বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে কংগ্রেস ক্রমশ নরম মনোভাব দেখানোয় উদ্বেগটা বাড়ছিলই। তার উপর নীতীশ কুমারও যে ভাবে কংগ্রেসকে বার্তা দিচ্ছেন, তাতে রীতিমতো চিন্তায় বিজেপি।
দীর্ঘ আট বছর ধরে দরবার করার পর অবশেষে বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হওয়ার আগে পি চিদম্বরম অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, কী ভাবে বিহারকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হোক। কেন্দ্র যে বিহারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত এবং সে জন্য প্রয়োজনে নীতিও বদলাতে পারে, গতকালই সেই বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। আজ পটনায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, “আশা করছি, এ বিষয়ে কেন্দ্র দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ রাজ্যের দাবি যুক্তিসঙ্গত।”
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নীতীশ ও কংগ্রেস নেতৃত্বের এই বন্ধুত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে শীর্ষ বিজেপি নেতারা। দল মনে করছে, নীতীশের দাবি মানার ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্র পরিকল্পিত ভাবে জেডিইউ ও বিজেপির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে। বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডি অবশ্য বলেন, “দু’দলের জোট অটুট। দু’দল এক সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে লড়বে।” কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যে ভাবে নীতীশের বিষয়ে কংগ্রেস ইতিবাচক সঙ্কেত দিচ্ছে, তাতে অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। তাই নীতীশকে ধরে রাখতে তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলিকে।
নীতীশ যে ভাবে কেন্দ্রকে বার্তা দিচ্ছেন, তা-ও ভাল ভাবে নিচ্ছে না বিজেপি। বাজেটে চিদম্বরম বিহারের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যের সংজ্ঞা বদলের কথা ঘোষণা করার পর কেন্দ্রের প্রশংসা করেছিলেন নীতীশ। কেন্দ্রের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এই নরম মনোভাবে ক্ষুব্ধ রাজ্য বিজেপির বক্তব্য, নীতীশ ভুলে যাচ্ছেন, তিনি এনডিএ-র শরিক। তিনি জোটধর্ম পালন করার বদলে বিপক্ষকে ক্রমাগত বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় তাঁরই মন্ত্রিসভার বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ এ দিন বলেন, “বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের ভাঁওতাবাজি। লোকসভার আগে নির্বাচনী চমক।”
কংগ্রেসকে নিয়ে অস্বস্তির পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী প্রশ্নে নীতীশের মনোভাব কী হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। মোদী-নীতীশ লড়াইয়ে ইন্ধন জোগাতেই কংগ্রেস বিহারের জন্য বিশেষ মর্যাদার তাস ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ বিজেপির।
নীতীশকে কাছে টানতে কংগ্রেসের এই মরিয়া চেষ্টার পিছনে ইউপিএ সরকারের দুর্বল হয়ে পড়াই বড় কারণ বলে ধারণা অনেকের। ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর ইউপিএ-সরকার এখন সংখ্যালঘু। যার সুযোগ নিচ্ছে মুলায়ম সিংহের দল। এই পরিস্থিতিতে সংসদ চালাতে আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পেতে চাইছে সরকার। তা ছাড়া নীতীশ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, যারা বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে পাশে থাকবে, লোকসভা নির্বাচনে তাকেই সমর্থন জানাবে জেডিইউ। তার পর থেকেই কংগ্রেসের একটি বড় অংশ বিহারকে সাহায্যের মাধ্যমে জেডিইউ-কে পাশে পেতে সক্রিয়। কংগ্রেসের বক্তব্য, এনডিএ-তে থাকলেও নীতীশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি জোটে এলে আখেরে কংগ্রেসেরই লাভ হবে।
তবে নীতীশের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিক কংগ্রেসের সঙ্গে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপির অনেকেই। দলের অন্যতম নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, কংগ্রেস এখন ডুবন্ত জাহাজ। একের পর এক জনবিরোধী নীতি ও দুর্নীতির ধাক্কায় বহু শরিকই তাদের ছাড়তে পারলে বাঁচে! বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কংগ্রেসের যা ভাবমূর্তি, তাতে নীতীশের মতো রাজনীতিকের তাদের সঙ্গে যাওয়া কঠিন।”
|