কোনও জায়গায় আগুন লাগলে সাধারণ মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব পরিষেবা দেওয়ার জন্য দমকল যথাস্থানে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন মানুষ কোনও কারণে দমকলের সঠিক পরিষেবা পায়না। কালনা মহকুমায় পাঁচটি ব্লকে দশ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যা। কিন্তু দমকলের কেন্দ্র শুধুমাত্র একটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূরত্বের কারণে বহু সময় দমকল পৌঁছনোর আগেই বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যায়।
কালনা মহকুমার একমাত্র দমকল কেন্দ্রটি রয়েছে শহর ঘেঁষা জিউধারা এলাকায়। এখান থেকে মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী ১,পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বহু গ্রামেরই দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশি। এর উপর রয়েছে দুর্গম রাস্তা যা দমকলের জন্য বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই তিন ব্লকে নদী পেরিয়ে বহু গ্রামে ঢুকতে হয়। মনমোহনপুর, কিশোরীগঞ্জ, দেবনগর চড়ের মত গ্রামগুলিতে বড় আগুন লাগলেও জলপথে দমকলের ভারি ইঞ্জিনের যাওয়া কষ্টকর। এই গ্রামগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য একমাত্র ভরসা কাছাকাছি নদীর জল। সাধারণত চাষের খড়, চালের খড়, পাটকাঠি-সহ নানা দাহ্য পদার্থ ঘরে ঘরে মজুত থাকার জন্য সারাবছর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামগুলিতে একটি বাড়ির সঙ্গে অন্য বাড়ির চাল ঠেকে থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত গতিতে। দমকলের গাড়ি পৌঁছনোর আগেই বহু গ্রামেই বসতবাড়ি, খড়ের পালুই-সহ বহু জিনিষপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। ফলে রাতারাতি পথে বসতে হয় বহু মানুষকে। |
কালনা দমকল কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা ১ এবং ২ ব্লকের গ্রামগুলি কেন্দ্র থেকে কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যে হওয়ায় এই দুই ব্লকে খবর পৌঁছনো মাত্রই কর্তব্যরত কর্মীরা ইঞ্জিন নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বাকি ব্লকগুলির দূরত্ব বেশি হওয়ায় আগুন লাগার খবর পৌঁছলে ওই ব্লকের কাছাকাছি অন্য মহকুমা অথবা অন্য জেলার কেন্দ্রে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়। যাতে কালনা শহর থেকে ইঞ্জিন পৌঁছনোর আগেই আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়ে যায়।
মহকুমার পাঁচ ব্লকের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যায় সব থেকে বড় ব্লক মন্তেশ্বর। এই ব্লকের কাছাকাছি দমকল কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ভাতারে। আগুন লাগলে মন্তেশ্বরে প্রথম পৌঁছয় দমকলের ভাতার কেন্দ্র। আগুন বড় আকারের হলে খবর পৌঁছয় ৩৫ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান সদরের কেন্দ্রে এবং ৬৫ কিলোমিটার দূরে কালনা দমকল কেন্দ্রে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছয় কমপক্ষে ৪০ মিনিট পর। ভাতার কেন্দ্রের ইঞ্জিন কোনও কারণে নিজের এলাকায় ব্যস্ত থাকলে ভোগান্তির শেষ থাকেনা। মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামের বাসিন্দা ইজাবুদ্দিন শেখের কথায়, ‘ধান তোলার পর এলাকার চাষিরা বাড়ির কাছাকাছি খড়ের পালুই তৈরি করেন। কোনও কারণে একটি পালুইয়ে আগুন লাগলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল কর্মীরা।” তাঁর দাবি, দূরত্বের কারণেই দমকলের গাড়ি পৌঁছতে দেরি হয়। কাছাকাছি দমকলের কেন্দ্র থাকলে মানুষ উপকৃত হয়। কালনা মহকুমার দমকলের গাড়ি পৌঁছনোর আগেই পূর্বস্থলী ১, ২ ব্লকের কোনও গ্রামে আগুন লাগলে আগে পৌঁছে যায় নদিয়ার নবদ্বীপের এবং কাটোয়া মহকুমার দমকলের কর্মীরা। তবে এক্ষেত্রেও কোনও কেন্দ্রের গাড়ি ৪০ মিনিটের কমে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনা। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে।
এলাকায় দমকলের দেরিতে পৌঁছনোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে এর জন্য আলাদা একটি দমকল কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি দমকল মন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে নতুন কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে জমি দেবে পূর্বস্থলী পঞ্চায়েত। দমকলের কালনা শাখার ওসি অরিন্দম দেবনাথ বলেন, “বড় মহকুমা। দূরত্বের কারণেই তিন ব্লকে আগুন নেভানোর কাজে কাছাকাছি কেন্দ্রগুলির সহযোগিতা চাওয়া হয়। পূর্বস্থলীর মত মন্তেশ্বরেও একটি কেন্দ্র হলে এলাকার মানুষের সুবিধা হয়।” |