চড়াই নির্বাসিত মহানগর থেকে, কেনর উত্তর খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা
য়েক ফোঁটা জলে, চার সেকেন্ডে চড়ুই পাখির স্নান শেষ! খুব সাধারণ দৃশ্য। তবু মহানগরবাসী হলে এর উত্তর খুঁজতে মনের ভিতরে হাতড়াতে হবে। ‘চড়ুইভাতি’ বেড়েই চলেছে। কিন্তু শেষ কবে উঠোন থেকে চড়াইপাখিকে ভাত খুঁটে খেতে দেখা গিয়েছে, তাও ভাবতে হবে। খুব চেনা চড়াইয়ের দল আর বারান্দায়, টালির চালে বা উঠোনে আগের মতো দেখা দিচ্ছে না। রাজ্যের বড় শহরগুলিতে ক্রমশ কমতে থাকা চড়াই পাখির সংখ্যা, পরিবেশবিদদের চিন্তায় ফেলেছে। সম্প্রতি বিশ্ব চড়াই দিবসে গুয়াহাটি শহরে চড়াইয়ের সন্ধানে এই প্রথম সমীক্ষা শুরু হল। কমতে থাকা চড়াইয়ের সংখ্যা গুণেই ক্ষান্ত থাকবেন না পক্ষীবিদের দল। সেই সঙ্গে চড়াইয়ের বাসার চরিত্র বিশ্লেষণ করে শহরের আনাচে-কানাচে তাদের পক্ষে উপযুক্ত নকল বাসা বানাবার প্রকল্পও তাঁরা হাতে নিয়েছেন।
আরণ্যকের পরিবেশবিদ বিভূতিপ্রসাদ লহকরের মতে, কেবল ভারত নয়, দ্রুত নগরায়ন ও বাড়ির চরিত্র বদলের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চড়াই বসতির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রধানত যে কারণগুলিকে চিহ্নিত করেছেন সেগুলি হল: আজকাল তৈরি হওয়া আবাসন বা বাক্স ধাঁচের বাড়িতে উদ্বৃত্ত জায়গা আর ঘুলঘুলি থাকেই না। ফলে চড়াইয়ের বাসা বাঁধার সবচেয়ে পছন্দের জায়গাটিই হারিয়ে গিয়েছে। বাড়ি-কারখানা গড়ার তাগিদে গাছও নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। বাড়ছে কীটনাশকের ব্যবহার। ফলে ফসলে মুখ দিলেই মৃত্যু।
হারিয়ে যাচ্ছে চড়াইয়ের এই চিরন্তন বাসা। —নিজস্ব চিত্র
আগেকার দিনের মুদি দোকান বা গুদামঘর থেকে ছড়িয়ে পড়া শস্য চড়াইদের খাবারের প্রধান উত্‌স ছিল। বাড়িতেও ধান, গম, অন্যান্য শস্য বাছাই হত। কিন্তু বর্তমানে শপিং মল থেকে প্যাকেটবন্দি খাবার সোজা রান্নাঘরে পৌঁছচ্ছে। নেই কুলোর বালাই। নেই ছড়িয়ে থাকা শস্য। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়লেও চড়াইদের মুখের গ্রাস কমে গিয়েছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণ, তড়িত্‌-চৌম্বকিয় তরঙ্গের প্রভাবও চড়াইয়ের সংসারে বিপদঘণ্টি বাজাচ্ছে।
তাহলে উপায়? মানুষকে তো আর চড়াইয়ের স্বার্থে ধান, গম ছড়িয়ে রাখতে বা বাড়িতে ঘুলঘুলি তৈরি করতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিল্লোলজ্যোতি সিংহ বলছেন, “বাড়ির বাগান বা রাস্তার পাশে এমন গাছ লাগান যেখানে পাখি বাসা বাঁধতে পারবে। উঠোন বা ফাঁকা জায়গায় ‘নেস্ট বক্স’ও বসানো যেতে পারে।”
বিভূতিবাবু, হিল্লোলবাবু ও অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অনুকূল নাথ মিলে আপাতত, গুয়াহাটি শহরে চড়াইদের সংখ্যা মাপার কাজ শুরু করেছেন। আরণ্যক ও রাফোর্ড স্মল গ্রান্ট্স ফাউন্ডেশনের যৌথ অর্থানুকূল্যে উত্তর-পূর্বে এই প্রথম চড়াই শুমারি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ জানান, সমীক্ষক ত্রয়ী চড়াই পাখির বাসাও সংগ্রহ করবেন। তাদের বাসার চরিত্র কেমন তাও দেখা হবে। সেই অনুযায়ী চড়াইয়ের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ ও ঘর বাঁধার প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলি নির্ধারণ করা হবে।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় সেই উপকরণ দিয়েই গড়ে তোলা হবে নকল বাসা। বিভূতিবাবু জানান, চড়াই গণনার কাজটি নিয়মিত ব্যবধানে করে যাবেন তাঁরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.