ফের তরুণীর শ্লীলতাহানি। ফের শিরোনামে বারাসত। বুধবার, দোলের দিন বারাসতের সুকান্তনগরে প্রথম বর্ষের এক কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে তিন যুবকের বিরুদ্ধে। বারাসত থানায় অভিযোগও দায়ের হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। শুধু বারাসত নয়, হুগলির উত্তরপাড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরেও রং দেওয়ার অছিলায় শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনটি ক্ষেত্রেই বাধা দিতে গিয়ে মার খেতে হয়েছে প্রতিবেশী বৃদ্ধ বা দাদা ও স্বামীকে।
দোলের দুপুরে উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী শিবতলায় স্ত্রী-কে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় এক জাতীয় শু্যটারকে মাটিতে ফেলে পেটায় কিছু যুবক। বিবস্বান গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই শু্যটারকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান তাঁর বাবা ও মামাও। স্ত্রীকেও রেয়াত করেনি হামলাকারীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় চার জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সে দিন সন্ধ্যাতেই উত্তরপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা গেলেও তারা এলাকা ছাড়া। বিবস্বানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগে। তিনি বলেন, “স্ত্রী-কে পর্যন্ত মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারল ওরা। আমরা অসহায়।”
বারাসতের ওই কলেজ ছাত্রীর অভিযোগ, বুধবার দুপুরে বাড়ির সামনে একটি কলে তিনি জল আনতে গেলে তিন মদ্যপ যুবক তাঁকে রং দিতে আসে। তিনি দৌড়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে যান। ওই বাড়ির এক মহিলা ছাত্রীটিকে আড়াল করে রাখেন। তিন যুবক ওই মহিলাকে সরে যেতে বললেও। কিন্তু তিনি পথ আগলে যুবকদের চলে যেতে বলেন। তারা তাঁকে ধাক্কা মেরে জোর করে ওই ছাত্রীর হাত ধরে টেনে রং দেওয়ার অছিলায় তাঁর শ্লীলতাহানি করে। বাধা দিতে গিয়ে তাঁর পোশাক ছিঁড়ে যায়। সেই সময় ওই বাড়ির বৃদ্ধ গৃহকর্তা বেরিয়ে বাধা দিলে তিনিও মার খান। ওই বৃদ্ধের দুই ছেলে এবং প্রতিবেশীরা এসে পড়ায় অভিযুক্তেরা পালায়। জখম বৃদ্ধ বারাসত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার রাতে ছাত্রীর বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সুকান্তনগরে এসে অভিযুক্তদের খোঁজ পায়নি। তাদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।
বারাসতের মতোই চণ্ডীপুর থানার গড়গ্রামে জোর করে রং মাখানোর সময় এক কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে পাড়ার দুই যুবকের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালের ঘটনা। অভিযুক্ত দু’জন এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসাবে পরিচিত। তাঁরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লোকজনদের রং মাখাচ্ছিলেন। গ্রামের একটি বাড়ির লোকজন দরজা বন্ধ করে দেন। অভিযোগ, ওই দু’জন বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে রং মাখানোর অছিলায় এক কিশোরীর শ্লীলতাহানি করে। বাধা দেওয়ায় ওই কিশোরীর দাদাকে মারধর করা হয়। পুলিশ অভিযুক্তদের না ধরায় বিকেল ৪টে থেকে দিঘা-কলকাতা সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বারাসতের ঘটনাটিকে অবশ্য বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখছেন না স্থানীয় মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এই ঘটনা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সূচক। বছর দু’য়েক আগে এখানেই দিদির শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে রাজীব দাস নামে এক কিশোর খুন হয়। সম্প্রতি, শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক খুন হয়েছেন। চলতি ফেব্রুয়ারিতেও বারাসত থানার বামনগাছিতে দিদিকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে এক কিশোর গুরুতর জখম হয়েছে। কয়েক দিন পরে রাতে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হয়। ঘন ঘন এমন ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে না পারায় বারাসতের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। |