বিধি মেনে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে না, এই অভিযোগে হুড়া ব্লকে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে নির্মীয়মাণ একটি রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিলেন শ্রমিকেরাই। শুধু বন্ধ করাই নয়, রাস্তার কাজ ফেলে সোজা ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিও-র কাছে শ্রমিকেরা অভিযোগও করলেন যে, বিধি মেনে পঞ্চায়েত রাস্তা তৈরি করছে না। বিডিও আপাতত ওই কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুড়া ব্লকের মাগুড়িয়া-লালপুর পঞ্চায়েত বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের আওতায় পাহাড়মেলা থেকে পারুলগোড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এর জন্য ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৪১ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিকই পারুলগোড়া গ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার থেকে এই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, পাথর ও মোরাম ফেলে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হলেও রাস্তা সমতল করার জন্য রোলার ব্যবহার হচ্ছিল না। এলাকার বাসিন্দারাও সঠিক ভাবে রাস্তা তৈরির জন্য রোলার ব্যবহার করার দাবি তোলায় মাঝে এক দিনের জন্য কাজ বন্ধও হয়ে যায়। ফের কাজ শুরু হলেও দায়সারা গোছের কাজ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। |
শুক্রবার একই ভাবে কাজ শুরু হওয়ায় প্রতিবাদ করেন শ্রমিকেরাই। কাজের জায়গা থেকে জনা চল্লিশ শ্রমিক প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে ব্লক অফিসে হাজির হন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা শ্রমিক। পারুলগোড়ার ভারতী মাঝি, সবিতা হেমব্রম, লক্ষ্মীমণি মুর্মু, ময়না মুর্মু, বদনি সোরেন, বুধন মান্ডি, সুকান্ত হাঁসদাদের অভিযোগ, “আমরা এই রাস্তা তৈরির কাজ করছি বটে। এটা আমাদের গ্রামেরই রাস্তা। আমাদেরই যাতায়াত করতে হবে এই রাস্তা দিয়ে। আমরা দেখছি, অত্যন্ত দায়সারা ভাবে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। পাথর ও মোরাম বিছিয়ে রাস্তা করা হলেও ঠিকভাবে রোলার দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবাদের পরে রোলার চললে জল দেওয়া হয়নি। এ ভাবে রাস্তা তৈরি করলে তো আগামী বর্ষাতেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে!” শ্রমিকদের কথায়, পঞ্চায়েতের লোকজনকে বলেও লাভ না হওয়ায় তাঁরা সরাসরি বিডিও-র কাছে এসে অভিযোগ করেছেন।
হুড়ার লালপুরে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রধান বাসুদেব মণ্ডলকে পাওয়া যায়নি। উপপ্রধান অশ্বিনীকুমার দাসের যুক্তি, “পঞ্চায়েতের একাধিক কাজ শুরু হয়েছে। সেই অনুপাতে এলাকায় রোলার মিলছে না। তাই সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। তবে ওই রাস্তায় যে রোলার দেওয়া হত না, তা নয়। কাজ চলতে চলতে বা পরে হলেও নিশ্চয়ই রোলার চালানো হত।” এ কথা শুনে শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, “আমরা বলার পরে কাজের সময়ই যখন রোলার দেওয়া হচ্ছে না, কাজের পরে রোলার চলার দাবি কী করে বিশ্বাসযোগ্য হবে? তাই আমরা বিডিও-র কাছে গিয়েই প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত বলেন, “সব শুনেছি। পঞ্চায়েতের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পঞ্চায়েত কাজের পরিমাণের অনুপাতে তাদের কাছে কম অর্থ রয়েছে বলে জানিয়েছে।” প্রযোজনীয় অর্থ যখন নেই, তখন কাজ হাতে নেওয়া কেন, এ দিন শ্রমিকদের অভিযোগ শুনে এই প্রশ্নও তোলেন বিডিও। আপাতত ওই কাজ বন্ধের নির্দেশ তিনি দিয়েছেন।
|
সড়কের কাজ বন্ধ, ঘেরাও
নিজস্ব সংবাদদাতা • মানবাজার |
রাস্তায় মোরাম ও পাথর ফেলে রেখেও কয়েক মাস ধরে কাজ না করার অভিযোগে ঠিকাদার ও পঞ্চায়েত কর্মীদের আটক করে রাখলেন বাসিন্দারা। শুক্রবার মানবাজার থানার ধানাড়া পঞ্চায়েতের লাগদাগোড়া গ্রামের ঘটনা। এ দিন রাস্তা মেরামতির জন্য রোলার নিয়ে যাওয়া হলে গ্রামবাসীরা ওদের আটক করেন। ঘণ্টা চারেক আটক করে রাখার পরে বিডিও গিয়ে আশ্বাস দেওয়ায় তাঁদের ছাড়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা অলকা রজক, গন্ধেশ্বরী গরাইদের অভিযোগ, “মাস তিনেক আগে মোরাম ও পরে পাথর রাস্তার উপর ডাঁই করে ফেলে রেখে যায় ঠিকাদার। কিন্তু কাজ শুরু না করায় পথ চলতে আমরা নাকাল হই।” এ দিন ঠিকাদারকে নাগালে পেয়ে তাই বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পঞ্চায়েতের দাবি, রোলার না পাওয়ায় এত দিন কাজ করা যায়নি। তবে বিডিও সায়ক দেব বলেন, “এত দিন কেন কাজ বন্ধ ছিল খতিয়ে দেখব।” তিনি জানান, আজ শনিবার থেকেই ওই রাস্তার কাজ নাগাড়ে চলবে। |