বাজার গড়তে বাধা হচ্ছিল গাছের ডাল। নিয়মের তোয়াক্কা না করে বহরমপুর শহরের বুকে একটি পূর্ণবয়স্ক মেহগনি গাছকে তাই নির্বিচারে কেটে ফেলছে স্থানীয় পুরসভা।
বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ রোডে জেলা ভূমি সংস্কার দফতরের ঠিক উল্টো দিকে ওই গাছ কাটা প্রসঙ্গে পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “গাছ তো কাটা হচ্ছে না। হচ্ছে ডাল ছাঁটা। এ ব্যাপারে বন দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।”
বন দফতর অবশ্য এমন কোনও অনুমতির কথা জানে না। স্থানীয় রেঞ্জ অফিসার শুভাশিস ঘোষ বলেন, “মানসিক হাসপাতালে লাগোয়া দু’টি মরা গাছ কেটে ফেলার অনুমতি চেয়েছিল পুরসভা। তা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শহরের কেএন রোডে কোনও গাছ কাটা এমনকী ডাল ছাঁটারও প্রশ্ন নেই।” বনদফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ডালগুলি কাটা পড়লে প্রাচীন ওই মেহগনি গাছটিকে কোনও ভাবে বাঁচানো যাবে না। |
তা হলে? নীলরতনবাবু ঢোঁক গিলেছেন। জবাব দেননি।
রাস্তার পাশের গাছটির ডাল কাটার জন্য বহরমপুর পুরসভা রবিবার সরকারি ছুটির দিনটিকেই বেছে নিয়েছিল বলে অভিযোগ। উদ্দেশ্য দোকান ঘর নির্মাণ! একই কারণে দেখিয়ে এর আগেও ওই গাছের ডাল কাটা পড়েছে। তার ক্ষত নিয়ে দু’টি ডাল-সহ গাছটি কোনও রকমে টিকে রয়েছে। দোকান ঘর তৈরির জন্য বাকি দু’টি ডাল কেটে ফেললে গাছটিই মারা পড়বে বলে আশঙ্কা।
এই অবস্থায় ছুটির সকালে শহরের আড়মোড়া ভাঙার আগেই গাছ কাটার জন্য ৬ জন ওই গাছে উঠে পড়ে করে। কিন্তু গাছের ডালে কোপ পড়ার আগেই এলাকার বাসিন্দা ও পথচলতি মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বন দফতরের কর্মীরাও। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ৬ জনকে গাছ থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মানসিক হাসপাতালের মোড় পর্যন্ত কৃষ্ণনাথ রোড বরাবর মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত মালিকানায় দোকান ঘর বিক্রি হচ্ছে। পুরসভার দাবি, কৃষ্ণনাথ রোডের জেলা ভূমি সংস্কার দফতরের উল্টো দিকে ওই মেহগনি গাছের ডাল থাকার ফলে দোতলা ও তিনতলায় দোকান ঘর তৈরি করা যাচ্ছে না। ফলে ওই গাছের ডাল কেটে পুরসভার পক্ষ থেকে দোকান ঘর নির্মাণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ।
পুরপ্রধান বলেন, “গোটা শহরকে সবুজে মুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বহরমপুর কলেজ থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তা বরাবর বিস্তৃত জায়গায় সৌন্দর্যায়নের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার বিভিন্ন গাছ কিনে লাগানো হচ্ছে।”
তা বলে কি গাছ কাটার অধিকার জন্মে যায়?
|
এ ব্যাপারে বন দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।
নীলরতন আঢ্য, পুরপ্রধান |
শহরের কেএন রোডে কোনও গাছ কাটা
এমনকী গাছের ডাল ছাঁটারও প্রশ্ন নেই।
শুভাশিস ঘোষ, রেঞ্জ অফিসার |
|