রাধাকৃষ্ণের সঙ্গেই সত্যপীর, সম্প্রীতির দোল মহেশপুরে
প্রায় দেড়শো বছরের লোকায়ত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী দাঁতনের মহেশপুর গ্রামের সত্যপীর উৎসবে এ বারও ভিড় উপচে পড়ল। শুক্লা একাদশী ও দ্বাদশীতে শীতলা পুজোর পরে ত্রয়োদশী ও চতুর্দশীতে সত্যপীরের পুজো। আর পূর্ণিমা ও তার পরের দিন দোল উৎসব। ছ’দিনের মহোৎসব গাঁথা একই সূত্রে। হিন্দু পুরানের দেব-দেবীর সঙ্গে লোকদেবতার পুজো দেখতে শুধু দুই মেদিনীপুরই নয়, সংলগ্ন ওড়িশা থেকেও বহু মানুষ যোগ দেন ভক্তিভরে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ১ ব্লকের আলিকষা গ্রাম-পঞ্চায়েত এলাকায় ১৮৬০-৭০ সাল নাগাদ শুরু হয় এই সত্যপীরের পুজো। তবে, উৎসবের সূচনা কে করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। দাঁতনের লোকসংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ মন্মথরায় গোরায় জানান, বেলিয়াবেড়ার প্রহরাজ বংশ বা গড়কৃষ্ণপুরের দেও বংশের কোনও জমিদার এই উৎসব চালু করেছিলেন। মহেশপুরের বুড়ো কাঁঠালতলা সত্যপীরের দরগা-আস্তানা। লোকমুখে শোনা যায়, স্থানীয় জমিদার কাছারিতে ভোজের এঁটো পাতা ফেলা হয়েছিল গাছের তলায়। তারপরেই গ্রামে সাপের উপদ্রব শুরু হয়। জমিদার স্বপ্নে দেখেন, দিব্যকান্তি এক সন্ত পবিত্র রমজান মাসে কাঁঠালতলায় তাঁর আস্তানায় এঁটো পাতা ফেলায় ক্ষুব্ধ। এরপরেই কাঁঠালতলায় মহা সমারোহে সত্যপীরের পুজো শুরু করেন ওই জমিদার। কেশিয়াড়ি থানার গগনেশ্বর গ্রাম থেকে এক ফকিরকে আনা হয়। ওই ফকির পরিবারই পুরুষানুক্রমে সেবা পুজো করে আসছেন।
সেই কাঁঠালতলা। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

আগে সত্যপীরের পুজো হত দু’দিন। পরে শীতলা ও রাধা-কৃষ্ণের পুজো শুরু হয়ে আগে-পরে। গ্রামবাসী শ্রীকান্ত গোরায়, মিহির প্রধান, অনাথবন্ধু প্রধানরা বলেন, “আত্মীয়-স্বজন ও দূর-দূরান্তের বাসিন্দাদের ভিড়ে গ্রামে এই সময় জমজমাট চারিদিক।” পুজোর দায়িত্বে থাকা শেখ কালু জানান, দু’দিনে কয়েক হাজার শিরনি চড়ানো হয়। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এলাকার মানুষ শিরনি, চাঁদোয়া, পোড়ামাটির হাতি-ঘোড়া, আতর, ধূপ, বাতাসা, সন্দেশ নিবেদন করেন। অনেকে মানত করেন দরগায় পাকা কলা বেঁধে। পুজো শেষ হয় রাতে। তারপর শুরু হয় পালাগানের অনুষ্ঠান। মালযমুনা গ্রামের পালাগানের শিল্পী পশুপতি রানা, আশুতোষ রানারা জানান, দু’রাত জেগে সেই গান শোনেন এলাকার আবালবৃদ্ধবণিতা।
উৎসব কমিটির কর্মকর্তা উমাকান্ত বারি, কানাইলাল গিরিরা বলেন, “জাত-পাতের গোঁড়ামি ছাড়িয়ে সম্প্রীতির বাতাবরণে ভক্তপ্রাণ মানুষজন একাকার হয়ে যান। এটাই আমাদের উৎসবের ঐশ্বর্য ও অহঙ্কার।” দাঁতনের বাসিন্দা অতনুনন্দন মাইতি বলেন, “শীতলা ও রাধা-কৃষ্ণের মাঝে সত্যপীরকে মধ্যমণি করে রেখেছেন এলাকাবাসী। সম্প্রীতির এমন নিদর্শন সত্যিই দুর্লভ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.