সম্পাদকীয় ২...
তবু ভাল
ক্ষিণ কলিকাতার একটি নামী হোটেলে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মচারী ইউনিয়ন গড়া যদি দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সঙ্কেত হয়, তবে তাহা শীর্ষ দলীয় নেতৃত্বের গোচরে আসা মাত্র সেই ইউনিয়ন ভাঙিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা রহিয়াছে। পাঁচতারা হোটেলে ইউনিয়ন গড়িয়া দাবি আদায়ের নামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির চেষ্টা রাজ্যের ভাবমূর্তির পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ মানচিত্রে পিছাইয়া থাকা পশ্চিমবঙ্গের একটি খ্যাতনামা হোটেলে সেই ক্ষতির আশঙ্কা যে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে যথাসময়ে সতর্ক করিয়াছে, ইহা মন্দের ভাল। শিল্পমন্ত্রী এবং শাসক দলের মহাসচিবের তরফে ইউনিয়ন ভাঙিয়া দিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণাকে তাই রাজ্যবাসী স্বাগতই জানাইবেন।
শিল্পমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়া দিয়াছেন, পর্যটন ব্যবসায় এই ভাবে ঝান্ডা তুলিয়া রাজনীতি করার চেষ্টা মানা হইবে না। হোটেল কর্তৃপক্ষকে তিনি আশ্বস্তও করিয়াছেন। তাঁহার এই উদ্যোগ সাধু ও সময়োচিত। অনুমান করিলে বোধহয় ভুল হইবে না যে, মুখ্যমন্ত্রীর নেপথ্য নির্দেশই তাঁহার সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিয়াছে। ইদানীং অনেক বিতর্কিত প্রশাসনিক বিষয়েই দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণার ভার শিল্পমন্ত্রীর উপরেই বর্তাইতেছে। তিনি যে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী তথা শীর্ষ নেত্রীর আস্থাভাজন, তাহাও সম্ভবত ইহা হইতে বুঝিয়া লওয়া যায়। সেই হিসাবে তাঁহার ঘোষণা ও আশ্বাসে পর্যটন শিল্পে নিযুক্ত লগ্নিকারীরা ভরসা করিতেই পারেন। হয়তো দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মোকাবিলাও শীর্ষ নেতৃত্ব এ ভাবেই করিতে চাহেন।
ইদানীং এই অভ্যম্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিণামে নানা ক্ষেত্রে দলকে প্রভূত বিড়ম্বনায় পড়িতে হইতেছে। হলদিয়ায় এবিজি, কাঁকসায় এসার সংস্থার গ্যাস প্রকল্প, ভদ্রেশ্বরে প্লাইউড কারখানা সহ বহু নির্মীয়মাণ কিংবা চালু প্রকল্পে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় উদীয়মান গোষ্ঠীপতিদের সম্পর্কে কার্যত শীর্ষ নেতৃত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া কখনও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের আড়ালে, কখনও ক্ষতিপূরণের দাবিতে, কখনও অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ কিংবা কর্তৃপক্ষের হাতে ধরাইয়া দেওয়া তালিকা অনুসারে কর্মী-নিয়োগের দাবিতে যে যথেচ্ছাচারের অভিযোগ শোনা গিয়াছে, তাহাতেও রাজ্যের বিনিয়োগবান্ধব ভাবমূর্তি গড়িয়া ওঠা কঠিন। বামফ্রন্ট আমলেও যূথবদ্ধ বিশৃঙ্খলা রাজ্যকে শিল্পের মরুভূমিতে পরিণত করিয়াছিল। শেষ পর্বে লগ্নির পরিবেশটি কিছুটা উৎসাহব্যঞ্জক হয়। কিন্তু তখনই আবার টাটা কোম্পানির ছোট গাড়ির প্রকল্প নির্মাণে কৃষিজমি হইতে উচ্ছেদের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর আন্দোলন সেই লগ্নি-সম্ভাবনাকেও সর্বতোভাবে বানচাল করিয়া দেয়। হয়তো আজ সেই সংস্থারই মালিকানাধীন হোটেলে ইউনিয়ন গড়ার সিদ্ধান্ত ‘প্রতিশোধমূলক’ বলিয়া গণ্য হইতে পারে, এই স্পর্শকাতরতাই হয়তো শিল্পমন্ত্রীকে ইউনিয়ন ভাঙিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণায় প্ররোচিত করিয়াছে। ধন্য আশা কুহকিনী, তাই রাজ্যবাসী আশা করিবেন, এই সুসঙ্কেত অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যাইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.