মঞ্চে তরবারি, লাঠি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন একদল সৈনিক। কখনও বা মাধুকরীতে বেরিয়েছেন বেশ কয়েক জন বৌদ্ধ-ভিক্ষু। আবার একদল রমণী নানা আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন আম রমণীদের জীবনযাত্রা। চলমান দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধে নামা সম্রাট এবং
গ্রামের এক যুবক ‘কলিঙ্গ’-কে। কখনও ‘ভারতী আম্মা’ সম্রাটকে বোঝাতে চাইছেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিণাম। |
এগুলি নৃত্যনাট্যের খণ্ড দৃশ্য। কুশীলবেরা আর পাঁচ জনের থেকে একটু আলাদা। তাঁরা বন্দি। প্রতি মুহূর্তে গরাদের পিছনে থেকে সাজা পেয়ে চলেছেন। তাঁদের অপরাধমূলক মানসিকতা থেকে মুক্তি দিতেই বিভিন্ন সংশোধনাগারে বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে নাটকের দল, গানের দল, আবৃত্তির পাশাপাশি নাচের দলও। তাঁদের শিল্পীসত্তা কারাগারের বাইরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও হয়েছে নানা ব্যবস্থা।
এ বার সেই রকমই এক নতুন মঞ্চ-আলেখ্য ‘মোক্ষগতি’। চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক। সম্রাট অশোকের জীবনের প্রেক্ষাপটে ওই আলেখ্যে কলিঙ্গ কোনও রাজ্য নয়, একটি চরিত্র। সেই কলিঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন সম্রাট। তাঁর কাছে পরাজিত হন কলিঙ্গ, মৃত্যু হয় যুদ্ধক্ষেত্রেই। আর তার পরেই ভারতী আম্মা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন সম্রাটের উপর। মায়ের রাগ আর কষ্টে অনুশোচনা আসে সম্রাটের মধ্যে। অনুতপ্ত সম্রাটকে ক্ষমা করে দেন মা। ‘‘ক্ষমার চেয়ে বড় কিছু হয় না। যাকে ক্ষমা করা হয়, তার বড় পরাজয় হয়। তাতেই আত্মশুদ্ধি হয় ক্ষমা করেন যিনি তাঁর। তাই এমন একটি প্রেক্ষিতকে তুলে ধরার চেষ্টা,” বলছেন সংশোধনাগারের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়। |
চার বছর আগেই মোক্ষগতির ভাবনা শুরু হয়। প্রথমে ঠিক ছিল নৃত্যনাট্য হবে। তার পরে ঠিক হয় সেলুলয়েড আর মঞ্চ মিলিয়ে তৈরি হবে ‘মোক্ষগতি’। সেইমতো সম্প্রতি মহড়া হয়ে গেল এর। যিনি সংশোধনাগারের ভিতরে প্রথম সাংস্কৃতিক কাজ শুরু করেন সেই প্রাক্তন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মা বললেন, “প্রথম দিকে কারা দফতরের লোকজন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আজ তাঁদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।” বর্তমান আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “আমার আসার আগেই ‘মোক্ষগতি’র কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন তা চূড়ান্ত রূপ পেতে চলেছে।”
|