বিনোদন গণেশ-স্মরণে আলো-আঁধারের কোলাজ
ক্লাসঘরের চৌহদ্দির বাইরে নেচার-স্টাডির কাজে তাঁর বন্ধুরা তখন গঙ্গার শোভা বা নৌকোর ছবি ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। গণেশ পাইনকে কিন্তু টানছে নিউ মার্কেটের পিছনের ঘিঞ্জি গলি, পাখিওয়ালার খাঁচা। কিংবা নাগরিক পটে গড়গড়াধারী কোনও প্রবীণ। ভাঙাচোরা শহুরে বাস্তব এবং এক ধরনের সাবেকিয়ানার নেশা (ওল্ড ওয়র্ল্ড চার্ম) প্রয়াত চিত্রশিল্পীকে আজীবন তাড়া করে গিয়েছে।
শনি-সন্ধ্যায় প্রিয় বন্ধুর স্মৃতি-চারণে এ কথা বললেন তাঁর আর্ট কলেজের সতীর্থ লালুপ্রসাদ সাউ। দক্ষিণ কলকাতায় বিড়লা অ্যাকাডেমির সভাকক্ষে গণেশের স্মরণসভাও বার বার উত্তর কলকাতার পথঘাটের বর্ণে-গন্ধে ভরপুর হয়ে উঠল। অনিবার্য ভাবেই ফিরে ফিরে এল, কলুটোলার কাছের প্রায়ান্ধকার গলি কবিরাজ রোয়ের কথা। দিনভর চুটিয়ে আড্ডা মেরে বেড়িয়ে সে-গলির পারিবারিক বাড়ির তিন তলার ছাদে রাতভর ক্যানভাসে বুঁদ হয়ে থাকতেন গণেশ। শিল্পীর বহু ছবিতেই ওই গলির পুরনো মন্দির, আদ্যিকালের ঘর-বাড়ির আদল খুঁজে পেয়েছেন চিত্ররসিকেরা।

গণেশ পাইনের স্মরণসভায় যোগেন চৌধুরী। ছবি: রণজিৎ নন্দী
পুরনো কলকাতা, ক্ষয়িষ্ণু সুবর্ণ বণিক সমাজের এই শিকড়ে পা রেখেই সৃষ্টিশীলতার আকাশে উড়ান গণেশ পাইনের। তবু এই পরিপার্শ্ব থেকে আহরণ যেমন করেছেন, তেমনই তাকে অতিক্রমও করে গিয়েছেন তিনি। গণেশকে কোনও বাঁধা-ধরা ছকে ফেলা যাবে না, বললেন চিত্র-সমালোচক প্রণবরঞ্জন রায়। শুভাপ্রসন্ন বললেন, বিরল প্রতিভাধর গণেশের কথা, যিনি কখনও শিক্ষকসুলভ শৃঙ্খলায় ধাতস্থ হতে পারেননি। যোগেন চৌধুরী আবার অনুজ শিল্পীদের কাছে গণেশের শিক্ষকপ্রতিম উপস্থিতির কথাই তুললেন।
নানা দৃষ্টিভঙ্গির মোহনাতেও কিন্তু বার বার উঠে এসেছে গণেশের ক্যানভাসে ‘আলোর অতীত অন্ধকার’। গণেশ হালুই বলছিলেন, বিকাশ ভট্টাচার্য ও গণেশ পাইনের ছবির বৈপরীত্যের কথা। বিকাশ জোরালো আলোয় উদ্ভাসিত। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যিক ক্যানভাস পেরিয়ে গণেশ যেন আলো থেকে অন্ধকারের যাত্রী। নিজের জীবনের অস্থিরতা, জটিলতা সব কিছু তাঁর প্রিয় চিত্রমাধ্যম টেম্পারার রেখায় রঙে ফুটিয়ে তুলেছেন বার বার। “গণেশদা, নিজেকেও রেয়াত করেননি। ঠাট্টা করে বাঁদরের আদলে এঁকেছেন আত্মপ্রতিকৃতি।”—বললেন যোগেন। ছবির জগতের সীমানা পেরিয়ে নাটকের মঞ্চের কম্পোজিশন বা ফেলিনি-বার্গম্যানের চিত্রভাষা থেকেও আহরণ করেছেন গণেশ। তাঁর স্মরণসভাও স্রেফ ছবির জগতের লোকেদের মধ্যেই আটকে থাকল না।
সভার এক ধারে সাজানো গণেশের ছবিগুলির মধ্যে ’৭২ সালে আঁকা টেম্পারা ‘ফিশারম্যান’-এর দিকে অনেক ক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন শিক্ষাব্রতী মেরি অ্যান দাশগুপ্ত। রায়গঞ্জের একটি কলেজের শিক্ষক অদ্রীশ বিশ্বাস আবার হাসতে হাসতে বলছিলেন, দু’দশক আগে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়ে কবিরাজ রোয়ের বাড়িতে গিয়ে ফেস্ট-এর আঁকার প্রতিযোগিতায় বিচারক হতে গণেশকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা। “উনি ভদ্র ভাবে, কিন্তু দৃঢ় ভঙ্গিতে না করেছিলেন। প্রত্যাখ্যানের ভঙ্গিটাও বেশ শিক্ষণীয় ছিল।” বললেন অদ্রীশ।
সভায় প্যারিস থেকে বাংলাদেশের শিল্পী শাহাবুদ্দিন বা মাদ্রিদ থেকে মনিরুল ইসলামের শোকবার্তাও পড়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, বিড়লা অ্যাকাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার ও সোসাইটি অফ কন্টেম্পরারি আর্টিস্টস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.