কোথাও ধুলো ঝড়, কোথাও তুমুল শিলাবৃষ্টি, কোথাও ঘনঘন বজ্রপাত। শনিবার দুপুর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ের দাপটে মৃত্যু হল ছয় জনের। রাস্তার উপরে গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিপর্যস্ত হল জনজীবন। শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাঠের ফসলেরও।
শনিবার বিকালে আসানসোলেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। জখম হয়েছেন প্রায় ১১ জন। তাঁদের আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতদের এক জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মহকুমা জুড়ে ব্যপক বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। বিপর্যস্তদের উদ্ধারের কাজে নামে দমকল। এ দিন বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ আসানসোলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি ও ধুলোর ঝড়ে গোটা এলাকা ঢেকে যায়। অনেকেই গাছের তলায় আশ্রয় নেন। হিরাপুর থানার তারকাটা ময়দান এলাকায় একটি গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক জন। ঝড়ের দাপটে তাঁদের উপরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে গাছটি। আশেপাশের লোক জন উদ্ধারের জন্য ছুটে আসেন। দমকলেও খবর পাঠানো হয়। ঝড় থামতেই দমকল কর্মীরা ক্রেন ও গাছ কাটার লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় গাছের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন এক জন। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। আসানসোল শহর লাগোয়া ইসমাইলের গুরুনানক পল্লি এলাকায় দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায় রোশন শর্মা (১০) নামে এক বালক। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে সে বরফ কুড়োচ্ছিল। তখনই দেওয়াল চাপা পড়ে সে।
অন্য দিকে, মহীশিলা শীতলা কালীমন্দিরে ম্যারাপ বেঁধে কীর্তনের অনুষ্ঠান চলছিল। ঝড়ের দাপটে ম্যারাপ ভেঙে পড়ে জখম হন বেশ কিছু পুণ্যার্থী। তাঁদের আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আসানসোলের আজাদনগর এলাকার একটি বিয়েবাড়িতেও প্যান্ডেল ভেঙে আহত হন কয়েক জন। কালীপাহাড়ি-সহ শহরের একাধিক জায়গায় আরও কয়েকজন গাছ চাপা পড়ে জখম হন।
এ দিন ঝড়ের দাপটে একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে বলে জানান রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির আসানসোলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র মিতেশ দাশগুপ্ত। ঝড় থামার পরই বিদ্যুৎকর্মীরা বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজে নামেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকাতেই পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়নি।
এ দিকে দুপুরের ঝড়ে বজ্রপাতে বীরভূমেও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মুরারইয়ের পঞ্চহর গ্রামে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় রিঙ্কা রাজবংশীর (৬)। ঘটনার সময়ে সে বাড়ির বাইরে খেলা করছিল। তখনই বাজ পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় প্রিয়াঙ্কা। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এলাকার ৫-৬টি গ্রামের বহু বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাঠের ফসলেরও। বিকালে ময়ূরেশ্বরের ভাবঘাটি গ্রামে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে মাধাই বাদ্যকর (৫৬)। ঘটনার সময় মাধাইবাবু মাঠে চাষের কাজ করছিলেন।
এ দিন সকালেই আলু জমিতে জল দিতে গিয়ে বাঁকুড়ার ওন্দা থানার ভেদুয়াগ্রামে এক আলু চাষির মৃত্যু হয়। মৃতের নাম ষষ্ঠী রায় (২৫)। অন্য দিকে, সন্ধ্যায় ইসলামপুরের হাড়িভাঙায় বাড়ির সামনের উঠোনে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে প্রিয়া খাতুন (১৪) নামে এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর।
|
কাল থেকে রাজ্যে শুরু ট্রাক ধর্মঘট
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অতিরিক্ত মাল তোলা বন্ধ করা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের পারমিট-সহ চার দফা দাবিতে আগামী কাল, সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘটে সামিল হচ্ছেন রাজ্যের ১৮টি জেলার ট্রাক মালিকেরা। একই দাবিতে ২ এবং ৩ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে ধর্মঘট করবেন তেলের ট্যাঙ্কারের মালিকেরাও। ধর্মঘটের জেরে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ট্রাক রাস্তায় চলবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “রাজ্য সরকার ট্রাক মালিকদের সমস্যা মেটাতে সচেষ্ট। তা সত্ত্বেও যদি কেউ
জোর করে ধর্মঘট করে, তা হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।” ‘ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’ সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মজুমদার শনিবার অভিযোগ করেন,
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য পরিবহণ দফতর ওভারলোডিং বন্ধ করতে উদ্যোগী হচ্ছে না। পুরনো গাড়ি কিনলে মালিকের নাম পরিবর্তন করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। রাজ্য বা জাতীয় স্তরে পারমিট পেতে কালঘাম ছুটছে। তার উপরে রয়েছে পুলিশের জুলুম। সমস্যার সমাধানের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু দিন আগে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও হয়। সত্যজিতবাবুর দাবি, তাঁদের চার দফা দাবির সব ক’টি পূরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু জেলা ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছেন না। সেই কারণে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট হবে। ‘ক্যালকাটা গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন’-ও ধর্মঘটকে সমর্থন করছে বলে সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে। |