রাজ্যে আর্সেনিকপ্রবণ এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই সব অঞ্চলে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্পও রয়েছে। কিন্তু এ বারে খাদ্যশৃঙ্খলেও আর্সেনিক দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পরিবেশবিদদের। এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণাও শুরু করেছেন তাঁরা। পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, খাদ্যশৃঙ্খলে আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়লে তার কুফল শুধু আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার মধ্যেই আটকে থাকবে না, বরং এ রাজ্যের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
কী ভাবে খাদ্যশৃঙ্খলে ছড়িয়ে পড়ছে আর্সেনিক? ভূ-জল বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় চাষের কাজে অগভীর নলকূপের জল ব্যবহৃত হয়। তার ফলেই দূষিত জল ছড়িয়ে পড়ছে মাটির উপরের স্তরে। সেখান থেকেই খাদ্যশৃঙ্খলে আর্সেনিক ঢুকে পড়ছে। তাঁর কথায়, “খড়ের মধ্যে সম্প্রতি এ ধরনের আর্সেনিকের প্রমাণ মিলেছে।” পরিবেশবিদেরা বলছেন, আর্সেনিক দূষিত খাদ্য সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে মানুষের শরীরে ঢুকলে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
খাদ্যশৃঙ্খলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার ভূগর্ভস্থ জল চাষের কাজে তো ব্যবহার করা হচ্ছেই, নানা ধরনের নরম পানীয় তৈরিতেও সেই জল মিশছে। কচুর মতো সব্জিতে বেশি পরিমাণে আর্সেনিক মেশার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। খাদ্যশৃঙ্খলে আর্সেনিক দূষণের বিষয়টি যে গুরুতর তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথও। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সমীক্ষা করে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।” বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাধারণত নব্য গঠিত মাটির অগভীর স্তরে আর্সেনিক থাকার আশঙ্কা বেশি। এ রাজ্যে মালদহ থেকে শুরু করে গঙ্গার পূর্ব দিকের জেলাগুলি বেশি আর্সেনিক- প্রবণ বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রমেন্টাল স্টাডিজ-এর একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এর প্রভাব বেশি। আর্সেনিক প্রভাবের বাইরে নেই কলকাতার দক্ষিণ অংশ-ও। এই মত মেনে নেন কুমারজ্যোতিবাবুও। তিনি বলেন, “দুই ২৪ পরগনা আর্সেনিক প্রভাবিত বলে চিহ্নিত। সে ক্ষেত্রে কলকাতায় আর্সেনিক দূষণের আশঙ্কা নেই, এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।”
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা শহরে নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতায় যদি আর্সেনিক দূষণের আশঙ্কা থাকে, তা হলে নলকূপ বসানো হচ্ছে কী করে? শুক্রবার বিশ্ব জল দিবস নিয়ে কলকাতার একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে কুমারজ্যোতিবাবু বলেন, “কলকাতায় আর্সেনিক নিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার নলকূপের জলও পরীক্ষা করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, কোনও নলকূপের জলে বিপদমাত্রার উপরে আর্সেনিকের উপস্থিতি মিললে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্যের জেলাগুলিতে আর্সেনিক দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান জানান, রাজ্যের বিভিন্ন আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় ১২টি বড় জল পরিশোধনের কেন্দ্র রয়েছে। যদিও সেটা যথেষ্ট নয়। রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, আর্সেনিকপ্রবণ সব এলাকায় সমান অনুপাতে কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়নি। |