|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
২৪ মার্চ - ৩০ মার্চ |
|
• নেপিদ’ • ২৭ মার্চ মায়ানমারের রাজধানী নেপিদ’য় বার্ষিক সেনা দিবসের অনুষ্ঠানে সামরিক কর্তাদের পাশে বসে থাকতে দেখা গেল বিরোধী নেত্রী আউং সান সু চি’কে। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রী মায়ানমারের সংসদে সিকিভাগ আসন এখনও সেনাবাহিনীর দখলে, প্রশাসনে উর্দির দাপট এখনও প্রবল। কিন্তু দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী এবং প্রতিভূ সু চি সামরিক কর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন, কারণ তাঁর মতে এটাই শান্তিপূর্ণ উত্তরণের পথ, সমৃদ্ধিরও। তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডিমক্র্যাসির অন্দরে এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজে তাঁর এই নীতি নিয়ে সংশয় আছে, সেনা দিবসের উৎসবে তাঁর উপস্থিতি অবশ্যই সেই সংশয়ে ইন্ধন জোগাবে। তবে শান্তি ও সুস্থিতির জন্য দেশে অন্তত আপাতত সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন এই যুক্তি উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। ২০১১’য় প্রত্যক্ষ সামরিক শাসনের অবসান ঘটার পরে মায়ানমারে বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘর্ষ চলছেই।
|
গত বছরে পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গিয়ারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, গত কয়েক দিনে মধ্য মায়ানমারের বিভিন্ন শহরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর ৯৬৯ নামাঙ্কিত জঙ্গি বৌদ্ধ গোষ্ঠীর আক্রমণে দশ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া, ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধশত প্রাণ গিয়েছে। পুলিশ এই হিংসা দমনে ব্যর্থ, সেনাবাহিনীকে সরাসরি শান্তিরক্ষায় নামতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেন বলেছেন, মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষায় সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার যে অধিকার সংবিধান তাঁকে দিয়েছে, প্রয়োজন অনুসারে তার পূর্ণ ব্যবহার করতে তিনি সঙ্কল্পবদ্ধ। লক্ষণীয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে সু চি বিশেষ মুখ খোলেননি। সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, এই প্রশ্ন তুললেও তিনি সাধারণত উত্তর দেন না, ‘ঠিক জানি না’ বা ‘এটা জটিল প্রশ্ন’ গোছের না-জবাব দেন। মানবাধিকার আন্দোলনের নোবেলজয়ী প্রতিবাদ-প্রতিমা কি ক্রমশ স্থিতাবস্থার অধিষ্ঠাত্রী হয়ে উঠছেন?
|
• নিকোসিয়া (সাইপ্রাস) • ‘পিগ্স’-এর পর সাইপ্রাস। ইউরোপের আর্থিক ডামাডোলের সর্বশেষ শিকার। সে দেশের ব্যাঙ্কগুলো গত কয়েক বছরে যত ঋণ দিয়েছিল, তার পরিমাণ দেশের জাতীয় আয়ের সাড়ে আট গুণ! সেই ঋণের অনেকটাই আবার গিয়েছিল গ্রিসে। ফল, কেলেঙ্কারি। মার্চের মাঝামাঝি দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রায় লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছিল। আপাতত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আই এম এফ আপৎকালীন ঋণ দিয়ে পরিস্থিতি সামলেছে। সাইপ্রাসকে ই ইউ’তে রেখে দেওয়া হল। লাখ দশেক মানুষের এই ছোট্ট দেশটি নিয়েও এত মাথাব্যথা কেন? কারণ, সাইপ্রাসের আর্থিক গুরুত্ব যতই কম হোক, ইউরোর ভাঙন আটকানো অতি জরুরি ছিল। এই মুদ্রার মাহাত্ম্য দাঁড়িয়ে আছে একটাই বিশ্বাসের ওপর এর অংশী হলে যে কোনও সংকটই সমাধানযোগ্য। এই বিশ্বাস ভাঙলে ইউরো অঞ্চলে আরও ধস নামার সম্ভাবনা। সাইপ্রাসকে না বাঁচিয়ে ইউরোপের তাই গতি নেই।
|
ঘোষণা করেছেন, স্বাক্ষর করার সময়ে ‘পোপ ফ্রান্সিস’ লিখবেন না, ‘ফ্রান্সিস’-ই লিখবেন। ঘোষণা করেছেন, অন্যান্য পোপ-রা যেখানে থাকেন, সেই অ্যাপোসটলিক প্যালেস-এর অ্যাপার্টমেন্ট-এর থাকতে যাবেন না, তার বদলে ভ্যাটিকান-এর সান্টা মারিয়া হোটেলেই থাকবেন। আগের পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের লাল ভেলভেট চাদর গায়ে দিতে অরাজি হয়েছেন। বুয়েনস এয়ারেস-এ যেমন ছিলেন, তেমনই থাকবেন ভ্যাটিকানেও, বলে দিয়েছেন। তাঁকে ‘বিশপ অব রোম’ বলতে হবে, প্রথামতো ‘ভিকার’ বা ‘ক্রাইস্ট’ বলা চলবে না। বন্ধুদের বলে দিয়েছেন, ‘পোপ’ বলে সম্বোধন চলবে না, আগের মতো ‘বের্গোগলিয়ো’ বলেই ডাকতে হবে।
সব দেখেশুনে অনেকের মত, নতুন পোপ এখনও ঠিক ধাতস্থ হননি। বিশ্বের ১২ কোটি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ভার যে তাঁর উপরেই ন্যস্ত, সেটা ভাল করে এখনও তাঁর অন্তঃস্থ হয়নি।
তাই কি? তাঁর মধ্যে নতুন পদের মহিমা ঠিকঠাক প্রবিষ্ট হলেই তিনি এই সব বায়না থেকেই সরে আসবেন? মনে হয় না।
বরং মনে হয়, নতুন পোপ বোধহয় পোপ-ত্বের ধারণাটাতেই একটা বদল ঘটাতে চাইছেন। সাধারণ জীবন থেকে অনেকখানি দূরত্বে এই যে রাজকীয় মহিমময় অস্তিত্ব, তার রহস্যময়তা ও ঐশ্বর্যময়তা কমিয়ে পদটিকে মাটির কাছে নিয়ে আসতে চাইছেন। ‘কিপ ইট সিম্পল’। প্রধান বিশপ হিসেবে আর্জেন্টিনাতেও তো ‘সিম্পল’ জীবনই যাপন করেছেন ইনি, ডাউনটাউন-এর সাধারণ বাড়িতে থেকেছেন, ছোট্ট স্টোভ জ্বালিয়ে ঘর গরম করেছেন, বাসে করে যাতায়াত করেছেন। অন্যদের থেকে বরাবরই আলাদা লেগেছে ওঁকে। পোপ হিসেবেও আলাদা হতে চান এখন। এতে ওঁর নিজের ইমেজ-এর প্রশ্ন নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তার সঙ্গে আছে আরও গুরুতর একটা বিষয়। নতুন ধারার পোপের হাত ধরে এই প্রথম কোনও আধুনিক পোপ সাধারণ জীবনের কাছাকাছি চলে এলেন: ধর্মীয় শ্রেণিভেদের বিরুদ্ধে, প্রতীকী হলেও, এ এক বিরাট প্রতিবাদ। |