|
|
|
|
লালগড়ে ‘অধিকার’ প্রকল্পে দুর্নীতি |
প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বন্ধ চেক বিলি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র লালগড়ে ‘অধিকার’ প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে আলোড়নের মধ্যেই সামনে এল তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। প্রকল্পের চেক বিলি আপাতত স্থগিত হয়ে গিয়েছে। সোমবার যাঁরা চেক নিতে লালগড় (বিনপুর ১) ব্লক অফিসে এসেছিলেন, তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “আমরা বিডিওকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি। যাতে প্রকৃত গরিব মানুষই প্রকল্পের সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করতে বলেছি।”
রবিবারই তৃণমূলের অন্দরে এই দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছিল। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রধান অভিযোগ ছিল তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের বিরুদ্ধে। কারণ, দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির এই প্রকল্পে চেক প্রাপকদের তালিকায় তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ যে সব সম্পন্ন লোকের নাম ঠাঁই পেয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই বনবিহারীর অনুগামী। তালিকায় নাম ছিল বনবিহারীর দুই ভাই এবং জামাইয়েরও। যদিও এ সবের কিছুই তিনি জানেন না বলে এ দিন দাবি করেছেন এই তৃণমূল নেতা। এই দুর্নীতির জন্য পদত্যাগী ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তন্ময় রায় ও মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার দলীয় আপ্ত সহায়ক দশরথ হেমব্রমকে দায়ী করে বনবিহারীবাবু বলেন, “তন্ময় ও দশরথ মিলে সিপিএমের সঙ্গে চক্রান্ত করে এই কাণ্ড করেছে। আমরা ব্লক থেকে প্রকৃত গরিব মানুষের নামের তালিকাই পাঠিয়ে ছিলাম। পরে অন্য নাম ঢোকানো হয়। দেখা যায় তাতে আমার পরিজনদের নামও রয়েছে।” গোটা ঘটনা তৃণমূল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন বনবিহারীবাবু। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা হয়তো এ সব কথা জানেন না।”
সুকুমারবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, “বনবিহারী কী বলেছেন জানি না। আমি ব্লক নেতৃত্বকে তালিকা করতে বলেছিলাম। তারপর কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” আর তন্ময়ের কথায়, “ব্লক সভাপতি যদি প্রকৃত গরিবদের চেক দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তাতেই দলের মঙ্গল।” তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে তৃণমূলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী। তন্ময় যদিও সেখানে ছিলেন না। ছিলেন না যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতোও। শ্রীকান্ত এ দিন সকালে লালগড়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তৃণমূলের দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্রীকান্তকে ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা জানান ‘অধিকার’ প্রকল্পের দুর্নীতি সামনে আসায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে গিয়েও এ জন্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সমস্যা সমাধানে আগামী বৃহস্পতিবার লালগড়ের পাঁচটি অঞ্চলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শ্রীকান্ত। তবে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও মোবাইল কেটে দেন শালবনির এই তৃণমূল বিধায়ক। ‘অধিকার’ প্রকল্পে নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শাসকদল ছাড়া অন্য বিধায়কদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে বিধানসভায় প্রথম সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। এ দিন তিনি বলেন, “বিনপুর এবং লালগড় মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয় এলাকা। জঙ্গলমহলের উন্নয়নের কাজে তিনি নিজেই বারবার তদারকি করছেন। সেখানেই যদি এই দুর্নীতি বেরিয়ে পড়ে, বাকি রাজ্যে তা হলে কী চলছে!” কী ভাবে একটি সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিধায়কের পাঠানো তালিকাই চূড়ান্ত হয়, কেন সেখানে প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখার কোনও ব্যবস্থা থাকবে না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। |
|
|
|
|
|