বাউল-গায়কদের ভাতা দিয়ে শেষ, আবার গানবাজনার উৎসব দিয়েই শুরু।
দুঃস্থ বাউল-শিল্পীদের ভাতা বিলিয়ে ২০১২-১৩ সালের আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে রাজ্য তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের। আর ২০১৩-১৪ সালের পরিকল্পনা বাজেট-ব্যয় শুরুই হচ্ছে গানমেলা দিয়ে।
দফতর সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে তাদের বাজেট ছিল ১১০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে বাউলদের ভাতা দিতে। এক দিন পরেই যে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হচ্ছে, তাতে দফতরের পরিকল্পনা বাজেট বেড়ে হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। তার মধ্যে গানমেলার জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ দফতর। এ ছাড়া রয়েছে স্পনসরদের অর্থ। সব মিলিয়ে বাজেট ঠিক কত, দফতরের কর্তারা তা নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে মহাকরণের খবর, গানমেলায় আড়াই-তিন কোটি তো উড়বেই।
মেলা ও অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়াও খরচ আছে সঙ্গীত-শিল্পীদের বিশেষ সন্মান প্রদর্শনে। দফতর সূত্রের খবর, সম্মান-প্রাপকদের তালিকায় এ বার বাংলাদেশের একাধিক গায়িকা। রুনা লায়লা ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নাম শোনা যাচ্ছে। এই বাংলার শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ রুমা গুহাঠাকুরতা। এ ছাড়া, গত বছর সাধারণ ভাবে সন্মানিত হওয়া কয়েক জন এ বার এক ধাপ উঁচুতে ‘মহাসম্মান’-এ ভূষিত হবেন। ৬ এপ্রিল গানমেলা-র সূচনা হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকার কথা। ১৩ এপ্রিল, সমাপ্তি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা নজরুল মঞ্চে।
এ বছর সময় পাল্টেছে গানমেলার। আগে বরাবরই, এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতার আসার পরে গত বছরও গানমেলা শুরু হয়েছে পয়লা বৈশাখ। এ বার প্রায় দশ দিন আগে মেলা শুরু করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই বদলের মধ্যে আরও একটা বদল রয়েছে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল মেলা শুরু হবে ৫ এপ্রিল। ওই তারিখের উল্লেখ করে কার্ডও ছাপা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরে আবার বদল। নতুন দিন ঠিক হয়েছে ৬ এপ্রিল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ৫ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই গানমেলা এক দিন পিছিয়ে গিয়েছে।
রীতি ভেঙে অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ পাল্টানোর নজির অবশ্য বর্তমান জমানায় আগেও দেখা গিয়েছে। গত বছর প্রয়াত বিধানচন্দ্র রায় ও জ্যোতি বসুর জন্মদিন রবিবার পড়ায় তার দু’দিন আগে, শুক্রবার মহাকরণে জন্মদিন পালন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছুটি থাকে বলে মহাকরণে নেতাজির জন্মদিন উদ্যাপনও আগেভাগে সেরে নিয়েছিল নতুন সরকার।
এ বার গান-মেলার দিন কেন এগিয়ে আনা হল?
সরকারি তরফে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। কয়েক জন আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের কথা বললেও, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কারণ, সরকার নিজেই ২৬ এপ্রিল ভোট চেয়েছে। নিয়মানুযায়ী, নির্বাচনী বিধি জারি হওয়ার পরে কোনও প্রচারমূলক কাজ করা যায় না। সে দিক থেকে দেখলে পয়লা বৈশাখের মতো ৬ এপ্রিলও নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যেই পড়ে যায়। ফলে সরকারের পক্ষে আলাদা করে পয়লা বৈশাখের বদলে ৬ এপ্রিলকে পছন্দের কারণ থাকতে পারে না।
তথ্যসংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্য অবশ্য দিন-ক্ষণ এগোনোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। বলেছেন, “পয়লা বৈশাখের দিন-ই যে গানমেলা শুরু করতে হবে এমন কোনও বাঁধাধরা ব্যাপার তো নেই। কেউ তেমন প্রতিজ্ঞাও করেনি। আমাদের লক্ষ্য হল বসন্ত-উৎসব এবং পয়লা বৈশাখের আশপাশে এই অনুষ্ঠান করা।
এ বছর দোলের পরে মেলা শুরু হচ্ছে ৬ এপ্রিল। শেষ হবে ঠিক পয়লা বৈশাখের এক দিন আগে। এতে সমস্যা হওয়ার কথাই নয়।” |