌঁছে সমুদ্র সৈকতে ব্রেকফাস্ট হবে চায়ের দোকানের ডিম-টোস্ট। হুল্লোড়ের ফাঁকে স্টিয়ারিংয়ে মাঝেমাঝে হতে থাকে হাতবদল। নিজেদের গানের তালেই কখনও কখনও নেচে ওঠে ব্যাক সিটে বসা বন্ধুর দল। কে বলবে ঘড়িতে তখন হয়তো রাত তিনটে অথবা তারও বেশি।
বেশি দূরে না গিয়ে কখনও আবার বাড়ির আশপাশেও পার্টি জমিয়ে নেয় জেন-ওয়াই। গাড়ি গোলাকারে ঘুরতে থাকে সল্টলেক-রাজারহাটে। কখনও অলিগলি দিয়ে চিৎপুর, রেড রোড, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট। আইটি কর্মী স্বাগতম জানান, সারা সপ্তাহ আইটি সেক্টরেই বদ্ধ থাকে মনটা। কখনও নিজের শহরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলেও সময় হয় না। তাই সপ্তাহান্তে মাঝরাতে মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ে কলকাতা শহরটাই ঘুরে দেখেন তাঁরা।
কিছু ক্ষণ শহরের মধ্যে ঘোরাফেরা করে মাঝরাতে কোনও এক ধাবায় বসে ডিনার। তার পরে গাড়িতে জোরে গান চালিয়ে আবার বাইপাস ধরে সোজা রাজারহাট রোড। আরও কিছুটা এগোতে চাইলে ব্যারাকপুর অথবা বারাসত। কয়েক পাক ঘুরে ভোর হওয়ার কিছু আগে কোনও এক ফাইভ স্টার হোটেলের লাউঞ্জে বসে কফি কিংবা আইসক্রিম। সূর্য ওঠার ঠিক আগে পৌঁছে যাওয়া গঙ্গার ধারে। ভাল করে আলো ফুটলে চা-কচুরি সেরে ক্লান্ত চোখে ফিরে যাওয়া ছুটির দিনের বাড়িতে। মন তত ক্ষণে টইটম্বুর গোটা সপ্তাহের অক্সিজেনে।
|
তবে থাকুক শুধু আনন্দটাই
• এমন পার্টিতে মাদক-দ্রব্য বাদ রাখুন, ড্রাইভ নিরাপদ হবে
• রাতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসুন, চালক যেন ক্লান্ত না হয়ে পড়েন
• মাঝরাতে হাইওয়েতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি
• চালকের আসনে বসা বন্ধুর উপরে চাপ না বাড়িয়ে, সকলেই রাস্তায় চোখ রাখুন
• বেরোনোর আগে অবশ্যই গাড়ি পরীক্ষা করে নিন |
|
|
|
|
|
|