পাহাড়ের পথঘাট থেকে মুখ ফেরাচ্ছে সিআরপিএফ।
কেন? সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘বিধির গেরো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিধি মেনে, আগাম আবেদন না করায় দার্জিলিং পাহাড়ে মোতায়েন ২ কোম্পানি বাহিনীকে জঙ্গলমহলে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিআরপিএফ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়মানুসারে, দেশের কোথাও সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন করা হলে সেখানে এক টানা ১৫ দিনের বেশি কাজ করতে পারে না তারা। পক্ষকাল পরেও ওই এলাকায় তাদের প্রয়োজন থাকলে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে সে ব্যাপারে আগাম (অর্থাৎ পনেরো দিনের মেয়াদ ফুরনোর আগেই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদন করতে হয়। ২৭ মার্চ সেই মেয়াদ ফুরিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সে ব্যাপারে কোনও তৎপরতা না থাকায়, নিয়ম মেনে তাই তাদের বাহিনী ফিরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে সিআরপিএফ।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহখানেক ধরে মহাকরণের শীর্ষ কর্তারা পঞ্চায়েত সংক্রান্ত চিঠি চালাচালি, বিতর্ক নিয়ে ব্যস্ত। এক শীর্ষ আমলার কথায়, “পঞ্চায়েত বিতর্কে পাহাড়ের কথা কারও মনেই ছিল না।” ফলে, সিআরপিএফের মেয়াদ বেড়ানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চিঠি দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। আর তারই খেসারত দিতে চলেছে সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় গত চার দিন ধরে পাহাড়ের রাস্তায় টহলদারি, কিংবা পুলিশের তল্লাশি অভিযানে সাহায্য করাও বন্ধ করে দিয়েছে সিআরপিএফ। উদ্বিগ্ন দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসন পাহাড়ে সিআরপিএফ’র উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাই তড়িঘড়ি মহাকরণে চিঠি পাঠিয়েছে। এ দিন দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালও জানান, সিআরপি যাতে পাহাড়ে আরও কিছুদিন থাকে সে জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকারও। মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়ে আরও কিছু দিন দার্জিলিং পাহাড়ে সিআরপিএফ মোতায়েন রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছে। তাঁদের আশা, পাহাড়ে সিআরপিএফ মোতায়েন রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রের সবুজ সংকেত মিলবে অচিরেই।
ঘটনাচক্রে, আজ, রবিবার দার্জিলিং সদরের গোর্খা দুখ নিবারণী সমিতির হলঘরে তৃণমূলের সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সভায় বেশ কয়েকজন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা-কর্মীর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথাও রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। চাপা-উষ্মার এই বাতাবরণে সিআরপিএফের টহলদারি ছাড়া মন্ত্রীর পাহাড়-সফরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জেলা পুলিশ দিতে পারবে কিনা, উঠছে সে প্রশ্নও।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি লেপচাদের অনশন প্রত্যাহার করিয়ে কালিম্পং থেকে ফেরার পথে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা হয়েছিল। যদিও গৌতমবাবুর দাবি, “পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্র রাখতে সবরকম পদক্ষেপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়বাসী কিংবা পর্যটকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”
আগামী ৫ এপ্রিল জিএনএলএফের প্রতিষ্ঠা দিবস। সে দিনই পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে মোর্চা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই দিনও গণ্ডগোলের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে না হলেও পাহাড়ে সিআরপিএফ মোতায়েনের প্রশ্নে রাজ্য তাই এখন মরিয়া। |