লিয়াকত কাণ্ডে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের অভাব যে ভাবে সামনে চলে এসেছে, অস্বস্তি কমাতে এ বার আসরে নামতে হল প্রধানমন্ত্রীর দফতর(পিএমও)কে। জঙ্গি হামলার পথ ছেড়ে দেশে ফিরতে চাওয়া কাশ্মীরি যুবকদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে পিএমও। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা যাতে আবার না ঘটে তা দেখতে জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এক সার্বিক নীতি তৈরি করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর।
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন প্রাক্তন জঙ্গিদের জন্য এক পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। তাতে বলা হয়, ’৯০-এর দশকে যাঁরা কাশ্মীর ছেড়ে পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন, সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাইলে তাঁদের সাহায্য করবে সরকার। ২০ মার্চ গোরক্ষপুর থেকে লিয়াকত শাহ ধরা পড়ার পর উপত্যকার পুলিশ দাবি করে, জঙ্গি সংস্রব ছেড়ে আত্মসমর্পণ করতেই পরিবারের সঙ্গে দেশে ফিরছিল লিয়াকত। সব তথ্য জেনেও তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। অন্য দিকে দিল্লি পুলিশ জানায়, হিজবুল মুজাহিদিনের এই জঙ্গি দোলের দিন দিল্লিতে একাধিক বিস্ফোরণের ছক কষেছিল।
দু’পক্ষের এই মতান্তরে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার আর্জি মেনে, লিয়াকতের তদন্তভার তিনি এনআইএ-র হাতে তুলে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের আসল চেহারাটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কী ভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের গোয়েন্দাদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব হতে পারে, উঠতে শুরু করে সেই প্রশ্নও। প্রায় তলানিতে ঠেকা আদান প্রদান বাড়াতে দু’পক্ষের আলোচনার উপরই এখন জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে ওমর আবদুল্লা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসে নতুন করে এক সামগ্রিক রূপরেখা তৈরি করা হবে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা। এ দিকে যাঁকে গ্রেফতার করা নিয়ে এত হইচই, সেই লিয়াকত শাহ জঙ্গি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতাতেই ফিরছিলেন বলে আজ দাবি করল একটি সূত্র। অতীতে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলায় নাম জড়িয়েছে কি না তা খুঁটিয়ে দেখে ২২৩ জনের এক তালিকা তৈরি করে উপত্যকার প্রশাসন। তাতে ৫১ নম্বরে লিয়াকতের নাম ছিল বলে ওই সূত্রটির দাবি।
এ সবের মধ্যেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর অবশ্য কমাননি জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। কাশ্মীরিদের বঞ্চনার পুরনো অভিযোগ গত কালই আবার করেছিলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লিয়াকতের পরিবারেরও। ওমরের কথায়, জঙ্গি হানার উদ্দেশ্য নিয়ে এলে লিয়াকত তার পরিবারকে নিয়ে আসত না। “এক হাতে স্ত্রী-মেয়েকে ধরা, অন্য হাতে অস্ত্র এমন কি কেউ কখনও দেখেছে,” প্রশ্ন তাঁর।
|