জিনপিংয়ের মন বোঝা মূল লক্ষ্য মনমোহনের
ক জনের বয়স আশি। অন্য জনের ঊনষাট!
এক জন ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। অন্য জন চিনের নতুন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ব্রাজিল, রাশিয়া, চিন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক জোট ‘ব্রিকস’-এর সম্মেলনে যোগ দিতে সমুদ্র-শহর ডারবানে এসেছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধানই। কিন্তু প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনৈতিক পরিস্থিতি যে ভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, তাতে ব্রিকস সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য ছাপিয়ে নতুন চিনা প্রেসিডেন্টকে বুঝে ওঠাই মনমোহনের সব থেকে বড় কর্মসূচি। হোলি উৎসবে মুখর দিল্লি ছেড়ে সুদূর ডারবানে এসে জিনপিংকে নতুন বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চাইছেন মনমোহন। বুধবার, দোলের দিন, সন্ধ্যায় মনমোহন-জিনপিং বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বারাক ওবামা থেকে ভ্লাদিমির পুতিন, সকলেই।
ডারবান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে
স্বাগত জানাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই
হু জিনতাওয়ের জায়গায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই জিনপিং মন্তব্য করেন, ভারত-চিন সীমান্ত বিরোধ সহজে মেটার নয়। দু’দেশেরই উচিত সমস্যার মূল ক্ষেত্রগুলি (কোর ইস্যু) নিয়ে কাজ করা। কোর ইস্যু-র কথা চিনের তরফে এই প্রথম বলা হল। এখন ভারত বুঝতে চায়, কোর ইস্যু বলতে চিন ঠিক কী বলতে চাইছে। তাদের কাছে সমস্যার মূল ক্ষেত্র কোনটা তিব্বত, না দক্ষিণ চিনা সমুদ্র? মনমোহন-জিনপিং বৈঠকের জন্য তাই এক মাস ধরে হোমওয়ার্ক করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। তাঁর মতে, ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাঙ্ক তৈরি বা আর্থিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার মতো অর্থনীতির খুঁটিনাটি এ যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বড় কথা নয়। তার জন্য রয়েছেন তাঁর সফরসঙ্গী অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ডারবানে কূটনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন মনমোহন।
কিন্তু কূটনীতিও তাকিয়ে সেই অর্থনীতির দিকেই! উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বেজিংয়ের আপত্তি, দক্ষিণ চিনা সমুদ্র নিয়ে তাদের অতিসক্রিয়তা সত্ত্বেও দু’দেশের সম্পর্ক চূড়ান্ত তিক্ত জায়গায় যাবে না বলেই আশাবাদী দিল্লি। কারণ, চিনের অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা। অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আমেরিকাকে ছাপিয়ে যাওয়াই আপাতত চিনের লক্ষ্য। ফলে তারা তাদের বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে মরিয়া। আর সে ক্ষেত্রে ভারতের বিরাট বাজারকে উপেক্ষা করা চিনের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা তো সত্যি যে, যাবতীয় মতবিরোধ সত্ত্বেও ২০১১ সালে দু’দেশ মিলে ৭৫ হাজার কোটি ডলার বাণিজ্য করেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে বেরোনোর আগে ব্রিকস-ভুক্ত দেশগুলির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জিনপিং। সেই আলোচনার পরে সম্পাদকদের অনেকেরই ধারণা, চিনের নয়া প্রেসিডেন্ট আর্থিক সংস্কার এবং খোলা বাজারের পক্ষে। বস্তুত, ক্ষমতায় এসেই জিনপিং যে সব কথা বলেছেন, তাতে সাড়া পড়ে গিয়েছে চিনে। ক’দিন আগেই তিনি বলেছেন, দেশে আরও কিছু দলকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এবং গণতন্ত্রই চিনকে বাঁচাতে পারে। যা শুনে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে সে দেশের বহু প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতার।
১৩০ ফুট বুদ্ধমূর্তি। সিকিমের রাবংয়ে এএফএপি-র ছবি।
তবে অর্থনীতির বাধ্যবাধকতাকে বাস্তব বলে মানলেও কূটনীতির ক্ষেত্রে সব দিকে চোখ রেখে সাবধানে পা ফেলার পক্ষপাতী দিল্লি। সেটা দেশটা চিন বলেই। ১৯৫০-এর হিন্দি-চিনি ভাই-ভাইয়ের রোম্যান্টিকতা যে শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চুরমার হয়ে গিয়েছিল, সেই রুক্ষ সত্যিটা ভুলতে চায় না ভারত। ইদানীং চিন যে ভাবে শ্রীলঙ্কা, নেপাল থেকে পাকিস্তান, সর্বত্র প্রতিরক্ষা কার্যকলাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা সাউথ ব্লকের চিন্তার কারণ। এই সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্প্রতি নানা কারণে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ভারত অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে চিনা আধিপত্যকে প্রশমিত করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার এই অঞ্চলে চিনের দাপট স্তিমিত রাখতে মায়ানমারে ছুটে এসেছিলেন ওবামা। আবার মার্কিন বিদেশসচিব হিসেবে হিলারি ক্লিন্টনের শেষ বিদেশ সফর ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এর পরেও ভারতের মতে, চিনের বিরুদ্ধে পাল্টা অক্ষ গঠনের চেয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক একটা বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাঁড় করানোটা জরুরি।
এক ভারতীয় কূটনীতিকের কথায়, “আমেরিকা আমাদের চিনের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে চাইতে পারে। কিন্তু এই এলাকায় যদি আমাদের শক্তিধর হয়ে উঠতে হয়, তা হলে সেটা আমেরিকা বিবৃতি দিয়ে বলে দিলে হবে না। সেটা আমাদের অর্জন করতে হবে। আর তখনই সেটা করতে পারব, যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক মজবুত হবে।” তাই চিনের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী ভারত।
বসন্ত উৎসবের দিনে চিনের প্রেসিডেন্টের কাছে কূটনৈতিক সুবাতাস পৌঁছে দিতে চাইছেন মনমোহন। সেই চেষ্টায় ফল ফলে কিনা। সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.