সম্পাদকীয় ২...
শুনিতে শিখুন
মালোচনা যে সর্বদাই শাসকের অসহ্য লাগে, দেশের আধুনিক শাসনপ্রণালীতে তাহার নিদর্শন ভূরি ভূরি। তেমনই কিছু নিদর্শন উদ্ধৃত করিয়া পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এক আলোচনাচক্রে মুক্ত চিন্তার অনুকূলে সওয়াল করিয়াছেন। তাঁহার অপেক্ষা ভাল আর কে জানিবেন সমালোচনার প্রতি শাসকের অসহিষ্ণুতার কথা? রাজ্যে একাধিক সাম্প্রতিক ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে রাজ্য প্রশাসনকে অভিযুক্ত করিয়া তিনি শাসক গোষ্ঠীর বিরাগভাজন হইয়াছেন। তাঁহার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ মানিয়া প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের শিকার ব্যক্তিদের মর্যাদার সহিত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসন করার নির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়াই সরকার ক্ষান্ত হয় নাই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও কমিশনারের এক্তিয়ার লইয়া অসম্মানসূচক মন্তব্য করিতে শুনা গিয়াছে। প্রখর আত্মমর্যাদাজ্ঞান সম্পন্ন কমিশনার কিন্তু তাঁহার বক্তব্যে সে সবের কোনও উল্লেখই করেন নাই। বরং দেশের অন্যান্য রাজ্যে শাসকের অসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্তগুলি সযত্নে তুলিয়া ধরিয়াছেন। ইহা তাঁহার উদারতা, সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারেরই পরিচায়ক।
প্রাচীন কালের রাজতন্ত্রে রাজার স্তুতি করার যে রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্ত ছিল, রাজারা নিজেরাও তাহাতে প্রায়শ বিরক্ত হইতেন। সে জন্যই সভাসদদের মধ্যেই বিদূষকদেরও স্থান করিয়া দেওয়া হইত। বিদূষকের সমালোচনা বা নিন্দা হয়তো বহুলাংশে ছদ্ম নিন্দা। হয়তো কখনওই তাহা রাজতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোকে প্রশ্ন করার ‘আহাম্মকি’ অনুমোদন করিত না। তবু নিরবচ্ছিন্ন স্তুতির মধ্যে যে প্রশ্নহীন আনুগত্য থাকে, সে সম্পর্কে সংশয় ব্যক্ত করিয়া শাসককে আত্মসমীক্ষায় রত করা এবং নিজের ভুল সংশোধনে প্ররোচিত করা যাইত। বিক্রমাদিত্য কিংবা আকবরের মতো অনেক রাজাই ভিন্ন মত, বিরোধী মত, সমালোচনামূলক মত শুনিতে উৎকর্ণ থাকিতেন। মানবাধিকার কমিশনারও সহিষ্ণুতার এই সনাতন ঐতিহ্যের কথা বলিয়াছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, আধুনিক শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্র বহু স্বর শুনিবার জন্যই শাসককে নির্দেশ দিলেও শাসকরা কদাচিৎ তাহা শিরোধার্য করেন। নিজেদের ঢাক নিজেরা পিটাইবার তাগিদে তাঁহারা স্তাবক পরিবৃত হইয়া থাকেন, সরকারি প্রচারযন্ত্রকে নিজেদের প্রশংসা, কৃতিত্ব ও সাফল্যের খতিয়ান প্রচারে ব্যবহার করেন, সমালোচকদের সম্পর্কে বিদ্বেষ এমনকী ঘৃণা প্রচারেও কাজে লাগান। প্রথম দিকে ইহাতে এক ধরনের সাফল্যও মেলে। শাসকের একস্বর বন্দনাগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। ক্রমে এই একঘেয়ে বন্দনা সৃষ্টিশীলতার যাবতীয় সম্ভাবনা নিঃশেষ করিয়া দেয়। রাজনৈতিক স্বৈরাচার সংস্কৃতিকেও বন্ধ্যা, নিষ্ফলা করিয়া তোলে। সমালোচনা, নিন্দা, বিকল্পের অন্বেষণ, বাক্স্বাধীনতা যে মুক্ত চিন্তা হইতে জন্মলাভ করে, আনুগত্যপরায়ণতা তাহার অনুকূল পরিবেশ নয়। আনুগত্যের শৃঙ্খল মোচন করিয়া, স্বাধীন ও সরকার-নিরপেক্ষ ভাবে আপন পথ কাটিয়া লওয়াই সৃষ্টিশীলতার শর্ত। সতেজ গণতন্ত্রেরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.