ডাইন অপবাদে গ্রাম ছাড়া এক ব্যক্তি অসুস্থ স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার লালপুর আদিবাসী পাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর ওই যুবকের নাম বিজয় টুডু। তাঁর স্ত্রী মিনতিদেবী ৬ মাস অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য বিজয়বাবুকে দায়ী করে ডাইন বলে আখ্যা দিয়ে গ্রামবাসীরা একমাস আগে তাঁকে মারধর করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তার পর থেকে ৯ ও ৫ বছরের দুই মেয়ে, ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওই মহিলা প্রায় একমাস ধরে অসহায় অবস্থায় মধ্যে কাটালেও তাঁর পাশে কেউ দাঁড়াননি বলে অভিযোগ উঠেছে। |
এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের আরএসপির প্রধান অনিল রায় একটি মামলার জেরে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। আরএসপির স্থানীয় গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সচিব বিপ্লব সরকার বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। বিজয় ঘরজামাই ছিল। নিজেকে মন্ত্রতন্ত্রের সাধক বলে দাবি করে তুকতাক করত। এলাকার কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি মিনতীদেবীর অসুস্থতার জন্য বাসিন্দারা বিজয়কে ডাইন সাব্যস্ত করে তাড়িয়ে দেয়। বিডিও এবং থানাকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।”
হিলির বিডিও মথিয়াস লেপচা বলেন, “বিএমওএইচকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীদের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বোঝানো হয়। অসুস্থ মিনতিদেবীকে দেখে শাড়ি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্রামছাড়া ওই ব্যক্তির কোনও খোঁজ মেলেনি। বিষয়টি আবার খোঁজ নেওয়া হবে।” সোমবার জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “মারাত্মক ঘটনা। মহকুমাশাসক এবং পুলিশকে এলাকায় গিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
হিলি ব্লকের ধলপাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের লালপুর গ্রামে প্রায় ৭০ ঘর আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এ দিন অসুস্থ মিনতিদেবী বলেন, “গত মাসে গ্রামে মিটিং ডেকে স্বামীকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। গ্রামে ঢুকলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় উনি গ্রামছাড়া। ওঁর কোনও খোঁজ নেই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটছে। বড় মেয়ে ৯ বছরের পম্পা, মেজ ৫ বছরের চম্পা প্রাথমিক স্কুলে মিডডে মিলের ভাত খেয়ে দিন কাটছে।” মিনতিদেবীর বৃদ্ধা মা শান্তি টুডু বলেন, “হাড়িয়া বিক্রি করে সামান্য উপার্জন দিয়ে মেয়ে ও নাতি নাতনিদের চাল কিনে দিতাম। বাসিন্দারা হুমকি দেওয়ায় হাড়িয়া বিক্রিও বন্ধ। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।” |