ভোটের ভবিষ্যৎ ঠিক হবে কোর্টেই, স্পষ্ট করল কমিশন
ত্রালাপে জট খুলল না। তাই ভোটের ভবিষ্যৎ ঠিক হতে চলেছে কোর্টের হাতেই।
শনিবার কমিশনকে ফের চিঠি দিয়েছে সরকার। তাতে সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে দু’দফায় ভোট করানোর পুরনো অবস্থানেই অনড় পঞ্চায়েত দফতর। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কত সংখ্যক পুলিশের ব্যবস্থা তারা করতে পারবে, তার কোনও হিসেব এই চিঠিতেও দেয়নি রাজ্য। উল্টে অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তি জারি না করলে পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে যাওয়ার যাবতীয় দায় কমিশনকেই নিতে হবে বলে কার্যত হুমকি দেওয়া হয়েছে সেই চিঠিতে। সোমবারই এই চিঠির জবাব দেবে বলে জানিয়েছে কমিশন। কেন তারা ভোটের বিজ্ঞপ্তি দিতে অপারগ, সে কথাই স্পষ্ট করে দেওয়া হবে সেই চিঠিতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে পঞ্চায়েত ভোট করানো সম্ভব হয়, সে জন্য এর পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নির্দেশ চাইবে তারা। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। রাজ্যের চিঠি পেয়ে কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “প্রায় আগের চিঠিই পাঠিয়েছে রাজ্য। সেই সঙ্গে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছে। দু’দফাতেই ভোট চেয়েছে।” কমিশন কি এখন আইনের পথেই হাঁটবে? সচিবের জবাব, “সব পথই খোলা রয়েছে।”
এই যদি পরিস্থিতি হয়, তা হলে আদালতেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।
ব্যস্ত। মহাকরণে নিজের ঘরে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
চলতি অচলাবস্থায় মহাকরণের অলিন্দে একটাই প্রশ্ন, গত আট মাস ধরে কমিশন-মহাকরণ আলোচনা কেন কোনও পরিণতি পেল না? প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ‘রাজ্যের’ নির্বাচন কমিশন বলে ভাবছেন। ফলে কমিশনের সাংবিধানিক এক্তিয়ারকে তিনি বিন্দুমাত্র আমল দিতে রাজি হননি। সমস্যার মূলে এই গোড়ায় গলদই। আমলামহল থেকে আইন বিশেষজ্ঞ, যাঁরাই মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে গিয়েছেন, তাঁরাই বকুনি খেয়েছেন। এমনকী, রাজ্যপালের পরামর্শ মেনে নেওয়ার কথা বলে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও শুক্রবার মমতার রোষের মুখে পড়েন। মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা পঞ্চায়েত সচিব সৌরভ দাসও কমিশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে না যাওয়ার জন্য প্রকারান্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে বারংবার বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কারও কথাই আমল দেননি তিনি। মমতার মনোভাব দেখে এক কর্তা বলেন, “আমার আর কী? যা বলবে করে দেব। উচিত-অনুচিত বলে কোনও লাভ হচ্ছে না।” মুখ্যমন্ত্রীকে যে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না, তা আমলামহল থেকে রাজ্যপালকে জানিয়েও দেওয়া হয়। তাঁরা জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী কোনও অবস্থাতেই কমিশনের সঙ্গে একমত নন। তিনি চান, রাজ্য যা ঠিক করবে তাই কমিশনকে মানতে হবে। অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায়ও সরকারকে জানিয়েছেন, মামলা হলে সরকারের বিপদ। আইনি দিক দিয়ে রাজ্যের অবস্থান শক্তিশালী নয়। ফলে সরকারের উচিত আদালতের বাইরে সমাধানের পথ খোঁজা। কিন্তু এজি-র কথাতেও কান দেননি মুখ্যমন্ত্রী।
কমিশনের সঙ্গে সরকারের মূল দ্বন্দ্বের জায়গাটা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট করানো। সে সম্পর্কে এ দিনও মুখ খোলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। চূড়ান্ত চিঠি দেওয়ার আগে তিনি মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পঞ্চায়েত সচিবকে নিয়ে বৈঠক করেন। পরে সুব্রতবাবু জানান, তাঁরা যে শেষ চিঠিটি পাঠিয়েছেন, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কোনও কথাই নেই। তাঁর বক্তব্য, ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য খরচ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সেই টাকার সংস্থান হবে কোথা থেকে? রাজ্যের হাতে কত কোম্পানি পুলিশ রয়েছে, সে সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর কত কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ লাগবে, তা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা শুরু হবে। কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি না করলে কত দিনের জন্য পুলিশ লাগবে তা-ও নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না। ওরা বিজ্ঞপ্তি জারি করুক। তার পর বাইরের রাজ্য থেকে পুলিশ আনার চেষ্টা করব।”
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
কমিশনের সচিব জানিয়েছেন, লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের সময় যেমন কয়েক দিন আগে থেকে পুলিশি টহল দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, পঞ্চায়েত ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে তেমনই করতে চেয়েছিল কমিশন। রাজ্য যদি সশস্ত্র পুলিশের পরিমাণ স্পষ্ট করে না জানায়, তা হলে কমিশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে কী ভাবে? কমিশন সূত্রে খবর, জেলাগুলি থেকে যে তথ্য কমিশনের হাতে পৌঁছেছে, সেখানেও স্পষ্ট, নির্বাচনে প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিটি জেলাতেই সশস্ত্রবাহিনী কম রয়েছে। তাই তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কোনও আপস করতে রাজি নয়।
এর পরে কী হবে? সুব্রতবাবুর কথায়, “এর পর নির্বাচন হবে কি না, তা বলার মালিক আমি নই। আমরা নোডাল এজেন্সি। বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। এখন সব কমিশন বলতে পারবে।” আপনারা কি মামলায় যাবেন? পঞ্চায়েতমন্ত্রীর জবাব, “আমরা কোনও মামলায় যাব না। কেউ যদি যায়, তা হলে তা লড়ব। আমাদের পক্ষে সওয়াল করার জন্য আইনজীবীও ঠিক হয়ে আছে।”
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে কেন রাজি হচ্ছে না রাজ্য? রাজ্য সরকারের একটি মহলের বক্তব্য, সরকার কখনও এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারে না। কারণ, তা হলে মনে হবে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সামলানোর ক্ষমতা সরকারের নেই। কিন্তু বিরোধী পক্ষে থাকাকালীন তৃণমূলই তো কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করত? এর জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই কাণ্ড সত্ত্বেও ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে হয়নি। আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইনি।”
একই সঙ্গে গরমে ভোটের প্রসঙ্গও তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সুব্রতবাবু এ দিনও বলেছেন, “প্রথমে এক দফায় ভোট চেয়েছিলাম। শীতে ভোটের কথা বলেছিলাম।” আর মুকুলবাবু তো আরও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আরও ধারালো আক্রমণ শানিয়েছেন। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “গরমে ভোট করতে গিয়ে একটা মানুষেরও যদি মৃত্যু হয়, তা হলে সেই মৃতদেহ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে যাব। জিজ্ঞাসা করব, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?” তাঁর বক্তব্য, “এক জন মানুষও খুন হলে রাজ্য সরকারকেই দায় নিতে হবে। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু তো ঠেকানোই যায়!”
শাসক দল ও সরকারের এই যৌথ চাপের মুখে কী বলছে কমিশন? মুকুলবাবু যে দেহ নিয়ে কমিশনের দফতরে যাওয়ার কথা বলেছেন, তার কোনও জবাবে কমিশন সূত্রে দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চিঠিতে যখন জট খুলছে না তখন আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর গতি কী? মুকুলবাবু অবশ্য বলেছেন, “আমরা দায়িত্বশীল দল। তাই আমাদের এ ব্যাপারে আদালতে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।” আর যদি কমিশন যায়? তাঁর কথায়, “কেউ আইন-আদালতে গেলে যাবেন। সেটা তাঁর ব্যাপার।”
বিজেপির রাহুল সিংহ অবশ্য বলেছেন, “আমরা কমিশনকে বলেছি, নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকুন। তাঁরা যদি সরকারের কাছে নতি স্বীকার করেন, তা হলে আমরা মামলা করব।” আর এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর বক্তব্য, “মূল উদ্দেশ্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। তার জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে হবে। তৃণমূল কেন সিপিএমের কায়দায় ভোট করাতে চাইছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.