‘ওয়ানা বি মাই ছম্মক ছল্লো...’ গানটা তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিং খানের ‘রা ওয়ান’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা তো বটেই। আন্তর্জাতিক র্যাপস্টার অ্যাকনের গলায় হিন্দি র্যাপ, সঙ্গে বলিউড বাদশার নাচ!
কিন্তু সে তো ৭০ মিলিমিটার পর্দায় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। যদি চোখের সামনেই কোনও বিখ্যাত র্যাপস্টার বাজিয়ে দেন নিজের ‘বিখ্যাত’ কম্পোজিশন, আর তার সঙ্গে যদি থাকে ‘লাইভ এস আর কে অন দ্য ফ্লোর’ কেমন হয়?
মন্দ নয় নিশ্চয়ই।
অ্যাকন নন। পিটবুল। ইনিও র্যাপস্টার এবং আন্তর্জাতিক। আর ‘ছম্মক ছল্লো’ নয়। এ বার ‘হে বেবি, গেট অন দ্য ফ্লোর’ কিংবা ‘আই নো ইউ ওয়ান্ট মি’। ভিন্ন র্যাপস্টার, ভিন্ন প্রেক্ষাপট। শুধু অভিন্ন ভারতবর্ষের বিনোদনের সূচক। শাহরুখ আছেন, থাকবেনও যথারীতি ‘কোহিনুর’ হয়ে। এবং আগামী ২ এপ্রিল শহরের ফুটবল-মক্কার বিনোদনযজ্ঞে যদি পিটবুলের গানের সঙ্গে কিং খানকে নাচতে দেখেন, যদি চোখের সামনে একই মঞ্চে ঘটে যায় হলিউড-বলিউডের ‘ফিউশন’ অবাক হওয়ার নেই। বিনোদনের শেষ পাতে ‘মেনু’টা কিন্তু এমনই রাখতে চাইছেন সংগঠকেরা। |
চলছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া। শনিবার, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
দুপুর ২টো। চড়া রোদ্দুরকে তুড়িতে উড়িয়ে একঝাঁক উনিশ-কুড়ি হাতে ফ্ল্যাগ নিয়ে ছুটছে অদ্ভুত ভঙ্গিমায়। রিহার্সাল চলছে। একটু দূরে ঝাঁকে ঝাঁকে সবুজ ছাতা। নাচের ‘প্রপ্স’ হিসেবে যা ব্যবহার হয় আর কি। ব্যাকড্রপে বিশাল স্টেজ। মাপটাও শোনা গেল। ৩০০ ফুট মাত্র! বিশাল স্টেডিয়ামের কোথাও তো আর এক ইঞ্চিও ফাঁকা নেই। সারি সারি চেয়ার, অতিকায় বেলুন, কোনওটায় আবার আইপিএলের লোগে আঁকা...।
যুবভারতী আজ সাজছে। কাঠামো প্রস্তুত। শুধু ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ই যা বাকি।
“ওটা শাহরুখ এলেই অর্ধেক হয়ে যাবে,” শনিবার দুপুরে বলছিলেন সংগঠকদের মহাকর্তা মহম্মদ মোরানি। দম ফেলার ফুরসত নেই। বাকি তো আর দু’দিন। “আমরা ঠিক করেছি অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে একটা চমক রাখব। পিটবুলের সঙ্গে এস আর কে-র একটা ফিউশন। পিটবুলকে অনুরোধ করেছি। শাহরুখকেও বলব,” গড়গড়িয়ে বলে চলেন মোরানি। শেষে আবার ফুট কাটলেন, “রিহার্সালের আর দেখছেন কী? রাতে আসুন। দেখবেন কী জিনিস!” কেমন সে জিনিস?
শনিবার রাতেই ইউরোপ থেকে ঢুকে পড়েছে ‘নটরাজ ডান্সার’-এর গ্রুপ। ভুল হল, ‘নটরাজ কাপল’। এঁরা স্পেন-নিবাসী এবং বিশ্বরেকর্ডজয়ী। ফ্লাইং ড্রামার, অ্যাক্রোব্যাটদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে এঁরাও একটা অংশে পারফর্ম করবেন। ৩০০ জনের একটা ডান্স ট্রুপ-কে আনা হচ্ছে, যাঁরা মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে ফেলবেন মঞ্চের নকশা। কখনও সূর্য। কখনও চাঁদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে উদ্বোধন, প্রীতমের সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। এটাও কিং খানের গলায়। আকাশ জুড়ে আতসবাজি। |
অলিম্পিক বা বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনে যা হয়। কিন্তু সেখানে কী অদ্ভুত ‘সৌরজগৎ’ কনসেপ্টের জন্ম?
আইপিএল বোধনের বক্স অফিসে যদি ‘সাইক্লোন’ তোলে শাহরুখ-ক্যাটরিনা-দীপিকা-পিটবুল নামক চর্তুমুখীর চৌম্বকক্ষেত্র, যদি হাঁ করে গিলতে হয় এঁদের স্টেজ পারফরম্যান্স, তা হলে মুগ্ধ করে দিতে পারে সংগঠকদের সৌরজগতের কনসেপ্ট। সূর্যকে যেমন চার দিকে ঘিরে থাকে নয় গ্রহ, ওই একই ধাঁচে আইপিএল লোগো আঁকা অতিকায় বেলুনকে ঘিরে থাকবে আরও ন’টা। কোনওটা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। কোনওটা কলকাতা নাইট রাইডার্সের। কোনওটার বা মালিক চেন্নাই সুপার কিংস।
এবং কোথাও দাঁড়িয়ে থাকবেন রিকি পন্টিং। কোথাও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। প্রত্যেকে নিজ-টিমের নামাঙ্কিত অতিকায় বেলুনের তলায়।
তবু এখানেই শেষ নয়। আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন উড়ে আসছে আইপিএল কাপ! যা গত বারের চ্যাম্পিয়ন ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীর সযত্নে বসিয়ে দেবেন মঞ্চে। ও সব দেখতে দেখতে মঞ্চের আশেপাশেও চোখ রাখতে হবে। কারণ বিশাল এলইডি বলে ততক্ষণে চলতে শুরু করে দিয়েছে আইপিএল ফাইভের ‘হাইলাইটস’!
সাধে আর সংগঠকেরা বলছেন, এমন অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতায় আজ পর্যন্ত স্নান করেনি কলকাতা? সাধে আর প্রহর গোনা চলছে মঙ্গলবারের মাহেন্দ্রক্ষণের। কাউন্টডাউন চলছে মহাতারকাদের শহরে আগমনের। রবিবার রাতে শাহরুখ। সোমবার ক্যাটরিনা। মঙ্গলবার সকালে দীপিকা। বিকেলে পিটবুল...।
অতঃকিম?
সিটবেল্ট বাঁধুন, আর কী? হাতে অমূল্য টিকিট থাকলে আইপিএলের ‘সৌরজগতে’ আপনিও স্বাগত! |