রাজ্যে তাদের থমকে থাকা প্রকল্প নিয়ে ফের আলোচনায় রাজি হলেও শিল্প গড়ার দায় যে মূলত সরকারেরই, সে কথা মনে করিয়ে দিল ইনফোসিস।
বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) তকমা পাওয়া নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই আটকে রয়েছে ইনফোসিসের প্রকল্প। বাম আমলে এই প্রকল্পকে সেজ তকমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তৃণমূল সরকারে এসে তাদের নীতিগত অবস্থানের যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেই সুপারিশ পাঠাতে রাজি হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সকলেই বলেছেন, তৃণমূল বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের বিরোধী। ফলে ইনফোসিসকে এই তকমা দেওয়া সম্ভব নয়।
শনিবার বণিকসভা সিআইআই-এর বার্ষিক আঞ্চলিক বৈঠক উপলক্ষে কলকাতায় এসে ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও এগ্জিকিউটিভ কো-চেয়ারম্যান কৃষ গোপালকৃষ্ণন বলেন, “প্রতিটি সরকার ও রাজনৈতিক দলেরই নিজস্ব অবস্থান থাকে। আমরা তা সম্মান করি। কিন্তু শিল্প গড়ার দায়ও সরকারেরই।” |
ইনফোসিসের তরফে বারবারই বলা হচ্ছে, সেজ তকমা না-পেলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের পক্ষে কলকাতার প্রকল্পকে লাভজনক করে তোলা সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের তরফে বিকল্প যে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা-ও যথেষ্ট নয় বলেই সংস্থার মত। এ দিন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসার কথা বললেও, বাণিজ্যিক লাভের সঙ্গে যে তাঁরা আপস করবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন গোপালকৃষ্ণন। তাঁর কথায়, “প্রকল্প নিয়ে নমনীয় বলেই আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি আমরা। রাজ্য ও ইনফোসিস, দু’পক্ষই কী ভাবে লাভবান হতে পারে, আমরা সেটাই দেখছি। এখানে লগ্নি করতে এখনও আমরা আগ্রহী।”
শিল্পমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও জানিয়ে দিয়েছেন যে ইনফোসিসকে সেজ তকমা দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। সিআইআই-এর অনুষ্ঠানে পার্থবাবুও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে গোপালকৃষ্ণনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেন তিনি। পরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সেজ দিতে পারব না। অন্য দিকে বাণিজ্যিক কারণে ইনফোসিস সেজ চায়। অবস্থানগত বিরোধ সত্ত্বেও দু’পক্ষই এই প্রকল্প গড়তে আগ্রহী। ফের আলোচনায় বসব আমরা।” তবে কবে সেই আলোচনা হবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকার ও সংস্থা, কেউই মুখ খোলেনি।
ইনফোসিস প্রকল্পের জট ছাড়াতে গত বছর সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে গোপালকৃষ্ণন-সহ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পার্থবাবু। বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায় ইনফোসিস। কিন্তু তার পরে গোটা বিষয়টাই ধামাচাপা পড়ে যায়। কারণ, সেজ-এর সমান লাভজনক বিকল্প আর্থিক প্রস্তাব দিতে পারেনি রাজ্য। অন্য দিকে, বিশ্ব বাজারে মন্দার জন্য সম্প্রসারণ নিয়ে তেমন আগ্রহ ইনফোসিসেরও ছিল না। ফলে ২০১১-র নভেম্বরে রাজারহাটে ৫০ একর জমি হাতে পেলেও সেখানে এখনও পর্যন্ত একটি ইটও গাঁথেনি ইনফোসিস। ইনফোসিস-কর্তা এ দিনও জানান, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বৃদ্ধি ঢিমেতালে চলছে। ফলে সম্প্রসারণের তাড়া নেই। |