নিয়ম না মেনে রেজিস্ট্রেশন, বিতর্কে স্কুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
আসানসোল পুরসভা পরিচালিত একটি দ্বিভাষিক মাধ্যমিক স্কুলকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে পুরসভার অন্দরেই। একদিকে, স্কুল নিয়ে বিরোধীদের তোলা নানা বেনিয়মের অভিযোগ, অন্য দিকে মেয়র পারিষদের (শিক্ষা) বেফাঁস মন্তব্য - দুইয়ের টানাপোড়েনে সঙ্কট দেখা গিয়েছে স্কুলের পরিচালন পদ্ধতিতে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভার অন্দরেই বিতর্ক মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুর কমিশনার তথা মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরী।
পুরসভা পরিচালিত এই আগা বেগ মাধ্যমিক স্কুলের হিন্দি শাখার বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলররা। বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের অভিযোগ, প্রায় ২৬ জন বহিরাগতকে স্কুলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসানো হয়েছে। কিন্তু ওই ছাত্ররা কেউই পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলে পড়াশোনা করেনি। এমনকী এদের পরীক্ষায় বসানোর আগে পুরসভার অধিবেশনে অনুমোদনও করানো হয়নি। তাঁর দাবি, এটি চূড়ান্ত বেনিয়ম। এই অভিযোগ ওঠার পরেই ওই ২৬ ছাত্রের স্কুলে ভর্তি ও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হিন্দি শাখার ‘টিচার ইন চার্জে’র কাছ থেকে চেয়ে পাঠান পুর কমিশনার তথা মহকুমাশাসক শিল্পাগৌরী। কিন্তু ছ’দিন কেটে যাওয়ার পরেও তাঁর কাছে ওই কাগজপত্র না পৌঁছনোয় ওই টিচার-ইন-চার্জকে এর কারণ দেখাতে নোটিশ পাঠানো হয়। মহকুমাশাসক শিল্পাগৌরী বলেন, “ওই শিক্ষক নোটিশের জবাব দেননি। তাঁর জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযোগের জবাবে স্কুলের হিন্দি শাখার ‘টিচার ইন চার্জ’ কমলেশ তিওয়ারি বলেন, “যা করেছি তা শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ গোলাম সরওয়ারের নির্দেশেই করেছি। এর বেশি কিছু বলব না। নোটিশের জবাবে পুরো বিষয়টি জানিয়ে দেব।” তবে এরসঙ্গেই কমলেশবাবু স্বীকার করেছেন, যে ২৬ ছাত্রকে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে তারা কখনও শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠনে উপস্থিত থাকেনি। কমলেশবাবুর স্বীকারোক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ গোলাম সরওয়ার বলেন, “কোন ছাত্র কীভাবে পরীক্ষা দেবে তা নির্দিষ্ট নিয়মমাফিক স্কুলের প্রধান ঠিক করেন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমার কোনও ভূমিকা নেই।” মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি বানিয়েছি। তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। রিপোর্ট হাতে হলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।”
এ দিকে এই তদন্তের মাঝেই স্কুলের বাংলা শাখাকে নিয়ে শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ গোলাম সরওয়ারের একটি বেফাঁস মন্তব্যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, তিনি সম্প্রতি পুর কমিশনারকে চিঠি লিখে বাংলা শাখার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। কেন? গোলাম সরওয়ার বলেন, “সম্প্রতি পুরসভার একটি তথ্য থেকে জেনেছি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন বিহীন বেতন দেওয়ার এই পদ্ধতি ঠিক নয়। এটি বন্ধ করা উচিত।” এ বিষয়ে মহকুমাশাসক শিল্পাগৌরী বলেন, “চিঠি পেয়েছি। পুরসভার অন্দরেই এই বিতর্ক মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
তবে এই চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে কি না সে বিষয়েও কিছু বলেননি তিনি। তবে প্রাক্তন মেয়র তথা বিরোধী নেতা সিপিএমের তাপস রায়ের দাবি, বাংলা বিভাগের ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুমোদন প্রথম থেকেই রয়েছে। তিনি বলেন, “মেয়র পারিষদ কোনও কিছু না জেনেই মন্তব্য করেছেন।” মেয়র পারিষদের এই মন্তব্যে অসন্তুষ্ট কংগ্রেস নেতা তথা ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, আসানসোলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে অবাঞ্ছিত মন্তব্য ওঠায় এর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিতর্ক বন্ধ হওয়া উচিত। |