|
|
|
|
ভাড়া বাড়াতে দরবার |
দুর্ভোগ বাড়িয়ে আরও বাস উধাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকার ভাড়া বাড়াচ্ছে না। তাই এমনিতেই মাথার উপরে লোকসানের বোঝা। তার উপরে টানা ছুটির মধ্যে একটি মাত্র কাজের দিনে রাস্তায় যাত্রী কম। তাই আগাম ক্ষতির আশঙ্কা করে বৃহস্পতিবার অধিকাংশ বেসরকারি বাসই বেরোল না রাস্তায়। আর দিনভর এর মাসুল গুনতে হল যাত্রীদের। ভ্যাপসা গরমে মোড়ে মোড়ে হাপিত্যেশ করে তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বাসের অপেক্ষায়।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র নিজেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রায় ৭০ বেসরকারি শতাংশ বাস বসে গিয়েছে। যে-ক’টি বাস চলছে, তারও অধিকাংশ এ দিন রাস্তায় বেরোয়নি। কেন? বাস-মালিকেরা বলছেন, “গত কয়েক মাসে ডিজেলের দাম আরও বেড়েছে। বাস চালিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে লোকসানের পরিমাণ। এই অবস্থায় কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।” পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু অবশ্য এই বক্তব্য মানছেন না। তাঁর কথায়, “সবাই ছুটির মুডে। সেই জন্য রাস্তায় বাসও কম।”
বাস-মালিক সংগঠনের নেতারা অবশ্য মন্ত্রীর যুক্তি মানতে নারাজ। মিনিবাস কো-অপারেটিভ কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, “এমনিতেই বাস চালিয়ে ক্ষতি হচ্ছে। এ দিন রাস্তায় যাত্রী-সংখ্যা কম ছিল। তাই বাস চালালে লোকসান আরও বাড়ত। তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন প্রায় শ’তিনেক কম মিনিবাস বেরিয়েছে।” আর জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সকালে অফিসের সময় কিছু বাস বেরিয়েছিল। কিন্তু বেলা যত বেড়েছে, কমে গিয়েছে যাত্রী-সংখ্যা। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাস্তায় বাসও কমেছে।
এই অবস্থার জন্য তপনবাবু দায়ী করেছেন রাজ্য সরকারের নীতিকেই। তাঁর বক্তব্য, নভেম্বরের পর থেকে ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটার-প্রতি দু’টাকারও বেশি। বেড়েছে যন্ত্রাংশ, মোবিল এবং বিমার কিস্তির খরচও। অথচ তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার। ফলে রাস্তায় কোনও ভাবে যাত্রী-সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেই মালিকেরা আর বাস বার করতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবুকে চিঠি দিয়ে বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। সরকার ভাড়া না-বাড়ালে খুব শীঘ্রই রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।”
শুধু বেসরকারি বাস নয়, এ দিন ছুটির হাওয়ায় রাস্তায় সরকারি বাসও কম ছিল। বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, অন্যান্য দিনের থেকে এ দিন প্রতিটি সংস্থারই গড়ে ৫০টি করে কম বাস রাস্তায় নেমেছে।
ভাড়া বাড়ানোর দাবি নিয়ে এ দিন পরিবহণমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও। ওই সংগঠনের নেতা সুব্রত ঘোষ বলেন, “পরিবহণের সব ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়লেও আমাদের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। পরিবহণমন্ত্রীকে ১ বৈশাখ পর্যন্ত সময় দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে ভাড়া না-বাড়ালে ধর্মঘটে যাব।”
রাজ্য সরকারের তাবড় মন্ত্রী-আমলারা লাক্সারি ট্যাক্সিই ব্যবহার করেন। লাক্সারি ট্যাক্সি ধর্মঘটে গেলে সরকারের বহু মন্ত্রী-আমলা গাড়িই পাবেন না বলে পরিবহণ সূত্রের খবর। সংগঠনের নেতাদের দাবির ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রী নিয়ে এ দিন বলেন, “ওঁদের বক্তব্য শুনেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি তো একা সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। মন্ত্রিগোষ্ঠীতে আলোচনার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ |
|
|
|
|
|