ডাকঘর

হারিয়ে যাচ্ছে বোলান গান
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘ডাকঘর’ বিভাগে প্রকাশিত সুভাষ ঘোষ হাজরার পত্রের রেশ ধরেই বলি শব্দগানের মতোই হারিয়ে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের আরও এক লোকসংস্কৃতি বোলান গান। মতান্তরে বুলান গান। কারও মতে বোল বা ডাক থেকে বোলান নামকরণ। কেউ মনে করেন ‘বুলা’ থেকে বুলান গান। ‘বুলা’ অর্থাৎ ভ্রমণ। গ্রাম বা পাড়া ঘুরে এ গান গাওয়া হয় বলে একে ‘বুলান’ বলে। মুর্শিদাবাদ ছাড়াও বর্ধমান ও নদিয়ার কিছু এলাকায় শিবরাত্রির সলতের মতো বোলান গান এখনও টিকে আছে। চৈত্রে গাজন উপলক্ষে ৪ দিন ধরে বোলান অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দু’দিন মুর্শিদাবাদের রাঢ় অঞ্চল (ওই এলাকায় বোলানের শিকড়) ও সংলগ্ন বর্ধমানের কেতুগ্রামে পরিবেশিত হওয়ার পর বাকি দু’দিন নদিয়ার কালান্তরে বোলান গান পরিবেশিত হয়। ওই এলাকায় বোলান কেন্দ্রীক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানও হয়। বোলান যাঁরা রচনা করেন গ্রামাঞ্চলে তাঁদের ছড়াদার বলে। দেবীবন্দনা দিয়ে শুরু হয় বোলানের আসর। তারপর পাঁচালি। ওই পাঁচালি পৌরাণিক অথবা সামাজিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত। পাঁচালির পর আসর বুঝে পরিবেশিত হয় রঙ-পাঁচালি। এটি আদি রসাত্মক। রঙ-পাঁচালিতে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা ছাড়াও এলাকার কোনও নারী পুরুষের নিষিদ্ধ সর্ম্পক ভিত্তিক গোপন অভিসারের কখা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো করে পরিবেশিত হয়। ওই ভাবে সামাজিক রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করে বোলন। বোলান গানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে বিশুদ্ধতা বহুলাংশে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। পুরুলিয়ার ছৌ নাচ, মালদহের গম্ভীরা বা উত্তরবঙ্গের ভাইয়াইয়ার মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বোলান গানের অস্তিত্বের সঙ্কট অনেকটা কমতো।
এখনও বিস্মৃত রাখালদাস
আর কদিন পর, ১২ এপ্রিল বহরমপুরের ভূমিপুত্র ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। অন্য বছরের মতো এ বারও ঐতিহাসিকের জন্মদিন বিস্মৃতির পাথরেই চাপা পড়ে থাকতে পারে। সেই আশঙ্কায় এই চিঠি লেখা। অথচ তিনি হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর মতো সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করে ভারতীয় সভ্যতার বয়স আরও পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পিছিয়ে দিয়েছেন। ফলে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের কাছে ভারতীয় সভ্যতা মিশরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সমকালীন বলেই প্রমান করলেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ঢাকার অন্তর্গত বিক্রমপুরের অধিবাসী ছিলেন। সেখানের নবাব দরবারে উচ্চপদে বহাল ছিলেন। মুর্শিদকুলি খাঁয়ের সময় দেওয়ানি দফতর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষরা ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে মুর্শিদাবাদের অপর পারে ডাহাপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। রাখালদাসের পিতা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু কলেজ থেকে শিক্ষালাভ করার পর বহরমপুরে ওকালতিতে নিযুক্ত হন। আইন ব্যবসায় তিনি প্রতিপত্তি লাভ করেন। বহরমপুর শহরে ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস পুরাতন মুদ্রা, শিলালিপি ও তাম্রলিপি প্রভৃতির সাহায্যে প্রাচীন ভারত সম্বন্ধে বহু অজানা তথ্য আবিষ্কার করেছেন। এ ছাড়াও কঠোর পরিশ্রম করে কুলশাস্ত্র, গৌড়ীয় শিল্পকথা, বাংলার ইতিহাস, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, ঐতিহাসিক উপন্যাস, বিভিন্ন প্রাচীন শহর, কনিষ্ক ও গুপ্ত শাসনের ইতিহাসে আলোকপাত করেছেন। ১৯৩০ সালের মে মাসে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন। বর্তমানে রাজ্য জুড়ে নানা অনুষ্ঠান ও নামকরণের ছড়াছড়ি। অথচ ব্রাত্য কেবল ওই ঐতিহসিক পুরাতত্ত্ববিদ। এখনও কি তিনি তাঁর প্রাপ্যের অতিরিক্ত অনাদর পেয়ে যাবেন?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.