নকলে ‘বাধা’ পেয়ে শুক্রবার স্কুলে রীতিমতো তাণ্ডব চালাল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশ। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের পাশাপাশি শিক্ষকদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলও ছোড়ে তারা। ইটের ঘায়ে জখম হয়েছে স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি হামলাকারী এক ছাত্রকে গ্রেফতারও করেছে। বেথুয়াডহরী জেসিএম স্কুল কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের নামে থানায় লিখিত নালিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে খবর, সুধাকরপুর, তেঁতুলবেড়িয়া ও পাটপুকুর হাইস্কুলের পড়ুয়াদের পরীক্ষাকেন্দ্র বেথুয়াডহরী জেসিএম হাইস্কুল। শুক্রবার ইতিহাস, রসায়নবিদ্যা ও হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষা ছিল। অভিযোগ, এ দিন পরীক্ষা শুরুর প্রথম থেকেই পরীক্ষার্থীদের একাংশ নকল করতে শুরু করেন। বাধা দিলে উত্তেজিত হয়ে তারা শিক্ষকদের গালিগালাজ করতে থাকে। এরই মধ্যে সুধাকর হাইস্কুলের ছাত্র সুজয় ঘোষ ইতিহাস পরীক্ষায় টুকতে না পেরে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ করতে থাকে। প্রসঙ্গত, সুজয় দু’বার অকৃতকার্যের পর তৃতীয় বারের জন্য পরীক্ষায় বসেছিল। শেষমেশ টুকতে না পেরে তার নেতৃত্বে একদল পরীক্ষার্থী দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে দেয়।
সহ-শিক্ষক সত্যরায় বর্ধন বলেন, “নকল করতে না পেরে সুজয়কে সামনে রেখে একদল ছাত্র স্কুলে হামলা শুরু করে। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের সঙ্গে সঙ্গে ঢিলও ছুড়তে থাকে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা।” |
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে ছিল স্কুলের পড়ুয়াদের একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। হামলার শিকার হয় ওই ছাত্রেরাও। তাণ্ডবকারীদের ছোড়া ইটে জখম হন মহেশ্বর ঘোষ নামে এক ছাত্র। মাথায় চোট পায় সে। বেথুয়াডহরী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার মাথায় তিনটি সেলাই হয়। ওই অবস্থাতেই পরীক্ষায় বসে ওই ছাত্র।
পরীক্ষা শেষে সে বলে, “পরীক্ষা দিতে স্কুলে ঢুকতেই দেখি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ভাঙচুর চালাচ্ছে। শিক্ষকদের গালাগাল দিচ্ছে। রোখার চেষ্টা করতেই হামলা হয় আমাদের উপর।” এরই মধ্যে হামলাকারীদের মূল পাণ্ডা সুজয় ঘোষকে পাকড়াও করে আটকে রাখা হয় প্রধান শিক্ষকের ঘরে। পরে নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করে ওই ছাত্রকে। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুজয় ঘোষ নামে এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।”
জেসিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণকান্তি বিশ্বাস বলেন, “অবাধে টুকতে না পেরে একাংশ পরীক্ষার্থী স্কুলে ভাঙচুর চালিয়েছে। শিক্ষকদের হেনস্থা করেছে।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অংশুমান দে বলেন, “ওই ছাত্রদের হামলায় স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র জখম হয়েছে। আমরা ধৃত সুজয়ের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।” যে স্কুলের ছাত্রেরা এই তাণ্ডব চালায়, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ রায় বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক ঘটনা। মোটেও ছাত্রসুলভ নয় এই ঘটনা।” উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নদিয়া জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক বিমলেন্দূ সিংহরায় বলেন, “নকল করতে না পেরে ছাত্ররা যা করল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে এর ফলে পরীক্ষায় অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি।” |