তাপ্পি দিয়ে আর তাঁদের ধাপ্পা দেওয়া চলবে না। রাস্তার ভালভাবে সংস্কার চাই। পাশাপাশি দ্রুত শেষ করতে হবে হাসনাবাদ ও পার হাসনাবাদের মধ্যে সেতুর কাজ। এমনই দাবিতে হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জের মধ্যে বরুণহাট অশ্বথ্বতলায় রাস্তা কেটে বিক্ষোভে সামিল হলেন এলাকার মানুষ।
মঙ্গলবার সকালে এর জেরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে হাসনাবাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কাজে বেরিয়ে চরম হয়রান হতে হয় সাধারণ মানুষকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোব ছড়ায় অন্যত্রও। রামেশ্বরপুর, স্কুল মোড়, হালদারপাড়াতেও রাস্তা কেটে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দফতরে যাওয়ার পথে বিক্ষোভকারীদের হাতে ঘেরাও হন হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিত্ বসু। ওই রাস্তা তাঁর অধীনে নয় জানানো পরে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়। বিশ্বজিত্বাবু বলেন, “পার হাসনাবাদ থেকে কাঠাখালি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা একেবারেই চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা নিয়ে এলাকা মানুষের বিক্ষোভ সঙ্গত। রাস্তা সারানোর জন্য অর্থের অনুমোদনও হয়ে গিয়েছে। অথচ পূর্ত দফতরকে বার বার বলা হলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।
|
বসিরহাট মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পারহাসনাবাদ থেকে লেবুখালি পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা সত্যিই যাতায়াতের অযোগ্য ছিল। সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জের কালীবাড়ি থেকে লেবুখালি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে। কালীবাড়ি থেকে কাটাখালি সেতু পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় তাপ্পি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কাটাখালি সেতুর অপর প্রান্ত থেকে পারহাসনাবাদ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা খুবই বেহাল।
বহুদিন সংস্কার না হওয়ায় যত্রতত্র বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ার পাশাপাশি রাস্তার ইট-পাথর উঠে গিয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। গাড়ি চলাচলও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনের ছবি। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা আরও গুরুতর। রাস্তার কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রোগীমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
আর এ সব কারণে ভালভাবে রাস্তা সারানোর জন্য দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাস্তা কেটে এ দিন প্রতিবাদে নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এ দিন বিক্ষোভে সামিল আজিজুল হক, ফজর আলি, পলাশ সর্দার কাকলি ঘোষরা জানালেন, ১০ কিলোমিটার এই খারাপ রাস্তার মধ্যে তিনটি পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ ছাড়াও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লক্ষাধিক বাসিন্দা যাতায়াত করেন। এটিই তাঁদের কাছে একমাত্র রাস্তা। অথচ দিনের পর দিন রাস্তার অবস্থা খারাপ হলেও প্রশাসন নির্বিকার। মাঝেমধ্যে তাপ্পি দিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু হয়নি। তার ফলে ভুগতে হচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে।
হাসনাবাদের বিডিও শ্যামলাল হালদার বলেন, “হিঙ্গলগঞ্জ কালীবাড়ি থেকে পার হাসনাবাদের মধ্যে রাস্তাটি মেরামতির জন্য ইতিমধ্যে ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতর কেন কাজ শুরু করছে না জানি না।”
তিনি আরও জানান, রাস্তার যা অবস্থা তাতে এখনই কাজ শুরু না করলে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য রাস্তা সংস্কারের কাজ আটকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও ভোগান্তিতে পড়বেন এখানকার মানুষ।
শুধু রাস্তাই নয়, এই এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে পারহাসনাবাদে কাটাখালির নদীর উপরে অসমাপ্ত সেতু নিয়েও। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর নতুন পূর্তমন্ত্রী এসে দু’বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমানে যে অবস্থা তাতে তা দূরঅস্ত। তাঁদের আরও অভিযোগ, আসলে ফেরিঘাটের লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের চক্রের কারণেই সেতু তৈরি নিয়ে টালবাহানা চলছে।
যদিও এ সব অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বসিরহাট মহকুমা পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারাং বলেন, “সেতুর দু’টি পিলারে ফাটল ধরা পড়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুর আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়াররা রিপোর্ট পাঠানোর পরে সেতু নির্মাণ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
তবে রাস্তা ও সেতুর বিষয়ে দেরির প্রসঙ্গে পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের বার বার চেষ্টা করা হলেও করা যায়নি। |