|
|
|
|
স্মরণ... |
দেখিয়াছি ফিরে |
ওঁর জীবনযাপন, ছেলেমানুষি আচরণ অনেকটাই ছিল ফরাসিদের মতো। সমরেশ বসুর মৃত্যুর পঁচিশটা
বছর পার। মানুষটাকে কি লোকে ভুলেই গেল! তাঁর কথায় স্মৃতিতাড়িত সমরেশ মজুমদার |
সমরেশ বসুকে আমি প্রথম দেখি জলপাইগুড়িতে। প্রথমে দেবেশ রায়ের বাড়িতে, পরে কার্তিক লাহিড়ির মেসে। স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র হলেও বাবুপাড়া পাঠাগারের সদস্য হিসেবে ‘বিটি রোডের ধারে’, ‘শ্রীমতী কাফে’ পড়ে ফেলেছি। কৌতূহল নিয়ে দেখতে গিয়েও কাছে ঘেঁষতে পারিনি। দূর থেকে দেখেই আমার এক বন্ধু বলেছিল, লোকটা সিনেমায় নামলে উত্তমকুমার বিপদে পড়ে যেত। সেটা সম্ভবত উনষাট সাল।
ওঁকে সামনাসামনি দেখি, কথা বলি চৌষট্টিতে। তখন ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’ বেরিয়ে গিয়েছে। খুব হইচই হচ্ছে। শ্লীল, অশ্লীল নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি, দেখেছিলাম ‘বিবর’য়ে সমরেশ বসু অন্য রকম গদ্য লিখলেন। বুদ্ধদেব বসুর পর এত স্মার্ট বাংলা গদ্যের সন্ধান পেয়ে আমরা মুগ্ধ। সেই সময় আমাদের এম এ ক্লাসের ছেলেরা একটি পত্রিকা বের করেছিল। আমাদের মনে হয়েছিল সেই পত্রিকায় সমরেশ বসুর লেখা থাকা উচিত। সেটা এমন বয়স যে আবেগ আকাশ স্পর্শ করে বসে থাকে। জেনেছিলাম তিনি থাকেন নৈহাটিতে, আসেন হ্যারিসন রোডের ‘পরিচয়’ পত্রিকার অফিসে। হানা দিলাম কয়েক জন। জানলাম সমরেশ বসু পুজোর লেখা লিখছেন গ্রে স্ট্রিটে অধ্যাপক হরপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসে।
কী এমন দূর?
চলে গেলাম সেখানে। মিনিট দশেক পরে তাঁর দেখা পেলাম। পাজামা, পাঞ্জাবি পরনে, সামনে লেখার কাগজ কলম, উত্তমকুমারকে হারিয়ে হাসলেন, ‘‘কী ব্যাপার ভাই!’’
আমরা নিবেদন করলাম। আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “বেশ, পারিশ্রমিক কত দেবে?”
আমরা স্তম্ভিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্র সাহিত্যকে ভালবেসে কাগজ বের করছে, তেমন বিজ্ঞাপন নেই, বিক্রির টাকাও পাওয়া যায় না, আর্থিক ক্ষতি ওই ভালবাসায় ভুলে থাকছি। আর ইনি পারিশ্রমিক চাইছেন? আমরা সেটা বোঝাতে চাইলাম। আবার হাসলেন তিনি, “আমি তো ভালবেসে লিখছি না। আমাকে ভাবতে হবে, কষ্ট করে লিখে কাগজ ভরাতে হবে, তাই তার বিনিময়ে নিশ্চয়ই পারিশ্রমিক চাইব।”
এক বন্ধু খেপে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি তা হলে টাকার জন্য লেখেন?”
“নিশ্চয়ই। যাকে ভালবাসি না তাঁর সঙ্গে শুতে বাধ্য হলে নিশ্চয়ই টাকা চাইব।”
আমরা ছিটকে বেরিয়ে এসেছিলাম। সেই ছায়া ছায়া বিকেলে কয়েক জন তরুণ সমরেশ বসুর মুণ্ডু চিবিয়েছিলাম। আমরা নিশ্চিত ছিলাম বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা দিলে পারিশ্রমিক চাইতেন না। তেইশ বছর আগে যিনি চলে গিয়েছেন তাঁকে নিজেদের ইচ্ছায় সাজিয়ে সমরেশ বসুকে ছোট করতে চেয়েছিলাম।
সমরেশ বসুর স্নেহভাজন হলাম দার্জিলিঙে গিয়ে। আমি গিয়েছিলাম তখনকার বিখ্যাত ছোট গল্পকার বরেন গঙ্গোপাধ্যায়, লেখক অভ্র রায়ের সঙ্গে বেড়াতে। উঠেছিলাম স্টেশনের পাশে কালীবাবুর হোটেলে। সস্তার হোটেল। দুপুরে খেয়ে দেয়ে ম্যালে গিয়েছিলাম। সুন্দরী-অসুন্দরীদের ভিড় দেখছি, ঘোড়ার ওপর প্রবীণার আতঙ্কিত মুখ দেখে মজা পাচ্ছি। এক দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী সাদা প্যান্ট এবং সাদা কোট পরে চলে গেলেন কুকুরকে চেনে বেঁধে। এ সব দৃশ্য কলকাতায় দেখা যায় না। |
|
এই সময় দেখলাম, কমপ্লিট স্যুট পরা, হাতে ছড়ি, মাথায় ফেল্ট হ্যাট এক জন খুব স্মার্ট ভঙ্গিতে কাছে এসে বললেন, “কবে এলে বরেন?”
বরেনদার চোখ বড় হল,“এ কি সমরেশদা, আপনি?”
গলা নামালেন তিনি, “খুব খারাপ দেখাচ্ছে?” “না না। দারুণ লাগছে।” আলাপ হল। শুনলাম পুজোর উপন্যাস লিখতে এসেছেন ‘উল্টোরথ’ পত্রিকার জন্য। উঠেছেন আমাদের হোটেলের নীচে, লুইস জুবিলি স্যানেটোরিয়াম হোটেলে। হঠাৎ আমায় বললেন, “আমার সঙ্গে একটা জায়গায় যাবে ভাই?”
এরকম সুযোগ কেউ ছাড়ে? যেতে যেতে শুনলাম দার্জিলিঙের এক সাংবাদিকের বাড়িতে সাহিত্য সভায় তাঁকে কথা বলতে হবে। শ্রোতারা রীতিমতো শিক্ষিত। বাড়িতে ঢোকার আগে নির্দেশ দিলেন, “তুমি ওই দরজার পাশের চেয়ারে বসবে। মাঝে মাঝে রাস্তায় নজর রাখবে। তখন ‘দেশ’ পত্রিকায় গোটা দশেক ছোট গল্প বেরিয়েছে, আনন্দবাজারের রমাপদ চৌধুরী পাত্তা দিচ্ছেন না। উপন্যাস লিখিনি, তাই লেখক হিসেবে কোনও পরিচিতি তৈরি হয়নি।
সমরেশদাকে স্টেজে তুলে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। প্রথমে শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন। সমরেশদা উত্তর দেবেন। তার পর ওঁর বক্তৃতা। অত্যন্ত দেড়শো জন সুবেশ নারী পুরুষ বসে প্রশ্ন করতে লাগলেন। হঠাৎ এক জন ভদ্রমহিলা প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা আপনি আর একটা ‘গঙ্গা’ লিখছেন না কেন?”
শোনা মাত্র সমরেশদা গৃহকর্তাকে নিচুু গলায় কিছু বলতেই তিনি ব্যস্ত হয়ে তাঁকে নীচে নামিয়ে নিয়ে গেলেন। সবাই বুঝল টয়লেটে গেলেন সমরেশদা। খানিক পরে আমি রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখলাম বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে সমরেশদা হাত নেড়ে আমাকে ডেকে আড়ালে চলে গেলেন। চুপচাপ বেরিয়ে এসে দ্রুত হেঁটে ওকে ধরতে প্রায় ক্যাপিটাল সিনেমা হলের কাছে পৌঁছে গেলাম। “কী হল! এ ভাবে চলে এলেন?” “বিরক্তিকর। প্রশ্ন করছে আরেকটা ‘গঙ্গা’ লিখলাম না কেন? বৌ সঙ্গে থাকতে কি কেউ জিজ্ঞাসা করে আর একটা বিয়ে করছেন না কেন? অশিক্ষিত।” সমরেশদা রীতিমতো উত্তেজিত। জিজ্ঞাসা করলাম, “কী ভাবে বাইরে এলেন?” “ওদের টয়লেটে জমাদারদের জন্য পিছন দিকে ঘোরানো সিঁড়ি আছে। তাই দেখে সুবিধে হয়ে গেল। তোমার তো আজ কোনও কাজ নেই, চলো আমার সঙ্গে জলা পাহাড়ের দিকে। ওখানে মেমসাহেব অপেক্ষা করছেন,” সমরেশদা বললেন।
সেই রাত্রে আমি ছাড়া পেয়ে, কালীবাবুর হোটেলে চলে এলেও সমরেশদাকে সেখানে পান এবং ভোজন করতে হয়েছিল।
প্রচণ্ড ঠান্ডায় লেপের তলায় শুয়ে ভাবছি আর একটা সোয়েটার পরলে ভাল হয়। হঠাৎ তখনই বন্ধ জানালায় শব্দ হল। ঢিল ছোড়ার শব্দ। খানিক পরে আবার। বরেনদা এবং অভ্র রায়কে ডাকলাম। কাঁপতে কাঁপতে জানালা খুলে দেখলাম পুরো শহরটা গভীর কুয়াশায় ডুবে আছে। কানা ডাইনির চোখের মতো রাস্তার আলো জ্বলছে, যার তেজ নেই বললেই চলে। তখনই চোখে পড়ল বাঁ হাত পাশাপাশি সোজা করে রেখে ডান হাতে পাথর কুড়োচ্ছে যে মানুষটা, তাঁর লক্ষ্য এই হোটেলের জানালা। বরেনদা চাপা গলায় বললেন, “সমরেশদা না? এখন রাত বারোটা, ওখানে কী করছেন?’’
যা কিছু শীতবস্ত্র ছিল, সব শরীরে চাপিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে দেখলাম বরেনদার অনুমান সত্যি। অভ্র রায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি এখানে কী করছেন?”
জড়ানো গলায় সমরেশদা বললেন, “পেছনের লোকটা ছিনতাই করতে চাইছে। কালীবাবুর হোটেলে ঢিল ছুড়ছি অথচ তোমরা ...!”
এ বার লক্ষ করলাম, দূরে আপাদমস্তক ঢেকে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার করে তাকে কাছে ডাকলে লোকটা এগিয়ে এসে হাতজোড় করে যা হিন্দিতে বলল, তার সারমর্ম হল, এই সাহেবকে হোটেলে পৌঁছে দিতে হুকুম দিয়েছিলেন মেমসাহেব। কিন্তু রাস্তায় নেমেই কেন যে দৌড়োতে শুরু করলেন তা সে বুঝতে পারছে না।
লোকটাকে ভাল কথা বলে বিদায় দিয়ে সমরেশদাকে হোটেলে পৌঁছতে গেলাম। রাস্তাটা এত ঢালু যে স্বাভাবিক অবস্থায়ও শরীরের ব্যালান্স রাখতে অসুবিধে হয়। আমি আর অভ্র রায় ওঁর দুটো হাত ধরেছিলাম। নামতে নামতে আচমকা দাঁড়িয়ে গেলেন সমরেশদা। বরেনদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা বরেন, আমি কী রকম লিখছি?” “দারুণ। তিন ব্যানার্জির পরে তো আপনিই,” বরেনদা বললেন। “ভ্যাট। মিথ্যে কথা,” চিৎকার করে উঠলেন সমরেশদা, “তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণের ধারে কাছে যেতে পারিনি। কিছুই লিখিনি। কিছুই না,” তাঁর গলা ধরে এল। বুঝলাম খুব চেষ্টা করছেন কান্না চাপবার।
হোটেলের দরজা বন্ধ ছিল। অনেক শব্দ করে দারোয়ানকে জাগিয়ে সেটা খোলার ব্যবস্থা করলে সমরেশদা আমাদের খাওয়াতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর শরীর আর পারছিল না বুঝে ওঁকে দারোয়ান ঘরে নিয়ে গেল। আমরা ফিরে এলাম কালীবাবুর হোটেলে।
ঘুম আসছিল না। ঠিক করলাম বাকি রাতটা আড্ডা মেরে কাটিয়ে সূর্য ওঠা দেখব। দেখে ঘুমোব। ঘরের পেছনে যে ব্যালকনি ছিল সেখানে গিয়ে অভ্র রায় লক্ষ করছিলেন সূর্য উঠতে কত দেরি। রাত যখন সাড়ে চারটে, তখন ব্যালকনিতে গিয়ে তিনি চেঁচিয়ে ডাকলেন আমাদের। নীচে সমরেশদার হোটেল। সব ঘর অন্ধকার। শুধু একটি ঘরে আলো জ্বলছে। মাঝে মাঝে একটা ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। অভ্র বললেন, “ওটা নিশ্চয়ই সমরেশদার ঘর।” বরেনদা বললেন, “দূর। যা অবস্থা ছিল তাতে সকাল দশটার আগে ঘুম ভাঙবে না।” আমি বললাম, “চলো, গিয়ে দেখা যাক।”
|
|
নেই কাজ তো খই ভাজ। আমরা হাজির হয়ে দেখলাম হোটেলের দরজা তখন খোলা হচ্ছে। ভেতরে ঢুকে দোতলার সেই ঘরটার দরজায় নক করলাম। দরজা খুলতেই আমরা হতবাক। পাটভাঙা পাঞ্জাবি, পাজামা। সদ্য স্নান করা সমরেশদা আমাদের দেখে হেসে বললেন, “আরে! তোমরা! সারা রাত হুল্লোড় করেছ নাকি?”
“আপনি কী করছেন?” গলার স্বর দুর্বল ছিল।
“এই তো একটু লিখতে বসেছি। ‘স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গণে’। বারোটা অবধি লিখব।”
“ঠিক আছে লিখুন। বারোটার পর আসব।”
“তা হলে দুপুরে এখানেই খেয়ে যাবে,” তিনি দরজা বন্ধ করলেন।
কোন শক্তি একজন মানুষকে এই ক্ষমতা দিতে পারে? রাত পৌনে একটায় জ্ঞান হারানো যে শরীর বিছানায় গিয়েছিল সেই শরীর চার ঘণ্টার মধ্যে তাজা হয়ে স্নান করে হাসি মুখে লিখতে শুরু করে কী ভাবে?
হোটেলে ফিরে এসে বরেনদা বলেছিলেন,“এই জন্যই মানুষটার নাম সমরেশ বসু।”
তারাশঙ্কর থেকে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দুদের যুগ, তার মাঝখানে ছিলেন সমরেশ বসু। ছিলেন ওই দুই যুগের মধ্যে সেতু হিসেবে। ওঁর জীবনযাপন, ছেলেমানুষের মতো মাঝে মাঝে আচরণ ইত্যাদি দেখে ওঁকে বলতাম আপনার উচিত ছিল ফরাসি দেশে জন্মানো। হেসে বলতেন, “নৈহাটিকেই প্যারিস ভেবে নাও।” এক রাতে ফোন করে বললেন, “আমি আর পারছি না, কাল সকালে তুমি অবশ্যই আসবে।” সার্কাস রেঞ্জের বাড়িতে গেলে বললেন, “তুমি তিষ্যরক্ষিতার নাম শুনেছ? বাঃ, গুড। এই বইগুলো নিয়ে যাও। এটা চিনের এক জন পরিব্রাজকের লেখার অনুবাদ। সম্রাট অশোক-তিষ্যরক্ষিতা আর কুণালকে নিয়ে দারুণ উপন্যাস হয়। আমি চেষ্টা করে দেখলাম হচ্ছে না। তুমি লেখো।”
‘শরণাগত’ উপন্যাসটি আমি সমরেশদাকে উৎসর্গ করেছিলাম।
শেষের দিকে একটু অভিমানী হয়ে পড়েছিলেন। ভুল বুঝতেন সহজেই। আবার তা শুধরেও নিতেন। কিন্তু ওঁর মতো বিচিত্র বিষয় নিয়ে আর কোনও লেখক বাংলা ভাষায় উপন্যাস লেখেননি। শেষের দিকে লেখা , ‘টানাপোড়েন’ উপন্যাসটি লিখতে পারলে পৃথিবীর যে কোনও ঔপন্যাসিক গর্বিত হত।
লেখা ছাড়া সব ব্যাপারেই তাড়াহুড়ো করতেন সমরেশদা। নইলে মধ্য ষাটে কেউ চলে যায়!
|
মহাকালের রথে সমরেশ |
• স্নেহশীল দাদা মন্মথ বসুর কাছে ছোট্ট সমরেশ ছিলেন ‘প্রবলেম চাইল্ড’। স্কুলের পড়াশুনোয় একেবারে মন ছিল না। বাকি সব কিছুতেই ছিল প্রবল উৎসাহ। থিয়েটার করা, বাঁশি বাজানো। এমনকী ছবি আাঁকার হাতটিও বেশ পাকা। কিছু দিন ফুটবল নিয়ে মাতামাতি চলল, তো তার পরেই শুরু হল ব্যায়ামাগারে যাওয়া। গঙ্গায় সাঁতরানো। ক্লাস নাইন হল কি শুরু হল গোপন ধূমপান। প্রেম। আর ক্লাস টেনে-এ উঠতে না উঠতেই নৈহাটির ভিটে ছেড়ে প্রেমিকা গৌরীকে নিয়ে পিঠটান। সোজা আতপুর। সংসার জীবনের অকাল বোধন
• তাঁর আবাল্য বন্ধু, সহপাঠী, পরবর্তী জীবনে এক প্রাবন্ধিকের কথায়, সমরেশ ‘যা কিছু করেছে সারা জীবনে, তার মূল কথা হল কেটে বেরিয়ে পড়া। ... মধ্যচিত্ততার দায়ভাগ ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়া। অমরনাথ যাত্রা, মোটর রেসে যোগ দেওয়া, মরুভূমিতে তাঁবু নিয়ে চলে যেতে চাওয়া - সব কিছুর মূলে রয়েছে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা।’ বিবাহিতা, স্বামী পরিত্যক্তা, তাঁর থেকে বয়সে বড় গৌরীকে নিয়ে ঘর বাঁধার মধ্যেও রয়েছে সেই একই রকমের চ্যালেঞ্জ
• আতপুরে সমরেশের জীবন এক বড় বাঁক নেয়। জগদ্দল-আতপুরের শ্রমিক পাড়া, জীবিকার জন্য লড়াই নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার দিনযাপনের থেকে বহুলাংশেই আলাদা। ইছাপুরের বন্দুক কারখানায় একটা চাকরি পেলেন। তাও কিনা আঁকতে জানেন বলে। এ অঞ্চলের কিংবদন্তি নেতা তখন সত্য মাস্টার। দীর্ঘদেহী, সুদর্শন। ওঁর কাছেই সমরেশের রাজনীতির পাঠ। সমরেশকে ছবি আঁকা থেকে লেখালেখির জগতে নিয়ে আসেন তিনিই। সেদিক থেকে বলা যেতে পারে, সত্য মাস্টারের সঙ্গে সমরেশের সাক্ষাৎ বাংলা সাহিত্যেরই এক মাইল ফলক। এক শোচনীয় বিস্ফোরণে সত্য মাস্টারের মৃত্যু হয়
• দুশোরও বেশি ছোট গল্পর মধ্যে সমরেশ বসুর লেখা প্রথম গল্পটি হল ‘আদাব’। প্রায় একশোটি উপন্যাসের মধ্যে প্রথমটি ‘নয়নপুরের মাটি’
• ১৩৭৪ সনে শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘প্রজাপতি’। তাকে অশ্লীল বলে নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়ে ১৯৬৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন এক তরুণ আইনজীবী অমল মিত্র। সমরেশ বসুর পক্ষে সেই মামলার প্রথম ও প্রধান সাক্ষী হন সাহিত্যিক অধ্যাপক বুদ্ধদেব বসু
• সমরেশ বসুর প্রয়াণ ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ |
ঋণ: সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
অঙ্কন: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|