ভারতে রয়েছে বিশ্বের সব চাইতে বেশি যক্ষ্মা রোগী। আর ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যক্ষ্মায় যাঁদের ফুসফুস আক্রান্ত, তেমন রোগীর সংখ্যা ৪৩ হাজারেরও বেশি।
আজ রবিবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। যক্ষ্মা থেকে মৃত্যুর সংখ্যা যদিও কমছে, কিন্তু রয়েই যাচ্ছে উদ্বেগের অন্যান্য কারণ, জানালেন সংক্রামক ব্যধি গবেষক তন্ময় মহাপাত্র। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফনির্য়া লস অ্যাঞ্জেলেস-এর সঙ্গে যুক্ত তিনি। তন্ময়বাবু বলেন, “আগের চাইতে এখন রোগ ধরা পড়ছে আগে, আর পরীক্ষার মানও ভাল হয়েছে। তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় মৃত্যু হচ্ছে না। কিন্তু চিকিৎসা সম্পূর্ণ না-হওয়ার কারণে মাল্টি-ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।” এই রোগীদের ক্ষেত্রে কোনও ওষুধেই কাজ হওয়া কঠিন হয়।
ঠিক মতো চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করলে রোগ যে নির্মূল হয় না, সেই সচেতনতার অভাবেই দেশে যক্ষ্মা রোগের বাড়বাড়ন্ত, বলছেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরাও। দেশে যক্ষা রোগ নির্মূল করার জন্য সরকারের তরফে রিভাইজড ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে। এই প্রকল্পে রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসিয়ে ডাক্তারের সামনে ওষুধ দেওয়া হয়। অথবা স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি গিয়ে রোগীকে ওষুধ দিয়ে আসেন। রোগী নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত চলে ডট্স পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
এই চিকিৎসা সম্পূর্ণ হলে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা খুবই বেশি। কিন্তু মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করলে তা মারাত্মক আকার নেয়। কখনও কখনও দেখা যায়, কিছু দিন চিকিৎসা করার পর রোগী আর চিকিৎসা করাতে চান না। এর কারণ হল, চিকিৎসা করানোর কিছু দিন পর তিনি সুস্থ বোধ করতে থাকেন। কিন্তু তাতে রোগ ভিতরে থেকেই যায়। চিকিৎসা চলাকালীন প্রত্যেক দু’মাস অন্তর কাশি পরীক্ষা করা হয়। শেষ পর্যায়ে পরীক্ষার পরই নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ কিনা। রোগীর সঠিক চিকিৎসার ব্যাপারে ‘কাউন্সেলিং’ বা পরামর্শেরএকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একমাত্র রোগীকে বুঝিয়েই তাকে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়।
কারও যক্ষ্মা হয়েছে কিনা তা বোঝার উপায় হল একমাত্র কাশি হলে থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে। দু’বার পরীক্ষার পরই জানা যায়, রোগ হয়েছে কিনা। এতে রোগ ধরা না পড়লে এক্স-রে করানো হয়। মুশকিল হল, বহু ক্ষেত্রেই দীর্ঘ দিন ধরে কাশি চললেও লোকে কেবল ঠান্ডা লাগার চিকিৎসা করতে থাকেন। এর ফলে রোগ ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়, বলেন তন্ময়বাবু।
যেখানে সেখানে থুতু ফেলা যক্ষ্মা রোগ ছড়ানোর একটা প্রধান কারণ। যক্ষ্মার জীবাণু হাওয়াতে ছড়ায়। তাই হাঁচি-কাশি-থুতুর মাধ্যমে রোগ সহজেই ঢুকে যায় অন্যের শরীরে। মুখে হাত বা রুমাল চাপা দিয়ে হাঁচি-কাশি তাই যক্ষ্মা-সহ বহু রোগ ছড়ানো বন্ধ করতে পারে। রাস্তায় থুতু ফেলার কারণেও রোগ সহজে ছড়াতে পারে। এই মারাত্মক অভ্যাস বন্ধ করলে রোগ ছড়ানো অনেক কমানো সম্ভব। |